ঢাকা
সোমবার, ১৭ নভেম্বর ২০২৫, ২ অগ্রহায়ণ ১৪৩২
ই-পেপার

ন্যায় ব্যর্থ হলে সবচেয়ে শক্তিশালী রাষ্ট্রও ভেঙে পড়ে: প্রধান বিচারপতি

আপডেট : ২৫ অক্টোবর ২০২৫, ০৭:২৩ পিএম

বাংলাদেশের প্রধান বিচারপতি ড. সৈয়দ রেফাত আহমেদ বলেছেন, ‘আইন কেবল নিয়মের সমষ্টি নয়, এটি জাতির নৈতিক বিবেকের প্রতিফলন। ন্যায় প্রতিষ্ঠিত হলে রাষ্ট্র দৃঢ় হয়, আর ন্যায় ব্যর্থ হলে সবচেয়ে শক্তিশালী রাষ্ট্রও ভেঙে পড়ে।’

শনিবার (২৫ অক্টোবর) রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের ৭২তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে কাজী নজরুল ইসলাম মিলনায়তনে আয়োজিত অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ মন্তব্য করেন।

প্রধান বিচারপতি বলেন, মানবতা যখন অবিচার ও অমানবিক রাষ্ট্রীয় ক্ষমতার ভয়াবহ পরিণতি প্রত্যক্ষ করে, তখনই মানবাধিকারের সর্বজনীন ঘোষণা মানবজাতিকে নতুন নৈতিক চেতনার দিকে এগিয়ে নিয়ে যায়। ‘রাষ্ট্র যখন নাগরিকদের মর্যাদা রক্ষা করতে ব্যর্থ হয়, তাদের কণ্ঠরোধ করে, তখন ন্যায়ের জন্য লড়াই করা নৈতিকভাবে অপরিহার্য হয়ে পড়ে।

বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামের ইতিহাস তুলে ধরে তিনি বলেন, ‘১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলন ছিল ন্যায়ের জন্য সংগ্রাম, আর ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধ ছিল মর্যাদা, সমতা ও আত্মনিয়ন্ত্রণের অধিকারের লড়াই।’

বিচার বিভাগ সংস্কার প্রসঙ্গে ড. রেফাত আহমেদ বলেন, বিচার বিভাগের প্রকৃত স্বাধীনতা বাস্তবায়নে প্রশাসনিকভাবে স্বয়ংসম্পূর্ণ, নৈতিকভাবে সাহসী এবং সংবিধানিকভাবে শক্তিশালী প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলা জরুরি। তিনি জানান, দায়িত্ব গ্রহণের পর তিনি একটি ‘বিচার বিভাগ সংস্কার রোডম্যাপ’ ঘোষণা করেছেন, যার মূল লক্ষ্য স্বতন্ত্র সুপ্রিম কোর্ট সচিবালয় প্রতিষ্ঠা।

তিনি সতর্ক করে বলেন, ‘কোনো ধরনের অবিশ্বাস বা একতরফা আচরণ গত ১৫ মাসের নিরলস প্রচেষ্টায় গড়ে তোলা প্রাতিষ্ঠানিক স্বাধীনতার ভিত্তিকে দুর্বল করতে পারে। বিচার বিভাগীয় স্বায়ত্তশাসন টিকিয়ে রাখতে অংশীজনদের মধ্যে পারস্পরিক বিশ্বাস ও সমন্বয় প্রয়োজন।’

নবীন আইনজীবী ও শিক্ষার্থীদের উদ্দেশে প্রধান বিচারপতি বলেন, ‘আইনের অধ্যয়ন কেবল পেশাগত প্রশিক্ষণ নয়, এটি ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠার সাধনা। প্রত্যেক আইনের পেছনে আছে একটি জীবন, প্রত্যেক রায়ের পেছনে আছে একটি ভাগ্য।’

প্রযুক্তিনির্ভর বিচারব্যবস্থা গড়ে তোলার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, ‘একবিংশ শতাব্দীতে দাঁড়িয়ে আমরা এখনো ঔপনিবেশিক কাঠামোর উত্তরাধিকার বহন করছি। কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা, ডেটা-নির্ভর ব্যবস্থাপনা ও মানবিক দৃষ্টিভঙ্গির সমন্বয়ে বিচারব্যবস্থাকে সময়োপযোগী করতে হবে।’

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের অবদান স্মরণ করে প্রধান বিচারপতি বলেন, ‘এই বিশ্ববিদ্যালয় অসংখ্য প্রাজ্ঞ আইনবিদ তৈরি করেছে। আমি বিশ্বাস করি, এখান থেকে ভবিষ্যতেও এমন আইনজ্ঞ তৈরি হবে, যারা কেবল জ্ঞানে নয়, মানবিকতাতেও আলোকিত হবে।’

বক্তব্যের শেষাংশে তিনি বলেন, ‘ন্যায়বিচারের পুনর্জাগরণ এখন সময়ের আহ্বান। সংবিধানের স্বাধীনতা, সমতা ও ন্যায়ের অঙ্গীকার যেন দেশের প্রতিটি নাগরিকের দোরগোড়ায় পৌঁছে যায়, সেটিই আমাদের দায়িত্ব।’

অনুষ্ঠানের সভাপতিত্ব করেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. সালেহ্ হাসান নকীব। তিনি বলেন, ‘আইন বিভাগ সমাজ, রাষ্ট্র ও মানুষকে নিয়ে কাজ করে। মানুষের আচরণ অনিশ্চিত, তাই সেটিকে আইনের মাধ্যমে নিয়ন্ত্রণ করা হয়।

তিনি অ্যালামনাই অ্যাসোসিয়েশনকে আরও সক্রিয় হওয়ার আহ্বান জানিয়ে বলেন, ‘অ্যালামনাই অ্যাসোসিয়েশন হলো দেওয়ার জায়গা, নেওয়ার নয়। ক্ষুদ্র ব্যক্তিস্বার্থ দূর করে সবাইকে একসঙ্গে কাজ করতে হবে।’

এসময় অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের বিচারপতি জুবায়ের রহমান চৌধুরী, বিচারপতি এস. এ. এস. এইচ., শিক্ষাবিদ ও সাবেক শিক্ষার্থীবৃন্দ।

DR
আরও পড়ুন