২০২৫ সালে যুক্তরাষ্ট্রের আকাশে যেন দুর্ঘটনার ছায়া নেমে আসে। একের পর এক বিমান বিপর্যয়ে শত শত মানুষ প্রাণ হারান, অসংখ্য পরিবার ভেঙে পড়ে। প্রশ্ন ওঠে, বিশ্বের সবচেয়ে উন্নত দেশটিতে এত বেশি বিমান দুর্ঘটনা ঘটছে কেন? এবার, এই বছরের ভয়াবহ কিছু দুর্ঘটনা এবং তার পেছনের কারণগুলো জেনে নেওয়া যাক।
জানুয়ারিতে ভয়াবহ সংঘর্ষ: ২৯ জানুয়ারি রাতে ওয়াশিংটন ডিসির রোনাল্ড রিগ্যান বিমানবন্দরের কাছে আমেরিকান ঈগল এয়ার লাইন্সের একটি বিমান এবং সেনাবাহিনীর একটি ব্ল্যাক হক হেলিকপ্টার আকাশেই ধাক্কা লাগে। দুটো যানই পটোম্যাক নদীতে পড়ে যায়। বিমানের ৬৪ জন ও হেলিকপ্টারের ৩ জন—মোট ৬৭ জনই নিহত হন। ২০০১ সালের পর এটি ছিল আমেরিকার সবচাইতে ভয়াবহ বিমান দুর্ঘটনা।
এরপর একের পর এক দুর্ঘটনা:
ফেব্রুয়ারি ৬: আলাস্কায় একটি ছোট যাত্রীবাহী বিমান খারাপ আবহাওয়ায় দ্রুত উচ্চতা হারিয়ে বিধ্বস্ত হয়। ১০ জন মারা যান।

ফেব্রুয়ারি ১০: অ্যারিজোনায় একটি ব্যক্তিগত জেট অবতরণের সময় পথ ছেড়ে গিয়ে আরেকটি বিমানের সঙ্গে ধাক্কা লাগে। এক পাইলট নিহত হন।
জানুয়ারি: ফিলাডেলফিয়ায় একটি মেডিকেল প্লেন একটি বাড়ির ওপর পড়ে যায়। বিমানের ৬ জন এবং মাটিতে থাকা ১ জন—মোট ৭ জন মারা যান। মজার বিষয় হলো, বিমানটির ককপিটের ভয়েস রেকর্ডার অনেক বছর ধরেই নষ্ট ছিল!
এপ্রিল: নিউ ইয়র্কের হাডসন নদীতে একটি হেলিকপ্টার পড়ে যায়। স্পেনের একটি পরিবারসহ ৬ জন নিহত হন।
মার্চ: ল্যাঙ্কাস্টারের একটি রিটায়ারমেন্ট কমিউনিটির পার্কিং লটে আগুনের গোলা হয়ে পড়ে একটি সিঙ্গেল ইঞ্জিন প্লেন। সবাই বেঁচে গেলেও ৫ জন গুরুতর পুড়ে যান।
ন্যাশনাল ট্রান্সপোর্টেশন সেফটি বোর্ডের তথ্য অনুযায়ী, ২০২৫ সালের প্রথম চার মাসেই আমেরিকায় ২৫০টিরও বেশি বিমান দুর্ঘটনা বা সমস্যা রেকর্ড করা হয়েছে। এতে অন্তত ১৮৮ জনের বেশি মানুষ প্রাণ হারিয়েছেন। আগের বছরের তুলনায় দুর্ঘটনার সংখ্যা কিছুটা কমলেও, বড় এবং প্রাণঘাতী দুর্ঘটনার সংখ্যা বেড়েছে।

দুর্ঘটনা বাড়ার পেছনের কারণগুলো কী?
বিশেষজ্ঞরা কয়েকটি বড় সমস্যার কথা বলছেন:
১. এয়ার ট্রাফিক কন্ট্রোলার সংকট: দেশজুড়ে পর্যাপ্ত এয়ার ট্রাফিক কন্ট্রোলারের অভাব রয়েছে। এ কারণে আকাশে বিমানগুলোর মধ্যে নিরাপদ দূরত্ব বজায় রাখা কঠিন হয়ে পড়ছে।
২. পুরনো বিমান ও রক্ষণাবেক্ষণের ঘাটতি: অনেক বিমান ৩০-৪০ বছরেরও পুরনো। ফিলাডেলফিয়ার দুর্ঘটনার বিমানটির মতো অনেক যানেরই ঠিকমতো রক্ষণাবেক্ষণ করা হচ্ছে না।
৩. পাইলটের ভুল ও প্রশিক্ষণের অভাব: কিছু দুর্ঘটনায় পাইলটের ভুল বা পর্যাপ্ত প্রশিক্ষণের অভাব চোখে পড়েছে।
৪. খারাপ আবহাওয়া: আলাস্কার দুর্ঘটনায় বরফময় আবহাওয়া ছিল একটি বড় কারণ। তীব্র ঝড়, কুয়াশা, বজ্রপাতও দুর্ঘটনার ঝুঁকি বাড়ায়।
৫. প্রযুক্তিগত ত্রুটি: আধুনিক বিমান নেভিগেশন ও অটোপাইলট সিস্টেমে কোনো সমস্যা দেখা দিলে তা বড় বিপদ ডেকে আনতে পারে।
বিমান ভ্রমণ এখনও সবচেয়ে নিরাপদ যানবাহন হিসেবেই পরিগণিত হয়। পরিসংখ্যান বলে, সময়ের সঙ্গে সঙ্গে এর নিরাপত্তা বেড়েছে। তবে ২০২৫ সালের এই ঘটনাগুলো একটি বড় সতর্কবার্তা হিসেবে কাজ করেছে। এয়ার ট্রাফিক কন্ট্রোলার বাড়ানো, পুরনো বিমানের রক্ষণাবেক্ষণ কঠোর করা, পাইলটদের প্রশিক্ষণ উন্নত করা এবং প্রযুক্তিগত চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করা—এগুলোই এখন সবচেয়ে জরুরি প্রয়োজন।
