শেরপুরের নকলা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা শাহরিয়ার মোরসালিনের ওপর ছাত্রদল নেতার মারধরের ঘটনায় আতঙ্কিত সারাদেশের কৃষি কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। গত বুধবার কৃষি প্রণোদনা কর্মসূচির তালিকা নিয়ে উপজেলা কৃষি অফিসের নিজ কক্ষে উপজেলা কৃষি কর্মকর্তাকে মারধর করা হয়।
মারধরের ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে। এ ঘটনায় কৃষি খাত সংশ্লিষ্টদের মধ্যে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে।
এ ঘটনায় রাজধানীর খামারবাড়ির সামনে মানববন্ধন করেছেন কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। তারা বলছেন, কৃষি কর্মকর্তাকে মারধর ও সরকারি কাজে বাঁধা দেয়ার ঘটনার দিন সন্ধায় দুই ছাত্রদল নেতার বিরুদ্ধে নকলা থানায় মামলা হলেও তাদের এখনো গ্রেফতার করা হয়নি। দ্রুত সময়ের মধ্যে তাদের গ্রেফতার করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি প্রদানের দাবি জানানো হয়। এসময় তারা দেশের প্রতিটি কৃষি অফিসে নিরাপত্তা জোরদারের দাবি জানান।
মামলার এজাহার সূত্রে জানা গেছে, গত বুধবার দুপুরে নকলা উপজেলা কমপ্লেক্সের কৃষি অফিসে ঢোকেন উপজেলা ছাত্রদলের সদস্যসচিব রাহাত হাসান কাইয়ুম ও ছাত্রনেতা ফজলুল হকসহ কয়েকজন। তারা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা শাহরিয়ার মোরসালিনের কাছে কৃষি প্রণোদনা কর্মসূচির তালিকা জানতে চান এবং কোন ‘নেতাকে’ কত বরাদ্দ দেয়া হচ্ছে, সে সম্পর্কেও প্রশ্ন করেন।
তখন শাহরিয়ার মোরসালিন তাদের জানান, প্রণোদনা কর্মসূচিতে কৃষকদের নির্ধারিত তালিকা অনুযায়ী বরাদ্দ দেয়া হয়; রাজনৈতিক নেতাদের নামে কোনো বরাদ্দ দেয়ার নিয়ম নেই। এতে ক্ষুব্ধ হয়ে রাহাত ও তার সহযোগীরা গালাগাল করতে থাকেন এবং তাকে নকলা থেকে বের করে দেয়ার হুমকি দেন। একপর্যায়ে তারা কর্মকর্তা মোরসালিনকে মারধর ও ধাক্কাধাক্কি করেন। চিৎকার শুনে কার্যালয়ের কর্মচারীরা কক্ষে গিয়ে তাকে রক্ষা করেন। এরপর অভিযুক্ত ব্যক্তিরা সেখান থেকে পালিয়ে যান। পরে সহকর্মীরা আহত কৃষি কর্মকর্তাকে নকলা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যান।
নকলা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) হাবিবুর রহমান বলেছেন, দুজনকে আসামি করে সরকারি কাজে বাঁধা ও মারধরের অভিযোগে মামলা নেয়া হয়েছে। পুলিশ তদন্ত শুরু করেছে।
এদিকে, গতকাল বৃহস্পতিবার বিকেলে রাজধানীর খামারবাড়ির সামনে মানববন্ধন করেছেন সংক্ষুব্ধ কৃষি কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। এ কর্মসূচিতে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তা-কর্মকচারীরা উপস্থিত ছিলেন।
এসময় বাংলাদেশ সিভিল সার্ভিস (বিসিএস) কৃষি ক্যাডার অ্যাসোসিয়েশনের আহ্বায়ক ড. মো: সাহিনুল ইসলাম বলেন, নকলা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মোরসালীন অত্যন্ত দক্ষ ও মেধাবী কর্মকর্তা। তিনি প্রণোদনার কাজ সঠিকভাবে দায়িত্ব পালন করছিলেন। প্রণোদনার লিস্ট ডিসি এবং ইউএনও’র অনুমোদন হওয়ার পর যথাযথ প্রক্রিয়ায় তা বাস্তবায়ন চলমান। প্রণোদনার কিছু অংশ বিতরণের সময় দুষ্কৃতিকারী বিনা অনুমতিতে অফিসে প্রবেশ করে দায়িত্বরত অবস্থায় কর্মকর্তার উপর আক্রমণ করে। সরকারি দায়িত্ব পালনে তাকে বাঁধা প্রদান করে। আমরা ওই সন্ত্রাসীকে বিচারের আওতায় এনে তার দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করছি। অনতিবিলম্বে তার গ্রেফতার দাবি করছি।
সারাদেশে কৃষি কর্মকর্তাদের নিরাপত্তার বিষয়টি তুলে তিনি বলেন, সরকারি কৃষি প্রণোদনার মতো গুরুত্বপূর্ণ কাজ প্রতিটি জেলা-উপজেলায় করতে হয়। আমাদের কৃষি কর্মকর্তাদের নিরাপত্তা যাতে নিশ্চিত করা হয়, এই মানববন্ধনের মাধ্যমে সরকারের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি। কারণ এই প্রণোদনার কাজটা কৃষকদের জন্য অনেক গুরুত্বপূর্ণ। কৃষককে প্রণোদনা দেয়া এবং কৃষি পরামর্শ প্রদান করে কৃষির উন্নয়ন কর্মকাণ্ড এগিয়ে নেন স্থানীয় কৃষি অফিসাররা। এতে যদি বাঁধা দেয়া হয় তাহলে এই কার্যক্রম ব্যাহত হবে।
আজকে যেমন নকলা কৃষি অফিসে ঘটনাটি ঘটেছে, ভবিষ্যতে যাতে আর কোথাও এ ধরনের ঘটনা না ঘটে, মানববন্ধন থেকে সেই দাবিই করছি। দোষীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করছি।
স্যাটেলাইট চিত্রে ধরা পড়েছে সুদানের গণকবর