জুলাই-আগস্ট আন্দোলনে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালসহ তিনজনের বিরুদ্ধে রায়ের দিন নির্ধারণ করা হবে আজ বৃহস্পতিবার।
এই বিচারপ্রক্রিয়া বানচাল করতে ইতোমধ্যে দেশব্যাপী জ্বালাও-পোড়াও এবং আগুন সন্ত্রাস শুরু হয়েছে। কার্যক্রম নিষিদ্ধ আওয়ামী লীগের ‘ঢাকা লকডাউন’ কর্মসূচি ঘিরে রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে একের পর এক গাড়িতে অগ্নিসংযোগ ও ককটেল বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটছে। এতে সাধারণ মানুষ, শিক্ষার্থী, অভিভাবক ও পরিবহন-সংশ্লিষ্টদের মধ্যে ভীতি তৈরি হয়েছে। সহিংসতা ও নাশকতার শঙ্কায় অনেকে রয়েছেন উৎকণ্ঠায়।
ইনশৃঙ্খলা বাহিনীর দাবি, দেশের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনায় জোরদার করা হয়েছে নিরাপত্তা ব্যবস্থা। বিমানবন্দর, রেলস্টেশন, মেট্রোরেল স্টেশন, নৌ ও বাস টার্মিনালসহ সব ধরনের গণপরিবহন কেন্দ্র এখন কড়া নজরদারিতে রয়েছে। বিশেষ করে ঢাকার শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর, কমলাপুর রেলস্টেশন ও উত্তরা থেকে মতিঝিল পর্যন্ত মেট্রোরেল রুটে বাড়ানো হয়েছে বিভিন্ন আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের উপস্থিতি। এছাড়াও দেশের বিভিন্ন জেলা ও উপজেলা শহরেও রয়েছে কড়া নিরাপত্তার ব্যবস্থা।

তবে দেশের বিভিন্ন রাজনৈতিক দল নাশকতার সব ধরনের অপচেষ্টা প্রতিহতের ঘোষণা দিয়ে মাঠে থাকবে বলে জানিয়েছে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীও রাজধানীসহ সারাদেশে কঠোর অবস্থানে থাকবে বলেও জানিয়েছেন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লে.জে. (অব.) জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী।
এদিকে বৃহস্পতিবার (১৩ নভেম্বর) আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল এলাকার নিরাপত্তা জোরদারে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পাশাপাশি সেনা মোতায়েন করা হয়েছে।
জানা যায়, চব্বিশের গণঅভ্যুত্থানের সময় সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধ মামলায় মোট পাঁচটি অভিযোগ আনে প্রসিকিউশন। গত ১২ মে প্রতিবেদন জমা দেয় ট্রাইব্যুনালের তদন্ত সংস্থা। আনুষ্ঠানিক অভিযোগ মোট ৮ হাজার ৭৪৭ পৃষ্ঠার। এর মধ্যে তথ্যসূত্র ২ হাজার ১৮ পৃষ্ঠার, জব্দতালিকা ও দালিলিক প্রমাণাদি ৪ হাজার পাঁচ পৃষ্ঠার এবং শহীদদের তালিকার বিবরণ ২ হাজার ৭২৪ পৃষ্ঠার রয়েছে।
মানবতাবিরোধী অপরাধের এই মামলায় শেখ হাসিনা, সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল ও সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের বিরুদ্ধে গত ১০ জুলাই অভিযোগ গঠন করে বিচার শুরুর আদেশ দেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১। এক পর্যায়ে এই মামলায় দোষ স্বীকার করে ঘটনার সত্যতা উদ্ঘাটনে (অ্যাপ্রুভার) রাজসাক্ষী হতে সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের করা আবেদন মঞ্জুর করেন ট্রাইব্যুনাল। পরবর্তীতে এই মামলার রাজসাক্ষী হয়ে সাক্ষ্য দেন তিনি।

গত ২৩ অক্টোবর মামলায় অ্যাটর্নি জেনারেল মো. আসাদুজ্জামান সমাপনী বক্তব্য দেন। তিনি শেখ হাসিনা ও আসাদুজ্জামান খানের সর্বোচ্চ শাস্তি প্রার্থনা করেন। পরে আসামিপক্ষের আইনজীবীর বক্তব্যের জবাব দেন চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম। তিনিও শেখ হাসিনা ও আসাদুজ্জামান খানের সর্বোচ্চ শাস্তি চান।
অ্যাটর্নি জেনারেল ও চিফ প্রসিকিউটরের বক্তব্যের জবাব দেন রাষ্ট্রনিযুক্ত আইনজীবী মো. আমির হোসেন। তিনি শেখ হাসিনা ও আসাদুজ্জামান খানের খালাস প্রার্থনা করেন। পরে ট্রাইব্যুনাল মামলার রায় কবে দেওয়া হবে, তা আগামী ১৩ নভেম্বর জানানো হবে বলে জানান।
এ রায়কে ঘিরে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল এলাকায় বাড়তি নিরাপত্তার ব্যবস্থা নিয়েছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েনের পাশাপাশি সেনাবাহিনী, বিজিবি ও গোয়েন্দা সংস্থার সদস্যরাও নজরদারি বাড়িয়েছেন। যেকোনো অপ্রীতিকর পরিস্থিতি মোকাবিলায় সজাগ রয়েছে এসব বাহিনী।
