রাজনীতিতে নানা কারণে আলোচিত-সমালোচিত একসময়ের প্রভাবশালী আমলা, বিএনপির সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান, বীর মুক্তিযোদ্ধা শমসের মোবিন চৌধুরী বীর বিক্রম ঘোষণা দিয়ে রাজনীতি থেকে অবসর নিলেন।
নিজের দল তৃণমূল বিএনপির মহাসচিব তৈমুর আলম খন্দকারের কাছে চিঠি দিয়ে রোববার (১৬ নভেম্বর) দুপুরে তিনি রাজনীতি ছাড়ার ঘোষণা দেন। তিনি ওই দলের চেয়ারম্যান ছিলেন।
দলের মহাসচিব অ্যাডভোকেট তৈমূর আলম খন্দকারের কাছে পাঠানো এক চিঠিতে তিনি এ সিদ্ধান্তের কথা জানান। শমসের মবিন চৌধুরী বর্তমানে ‘তৃণমূল বিএনপি’র চেয়ারপারসন পদে রয়েছেন।
চিঠিতে শমসের মবিন লিখেছেন, ‘এই মর্মে আপনাকে এবং আপনার মাধ্যমে সবাইকে অবগত করছি যে, শারীরিক কারণে আমি শমসের এম চৌধুরী রাজনীতি থেকে অবসর গ্রহণ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। একই সঙ্গে তৃণমূল বিএনপির সব পদ থেকে আমি পদত্যাগ করিলাম। আমার এই সিদ্ধান্ত অবিলম্বে ১৬ নভেম্বর ২০২৫ থেকে কার্যকর হইল।’
বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের আমলে শমসের মবিন পররাষ্ট্র সচিবের দায়িত্ব পালন করেন। ওই একই সরকারের আমলে তাকে ওয়াশিংটনে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূতও নিয়োগ করা হয়। চাকরি থেকে অবসরে গিয়ে বিএনপিতে যোগ দেয়ার পর তিনি দ্রুত দলে এক গুরুত্বপূর্ণ নেতায় পরিণত হন।
শমসের মবিন চৌধুরী বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান ছিলেন। ২০১৫ সালে তিনি বিএনপির সব পদ থেকে পদত্যাগ করেন। এরপর ২০১৮ সালে সাবেক রাষ্ট্রপতি এ কিউ এম বদরুদ্দোজা চৌধুরীর নেতৃত্বাধীন বিকল্পধারা বাংলাদেশে যোগ দেন। সবশেষ গত ৭ জানুয়ারি জাতীয় নির্বাচনের আগে ২০২৩ সালের সেপ্টেম্বরে তৃণমূল বিএনপির চেয়ারপারসন হন তিনি।
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নিজের পৈতৃক ভূমি সিলেট-৬ আসনে তৃণমূল বিএনপি থেকে লড়েন শমসের মবিন। পরাজিত হয়ে জামানত হারান তিনি।
২০২৪ সালের ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর একই বছরের ১৭ অক্টোবর হত্যা মামলায় গ্রেফতার হন শমসের মবিন। চলতি বছরের ২৫ মার্চ জামিনে মুক্তি পান তিনি।
১৯৭১ সালে শমসের মবিন চৌধুরী পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর অষ্টম ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টে কর্মরত ছিলেন। মুক্তিযুদ্ধ শুরু হওয়ার পর প্রতিরোধযুদ্ধকালে চট্টগ্রামের কালুরঘাটের যুদ্ধে তিনি আহত হন। পাকিস্তানি সেনাবাহিনী তাকে বন্দী করে। বিগত বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের সময়ে শমসের মবিন পররাষ্ট্রসচিবের দায়িত্ব পালন করেন। ২০০৫ সালে যুক্তরাষ্ট্রে তিনি বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত হিসেবে নিয়োগ পেয়েছিলেন। দুই বছর সেই দায়িত্ব পালন শেষে ২০০৭ সালে তিনি অবসরে যান। ২০০৮ সালে তিনি বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলে যোগ দেন এবং ২০০৯ সালে দলের ভাইস চেয়ারম্যান হন। ২০১৫ সালের ২৮ অক্টোবর বিএনপির রাজনীতি থেকে সরে দাঁড়ান। পরবর্তিতে ২০১৮ সালের অক্টোবরে বিকল্পধারা বাংলাদেশে যোগ দিয়ে আবার রাজনীতিতে সক্রিয় হন।
পরবর্তীতে নিজে তৃণমূল বিএনপি নামক রাজনৈতিক দল গঠন করেন এবং অবসরে যাওয়ার আগ পর্যন্ত তিনি এই দলের চেয়ারম্যান ছিলেন।
শমসের মবিন চৌধুরী ১৯৫০ সালে চট্টগ্রামে জন্ম গ্রহন করেন। তার পৈতৃক নিবাস সিলেটের গোলাপগঞ্জ উপজেলায়।
বাংলাদেশের প্রশাসন ও রাজনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ও প্রভাবশালী হিসেবে আলোচিত কয়েকজন বিশিষ্ট ব্যক্তি পারিবারিক ও নিকটাত্মীয়তার কারণে তাঁর ঘনিষ্ঠ। এরা হলেন সাবেক সেনা প্রধান লে: জেনারেল (অবসরপ্রাপ্ত) হাসান মাশহুদ চৌধুরী, সাবেক পররাষ্ট্র সচিব মরহুম ফারুক চৌধুরী, সাবেক পররাষ্ট্র সচিব ও প্রাইভেটাইজেশন কমিশনের চেয়ারম্যান মরহুম ইনাম আহমেদ চৌধুরী, ওয়ান ইলিভিনের অন্যতম কুশিলব সাবেক পররাষ্ট্র সচিব ইফতেখার আহমদ চৌধুরী, ওয়ান ইলিভেনের সরকার প্রধান ফখর উদ্দিনসহ আরও কয়েকজন বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গ।
শমসের মোবিন চৌধুরীর সাথে তাদের খালাতো ও মামাতো ভাইয়ের সম্পর্ক বলে জানা গেছে।
মানবতাবিরোধী অপরাধ: হাসিনার মামলার রায় আজ