পটুয়াখালীর রাঙ্গাবালীতে নিজ বসতঘর থেকে উদ্ধার হলো এক স্বামী-স্ত্রীর রহস্যজনক লাশ। পুলিশ ও পরিবারের প্রাথমিক ধারণা, গলায় ফাঁস দিয়ে তারা আত্মহত্যা করেছেন। কিন্তু ঠিক কী কারণে সাত বছরের শিশুপুত্রকে রেখে এই দম্পতি একসঙ্গে চরম পথ বেছে নিলেন, সেই প্রশ্নের উত্তর এখনো মেলেনি।
উপজেলার চালিতাবুনিয়া ইউনিয়নের উত্তর চালিতাবুনিয়া গ্রামে মঙ্গলবার (১৮ নভেম্বর) সকালে এই মর্মান্তিক ঘটনাটি ঘটে। বসতঘর থেকে রাকিব প্যাদা (৩০) ও তার স্ত্রী সোহাগী বেগমের (২৫) লাশ উদ্ধার করে রাঙ্গাবালী থানা পুলিশ।
লাশ উদ্ধারের সময় নিহত দম্পতির ঘর থেকে একটি ডায়েরি জব্দ করা হয়। সেই ডায়েরির দুটি পাতায় পাওয়া গেছে স্বামী-স্ত্রীর স্বাক্ষরিত একটি চিরকুট, যা ঘিরে তৈরি হয়েছে গভীর রহস্য।
চিরকুটের মূল বাক্যটি ছিল:‘মানসম্মান সব গেছে। বাঁচ্ছা (বেঁচে) থাইকা কি হবে?’
এই কয়েকটি লাইন যেন ঘটনাটির দিকে নতুন করে প্রশ্ন ছুঁড়ে দিচ্ছে। এর সঙ্গে আরও লেখা ছিল: ‘সোহাগীসহ ইচ্ছা মৃত্যু বরণ করবো। আমাদের লাশ যেন পোস্টমর্টেম (ময়নাতদন্ত) না করে। আমাদের কবর যেন ঘরের পশ্চিম পাশে দুইজনের লাশ একসাথে হয়।’
‘আমি নিরপরাধী। নিজের জীবন নিজে দিছি।’
‘আমার পোলার (ছেলের) দিকে খেয়াল রাখবেন সবাই। আমার পোলা মা-বাবা ছাড়া এতিম।’
‘আমাদের দু’জনকে সবাই মাফ করে দিয়েন। ১২ বছর বিয়ে হয়েছে। এরকম খারাপ এখন কেন।’
স্থানীয়দের দাবি, চিরকুটের প্রতিটি লাইনই এখন একটি বড় প্রশ্ন। কী এমন সম্মানহানির ঘটনা ঘটেছিল, বা কী এমন কঠিন সংকট তৈরি হয়েছিল যে ১২ বছরের দাম্পত্য জীবনের শেষে, একটি শিশু সন্তানকে একা রেখে দু'জনকেই একসঙ্গে মৃত্যুর পথ বেছে নিতে হলো?
প্রতিবেশী এক আত্মীয়ের মাধ্যমে জানা যায়, সোমবার রাত সাড়ে ১০টার দিকে এই ঘটনাটি ঘটে। তিনিই প্রথম ঘরে ঢুকে রাকিব ও সোহাগীকে ঝুলন্ত অবস্থায় দেখতে পান এবং তার চিৎকারে স্বজনরা এসে দ্রুত লাশ নামিয়ে ফেলেন।
গ্রাম পুলিশ দফাদার মোশাররফ হোসেন জানান, দুজনের গলাতেই ফাঁসের দাগ ছিল, তবে লাশ নামানোর পর তারা ঘটনাস্থলে পৌঁছান। তিনি স্থানীয়দের কাছ থেকে জেনেছেন, ১০-১২ দিন আগেও স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে ঝামেলা হয়েছিল।
রাঙ্গাবালী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শামীম হাওলাদার জানিয়েছেন, ‘চিরকুটসহ সব গুরুত্বপূর্ণ আলামত জব্দ করা হয়েছে। লাশ উদ্ধার করে সুরতহাল শেষে ময়নাতদন্তের জন্য পটুয়াখালী মর্গে পাঠানো হয়েছে।’
তিনি বলেন, ‘রিপোর্ট পেলে মৃত্যুর প্রকৃত কারণ জানা যাবে। চিরকুটে উল্লেখিত ‘মানসম্মান সব গেছে’ বাক্যটি এবং দাম্পত্য কলহের বিষয়টি গুরুত্ব দিয়ে তদন্ত চলছে। এ ঘটনায় একটি অপমৃত্যু মামলা হবে।’
এদিকে এলাকাবাসীর দাবি, দ্রুত তদন্তের মাধ্যমে চিরকুটের আড়ালের মূল রহস্য উন্মোচিত হোক।
‘পোস্টাল ভোট বিডি’ অ্যাপ চালু, অঞ্চলভিত্তিক নিবন্ধন শুরু আজ