ঢাকা
সোমবার, ২৪ নভেম্বর ২০২৫, ৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩২
ই-পেপার

প্লট দুর্নীতি মামলা

শেখ হাসিনাসহ ১২ জনের বিরুদ্ধে রায় ২৭ নভেম্বর

আপডেট : ২৩ নভেম্বর ২০২৫, ০৬:১৯ পিএম

ক্ষমতার অপব্যবহার করে পূর্বাচল প্লট বরাদ্দ নেওয়ার অভিযোগে শেখ হাসিনাসহ ১২ জনের বিরুদ্ধে দায়ের করা দুর্নীতি মামলার রায়ের দিন আগামী ২৭ নভেম্বর ধার্য করেছেন আদালত।

রোববার (২৩ নভেম্বর) ঢাকার বিশেষ জজ আদালত-৫ এর বিচারক মোহাম্মদ আব্দুল্লাহ আল মামুন এ তারিখ ঘোষণা করেন।

এদিন দুদকের পক্ষে প্রসিকিউটর খান মো. মাইনুল হাসান (লিপন) যুক্তিতর্ক উপস্থাপন করেন। তিনি শেখ হাসিনাসহ অপর আসামিদের সর্বোচ্চ সাজা যাবজ্জীবন প্রত্যাশা করেন।

মামলায় গ্রেপ্তার হয়ে কারাগারে থাকা একমাত্র আসামি রাজউকের সাবেক সদস্য (এস্টেট ও ভূমি) মোহাম্মদ খুরশীদ আলমের পক্ষে অ্যাডভোকেট শাহীনুর রহমান যুক্তিতর্ক তুলে ধরেন। অভিযোগ প্রমাণিত হয়নি মর্মে তার খালাসের প্রার্থনা করেন।

প্রসিকিউটর খান মো. মাইনুল হাসান (লিপন) জানান, আমরা আসামিদের সর্বোচ্চ সাজা যাবজ্জীবন কারাদণ্ড প্রত্যাশা করেছি। আশা করছি, আদালত থেকে সর্বোচ্চ সাজাটাই আসবে। এদিন শুনানির সময় খুরশীদ আলমকে কারাগার থেকে আদালতে হাজির করা হয়।

আদালত সূত্রে জানা যায়, প্লট বরাদ্দের দুর্নীতির অভিযোগে গত জানুয়ারিতে পৃথক ৬ মামলা করে দুদক। মামলায় সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয়, মেয়ে সায়মা ওয়াজেদ (পুতুল), বোন শেখ রেহানা, রেহানার মেয়ে ও ব্রিটিশ এমপি টিউলিপ রিজওয়ানা সিদ্দিক, ছেলে রাদওয়ান মুজিব সিদ্দিক ও অপর মেয়ে আজমিনা সিদ্দিকসহ আরও অনেককে আসামি করা হয়।

শেখ পরিবার ছাড়া অন্য আসামিরা হলেন, জাতীয় গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. শহীদ উল্লা খন্দকার, অতিরিক্ত সচিব (প্রশাসন) কাজী ওয়াছি উদ্দিন, প্রশাসনিক কর্মকর্তা মো. সাইফুল ইসলাম সরকার, সিনিয়র সহকারী সচিব পূরবী গোলদার, রাজউকের সাবেক চেয়ারম্যান মো. আনিছুর রহমান মিঞা, সাবেক সদস্য (এস্টেট ও ভূমি) মোহাম্মদ খুরশীদ আলম, সদস্য (প্রশাসন ও অর্থ) কবির আল আসাদ, সদস্য (উন্নয়ন নিয়ন্ত্রণ) তন্ময় দাস, সদস্য (এস্টেট ও ভূমি) মো. নুরুল ইসলাম, সাবেক সদস্য (পরিকল্পনা) মোহাম্মদ নাসির উদ্দীন, সাবেক সজর (ইঞ্জিনিয়ার) সামসুদ্দীন আহমদ চৌধুরী (অব.), পরিচালক (এস্টেট ও ভূমি-২) শেখ শাহিনুল ইসলাম, উপপরিচালক মো. হাফিজুর রহমান, হাবিবুর রহমান, সাবেক প্রতিমন্ত্রী শরীফ আহমেদ ও প্রধানমন্ত্রীর সাবেক একান্ত সচিব সালাউদ্দিন।

এর আগে রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (রাজউক) পূর্বাচল নতুন শহর প্রকল্পে সরকারি প্লট বরাদ্দে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং তার পরিবারের সদস্যসহ ২৩ জন ব্যক্তির বিরুদ্ধে অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ ওঠে। গত বছরের ডিসেম্বর থেকে এসব অভিযোগের তদন্ত শুরু করে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।

দুদকের অভিযোগ, পূর্বাচল প্রকল্পে প্লট বরাদ্দ নিয়ে ক্ষমতার অপব্যবহার করেছেন সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও তার পরিবারের সদস্যরা। তারা যেসব প্লট নিয়েছেন, সেখানে সাধারণ মানুষের প্রবেশাধিকার ছিল না। দুর্নীতি ও মিথ্যা হলফনামা দিয়েই এসব প্লট নিয়েছেন তারা।

মামলাগুলোর নথিপত্র অনুযায়ী, ঘটনার শুরু হয়েছিল গত বছরের ২৬ ডিসেম্বর, যখন দুদক এই প্লট বরাদ্দের অনিয়ম তদন্ত শুরু করে। তদন্তে সংস্থাটি জানতে পারে, পূর্বাচল নতুন শহরের ২৭ নম্বর সেক্টরের কূটনৈতিক জোনের আশপাশে শেখ হাসিনা, তার ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয় ও মেয়ে সায়মা ওয়াজেদ পুতুল এবং বোন শেখ রেহানা, রেহানার ছেলে রাদওয়ান মুজিব সিদ্দিক ববি ও মেয়ে আজমিনা সিদ্দিকের নামে প্লট বরাদ্দ দেয়া হয়েছে।

এর মধ্যে শেখ হাসিনার নামে ১০ কাঠার প্লট (প্লট নম্বর ৯) রয়েছে, যা রাজউক তাকে ২০২২ সালের ৩ আগস্ট বরাদ্দপত্র দেয়। সজীব ওয়াজেদ জয়ের (প্লট নম্বর ১৫) বরাদ্দপত্র ২০২২ সালের ২৪ অক্টোবর হয় এবং ১০ নভেম্বর মালিকানা-সংক্রান্ত রেজিস্ট্রি সম্পন্ন হয়। সায়মা ওয়াজেদ পুতুলের বরাদ্দপত্র দেয়া হয় ২০২২ সালের ২ নভেম্বর। শেখ রেহানার নামে ১০ কাঠার প্লট (প্লট নম্বর ১৩) বরাদ্দ আছে। রাদওয়ান মুজিব সিদ্দিকের প্লট নম্বর ১১ এবং আজমিনা সিদ্দিকের প্লট নম্বর ১৯। প্রাথমিক অনুসন্ধানে অভিযোগের সত্যতা পাওয়া গেলে চলতি বছরের জানুয়ারিতে দুদক তাদের বিরুদ্ধে পৃথক ছয়টি মামলা করে।

এদিকে চলতি বছরের ১০ মার্চ ছয় মামলায় ২৩ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র প্রস্তুত করে দুদক। পরে ৩১ জুলাই থেকে ঢাকার চতুর্থ ও পঞ্চম বিশেষ জজ আদালতে আসামিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠনের মাধ্যমে বিচার কার্যক্রম শুরু হয়।

LH/FJ
আরও পড়ুন