রেজিমেন্টের মন্দিরে প্রবেশ করে পূজা করতে অস্বীকৃতি জানানোর কারণে বরখাস্ত হলেন ভারতের খ্রিস্টান ধর্মাবলম্বী একজন সেনা কর্মকর্তা। মঙ্গলবার (২৫ নভেম্বর) ভারতের সুপ্রিম কোর্ট তার বিরুদ্ধে বিতর্কিত এই রায় দিয়েছে।
ওই সেনা কর্মকর্তার নাম স্যামুয়েল কামালেসান। আদালত তার বহিষ্কার বহাল রেখে জানায়, একজন সেনা অফিসার ইউনিফর্ম পরে নিজের ধর্মের ‘ব্যক্তিগত ব্যাখ্যা’ দিতে পারেন না।
ভারতীয় সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি সুর্যকান্ত বলেন, ‘আপনি আপনার সৈন্যদের অপমান করেছেন, আপনি নিজের ধর্মকে ইউনিফর্মের উপরে রেখেছেন।’ প্রধান বিচারপতির এই কথার মানে হলো- ভারতে ধর্মীয় স্বাধীনতা নয়; রাষ্ট্রীয় শৃঙ্খলাই প্রধান।
অথচ দেশটির সংবিধানের ২৫ অনুচ্ছেদ নাগরিককে নিজ ধর্ম পালনের অধিকার দেয়। এরপরও সুপ্রিম কোর্টের এমন রায়ে বিস্মিত আন্তর্জাতিক বিশ্লেষকরা। তাদের প্রশ্ন- ধর্মনিরপেক্ষতার দাবি করা ভারতীয় সেনাবাহিনী যদি অফিসারদের মন্দিরে পূজায় বাধ্য করে, তাহলে সেটি কতটা ধর্মনিরপেক্ষ?
বিশ্লেষকরা বলছেন, এই ব্যাখ্যা আসলে রাষ্ট্রীয় হিন্দুত্ববাদের আরেক প্রকাশ, যেখানে সংখ্যালঘু ধর্মবিশ্বাসকে অপ্রয়োজনীয় মনে করা হচ্ছে।
তারা মনে করেন- ভারত সরকারের যুক্তি ছিল- ‘সৈন্যরা দেবতার উপাসনা থেকেই অনুপ্রেরণা পায়’, কিন্তু দেশটির সরকারের এই যুক্তি সামরিক পেশাদারিত্বকে ধর্মীয় আবেগে পরিণত করে। এতে সেনাবাহিনী নয়; বরং তৈরি হয় এক ধর্মীয় বাহিনী।
বিশ্লেষকরা বলেন, স্যামুয়েল কামালেসান ধর্মের নামে বিভাজন নয়; বরং মানবিক ঐক্যে বিশ্বাস করতেন। তার এই অবস্থানকে ‘অশৃঙ্খলা’ বলা আসলে ভারতের ধর্মনিরপেক্ষতার মুখোশ উন্মোচন করেছে। আজকের ভারত তাই আর সংবিধানের ভারত নয়; এটি এমন এক রাষ্ট্র, যেখানে হিন্দুত্ববাদই ‘দেশপ্রেম’, আর ধর্মীয় স্বাধীনতা এখন ‘অপরাধ’। স্যামুয়েল কামালেসানের ঘটনা সেই উগ্র বাস্তবতার নির্মম প্রতিচ্ছবি, যেখানে বিশ্বাস নয়, বশ্যতাই কর্তব্য।
ভারতের সেভেন সিস্টার্সের অরুণাচলকে নিজেদের দাবি করলো চীন