শীতকাল মানেই লেপ-কম্বলের উষ্ণতা, গরম কফি আর উৎসবের মেজাজ। কিন্তু আরামদায়ক এই পরিবেশের আড়ালে লুকিয়ে রয়েছে এক নীরব ঘাতক ব্রেন স্ট্রোক। প্রতি বছর শীতের সময় এই রোগে আক্রান্তের সংখ্যা বাড়ে। প্রশ্ন হল, ঠান্ডা আবহাওয়া কেন স্ট্রোকের ঝুঁকি বাড়িয়ে দেয়?
ঠান্ডার সঙ্গে স্ট্রোকের সরাসরি সম্পর্ক রয়েছে। যখন তাপমাত্রা কমে যায়, তখন আমাদের শরীর স্বাভাবিকভাবেই নিজের ভেতরের তাপমাত্রা ধরে রাখতে চায়। এর জন্য শরীরের রক্তনালীগুলো সঙ্কুচিত হতে শুরু করে। এর ফলে দুটো প্রধান সমস্যা তৈরি হয়।
- রক্তনালী সরু হয়ে যাওয়ায় রক্তপ্রবাহের উপর চাপ বাড়ে। ফলে রক্তচাপ দ্রুত বেড়ে যায়। উচ্চ রক্তচাপই স্ট্রোকের প্রধান কারণ।
- শীতে রক্ত কিছুটা ঘন হয়ে যায় । ফলে রক্ত জমাট বাঁধার প্রবণতা বাড়ে। এই জমাট বাঁধা রক্ত মস্তিষ্কে রক্তপ্রবাহ বন্ধ করে দিলে ইস্কেমিক স্ট্রোক হয়।
ব্রেন স্ট্রোকের মূল কারণ কী?
স্ট্রোক মূলত দু’প্রকার- ইস্কেমিক (রক্তনালী ব্লক হয়ে যাওয়া) এবং হেমোরেজিক (রক্তনালী ফেটে যাওয়া)। দুটি ক্ষেত্রেই মূল কারণগুলো এক।
- উচ্চ রক্তচাপ : এটিই এক নম্বর শত্রু। রক্তচাপ অনিয়ন্ত্রিত থাকলে স্ট্রোকের ঝুঁকি বহুগুণ বাড়ে।
- ডায়াবেটিস : রক্তে শর্করার পরিমাণ বেশি থাকলে রক্তনালী ক্ষতিগ্রস্ত হয়।
- উচ্চ কোলেস্টেরল : রক্তনালীর দেওয়ালে চর্বি জমে ব্লক তৈরি করে।
- ধূমপান : রক্তনালীকে মারাত্মকভাবে ক্ষতি করে এবং রক্তকে ঘন করে তোলে।
- অনিয়মিত হৃদস্পন্দন : হৃৎপিণ্ডে জমাট বাঁধা রক্ত মস্তিষ্কে চলে যেতে পারে।
- অতিরিক্ত ওজন ও ব্যায়ামের অভাব।
কীভাবে আগেভাগে সতর্ক হবেন?
স্ট্রোক সাধারণত আচমকা আসে। দ্রুত বিপদ চিহ্নিত করতে না পারলে ঘটতে পারে বড়সড় বিপদ! এক্ষেত্রে বিশ্বজুড়ে ব্যবহৃত সহজ পদ্ধতিটি হল ‘FAST’ অনুশীলন।
F (ফেইস ড্রুপিং) : হাসার চেষ্টা করুন। মুখের একদিক কি ঝুলে যাচ্ছে?
A (আর্ম উইকনেস): দু’হাত উপরে তোলার চেষ্টা করুন। একটি হাত কি নিচে নেমে যাচ্ছে?
S (স্পিচ ডিফিকাল্টি) : কথা জড়িয়ে যাচ্ছে, নাকি সহজ কথা বলতে অসুবিধা হচ্ছে?
T (টাইম টু কল): উপরের যে কোনও লক্ষণ দেখা দিলেই দেরি না করে চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।
শীতে নিজেকে সুস্থ রাখতে প্রতিদিন রক্তচাপ মাপুন। পর্যাপ্ত গরম জামা পরুন এবং সুষম খাবার খান। নিজেকে হাইড্রেটেড রাখুন। সামান্য অসতর্কতা যেন বড় বিপদ না ডেকে আনে।
