ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদের (ডাকসু) মুক্তিযুদ্ধ ও গণতান্ত্রিক আন্দোলনবিষয়ক সম্পাদক ফাতিমা তাসনিম জুমার মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস বিকৃতির মাধ্যমে গণতান্ত্রিক আন্দোলনের আকাঙ্ক্ষাকে ভূলুণ্ঠিত করেছেন বলে অভিযোগ করেছে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখা। বুধবার (৩ ডিসেম্বর) এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ অভিযোগ করেছে সংগঠনটি।
ছাত্রদলের বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদের (ডাকসু) বিগত প্রশ্নবিদ্ধ ও বিতর্কিত নির্বাচনে তথাকথিত প্রতিনিধি হয়ে যারা এসেছেন, তাদের বিভিন্ন দায়িত্বজ্ঞানহীন কর্মকাণ্ড ও বিতর্কিত মন্তব্য জাতির সামনে ডাকসু ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়কে চরম অপমানের সম্মুখীন করছে।
সম্প্রতি প্রশ্নবিদ্ধ ডাকসুর বিতর্কিত মুক্তিযুদ্ধ ও গণতান্ত্রিক আন্দোলনবিষয়ক সম্পাদক মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস বিষয়ে যে বিবৃতি তার সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রচার করছেন, তা বাংলাদেশের মহান মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসকে বিকৃত করার মাধ্যমে ২০২৪ সালের গণ-অভ্যুত্থানসহ সব গণতান্ত্রিক আন্দোলনের আকাঙ্ক্ষাকে ভূলুণ্ঠিত করেছে। বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এহেন ধৃষ্টতাপূর্ণ ইতিহাস বিকৃতিকে ঘৃণাভরে প্রত্যাখ্যান করছে।
‘মহান বিজয়ের মাসের শুরু আজ, আমাদের নতুন আত্মপরিচয় দেওয়া সকল শহিদের প্রতি শ্রদ্ধা—যাদের রক্তের মূল্যায়ন আমরা কোনোবারই করতে পারি না।’
বিজয়ের মাস ডিসেম্বরে বিশ্ববিদ্যালয়ে আলোকসজ্জার কোনো উদ্যোগ না নেওয়ায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনেরও সমালোচনা করেছে ছাত্রদল। তাদের সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, মহান মুক্তিযুদ্ধে বিজয়ের মাস ডিসেম্বরের শুরু থেকেই বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের পক্ষ থেকে কলাভবন, কার্জন হলসহ বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ ভবনকে আলোকসজ্জা ও সৌন্দর্যবর্ধনের মাধ্যমে উদ্যাপন করা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি বিশেষ ঐতিহ্য হলেও এবার তা একেবারেই করা হচ্ছে না। মুক্তিযুদ্ধের গৌরবোজ্জ্বল ইতিহাসকে উদ্যাপন করার ক্ষেত্রে প্রশাসনের এমন দৃষ্টিকটু ও দায়িত্বজ্ঞানহীন অনীহার প্রেক্ষিতে শিক্ষার্থীদের পক্ষ থেকে চরম বিরূপ প্রতিক্রিয়া দেখা গেছে। বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখা মুক্তিযুদ্ধের বিজয়ের মাস উদ্যাপনে প্রশাসনের এমন দায়িত্বজ্ঞানহীন অবহেলার বিষয়ে তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছে।
এর আগে, ডাকসুর মুক্তিযুদ্ধ ও গণতান্ত্রিক আন্দোলনবিষয়ক সম্পাদক ফাতিমা তাসনিম জুমা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে যা লিখেছেন, ‘ডিসেম্বর আমাদের বিজয় ও নিজস্ব আত্মপরিচয়ে পরিচিত হওয়ার গৌরবের মাস। ব্রিটিশ শোষণের বিরুদ্ধে টিপু সুলতান, তিতুমীর, রজব আলী হাবিলদার, মঙ্গল পান্ডে, লক্ষ্মীবাইসহ সহস্র শহিদ, যাদেরকে ফাঁসিতে ঝুলিয়ে হত্যা করেছিল ব্রিটিশ সরকার, তাদের ২০০ বছরের সংগ্রামের ফলেই আমরা পেয়েছিলাম ১৯৪৭–এর বহুল কাঙ্ক্ষিত বিজয়।
‘বিজয়ের সুখ উপভোগের আগেই দুর্ভাগা এই অঞ্চলে আবারও নেমে আসে শাসন নামে শোষণের অন্ধকার। সেখান থেকেই বাংলা ও বাঙালির রাষ্ট্র-আকাঙ্ক্ষার জন্ম। দীর্ঘ নয় মাসের রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের সূচনা হয়। সহস্র শহিদের রক্ত, সহস্র বোনের সম্মানের বিনিময়ে অর্জিত হলো বহুল কাঙ্ক্ষিত স্বাধীন সার্বভৌম ভূখণ্ড। আমাদের শহিদেরা আমাদের দিয়ে গেলেন একটুকরো লাল সবুজের পতাকা, নতুন নিজস্ব একান্ত ভূমি, দেশ, জাতীয়তা।
‘তথাপি, আমাদের রাষ্ট্র-আকাঙ্ক্ষা পূরণ হলো না। স্বৈরাচার, দুঃশাসন, দুর্নীতি, ফ্যাসিবাদ, হেজিমনি, গুম-খুন, বিচারিক ও বিচারবহির্ভূত হত্যার পীড়নে এইটুকু দেশ ও দেশের মানুষ বারবার ক্লান্ত, বিধ্বস্ত। ২০২৪ আমাদের সামনে আরেকবার সুযোগ এনে দিয়েছে রাষ্ট্র-আকাঙ্ক্ষা পূরণের। এ পথে সফল হওয়ার সময় কারা কারা ৭১-পরবর্তী সময়ের মতো গাদ্দারি করলো—একদিন ইতিহাসে তাদের নামও উচ্চারিত হবে; দ্বিগুণ ঘৃণায়।
সাভারে বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রী ধর্ষণের অভিযোগে গবির ৪ ছাত্র আটক