জামায়াতে ইসলামী রাষ্ট্র পরিচালনার দায়িত্ব পেলে শাসকের ভূমিকায় নয়, বরং জনগণের সেবক হিসেবে কাজ করবে বলে মন্তব্য করেছেন দলটির আমির ডা. শফিকুর রহমান।
বৃহস্পতিবার (২৫ সেপ্টেম্বর) রাজধানীর মগবাজারে জামায়াতের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে চীনের প্রতিনিধি দলের সঙ্গে এক বৈঠকে এসব কথা বলেন তিনি।
চাইনিজ পিপলস ইনস্টিটিউট অব ফরেন অ্যাফেয়ার্স (সিপিআইএফএ)-এর ভাইস প্রেসিডেন্ট রাষ্ট্রদূত ঝৌ পিংজিয়ানের নেতৃত্বে ছয় সদস্যের প্রতিনিধি দল ওই বৈঠকে অংশ নেয়। বৈঠক শেষে দলের সেক্রেটারি জেনারেল অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ার প্রেস ব্রিফিংয়ে সাংবাদিকদের এসব তথ্য জানান।
বৈঠকে জামায়াত নেতারা জানান, তারা কেবল কূটনৈতিক নয়, চীনের সঙ্গে ভ্রাতৃত্বপূর্ণ ও কৌশলগত সম্পর্ক গড়তে আগ্রহী। পরওয়ার বলেন, ‘আমরা চীনের উন্নয়ন দর্শন থেকে শিখতে চাই। বিনিয়োগবান্ধব পরিবেশ তৈরির মাধ্যমে দেশের অর্থনীতি চাঙা করতে চাই, যেখানে চীনের অংশগ্রহণ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।’
শফিকুর রহমান বলেন, সমতা ও ন্যায়ভিত্তিক সমাজ গঠনের লক্ষ্যেই আমরা কাজ করি। ধর্ম-বর্ণ-লিঙ্গ নির্বিশেষে সকলের অধিকার নিশ্চিত করাই জামায়াতের রাজনৈতিক নীতি। দেশের বিপুল জনসংখ্যাকে দক্ষ জনশক্তিতে রূপান্তর করে উন্নয়ন নিশ্চিত করতে চাই।
বৈঠকে অর্থনীতি, ব্যাংকিং, আঞ্চলিক স্থিতিশীলতা ও ভবিষ্যৎ কৌশলগত সহযোগিতা নিয়ে আলোচনা হয়। জামায়াত আমির বলেন, ‘বাংলাদেশ ও চীন উন্নয়ন সহযোগী। আমরা অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা বজায় রাখতে একসঙ্গে কাজ করতে চাই।’
চীনা প্রতিনিধি দল জানায়, তারা কেবল সরকার-টু-সরকার নয়, পার্টি-টু-পার্টি সম্পর্কের দিকেও সমান গুরুত্ব দেয়। জামায়াত ও চীনা কমিউনিস্ট পার্টির মধ্যে ভবিষ্যতে মতবিনিময় এবং কৌশলগত সংলাপের আশাবাদ ব্যক্ত করেন তারা।
চীনা প্রতিনিধিদের প্রশ্নে জামায়াত আমির তাদের দলের গণতন্ত্রপন্থী অবস্থান তুলে ধরেন। তিনি বলেন, জামায়াত সবসময় একটি নির্বাচনমুখী দল। আমরা অতীতের প্রতিটি গ্রহণযোগ্য নির্বাচনে অংশ নিয়েছি এবং সংসদে প্রতিনিধিত্ব করেছি। আগামী নির্বাচনের জন্যও আমাদের পূর্ণ প্রস্তুতি রয়েছে।
বিশ্বব্যাপী মানবাধিকার পরিস্থিতি নিয়েও আলোচনা হয় বৈঠকে। জামায়াত আমির বলেন, ফিলিস্তিন, গাজা, সিরিয়া, ইরাক, মায়ানমার, ইউক্রেন এমন অনেক জায়গায় মানবাধিকার লঙ্ঘন হচ্ছে। এসব বিষয়ে চীন নেতৃত্বমূলক ভূমিকা রাখতে পারে।
ব্রিফিংয়ে অধ্যাপক পরওয়ার দাবি করেন, পতিত ফ্যাসিস্ট সরকারের আমলে জামায়াতের বিরুদ্ধে রাজনৈতিকভাবে নির্যাতন চালানো হয়েছে। নেতাদের কারাগারে হত্যা করা হয়েছে, নিবন্ধন বাতিল ও দলীয় অফিস বন্ধ করে রাখা হয়েছিল।
তিনি আরও বলেন, আমিরে জামায়াত দীর্ঘ অসুস্থতা কাটিয়ে এই প্রথম বিদেশি প্রতিনিধিদের সামনে উপস্থিত হতে পেরে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেছেন।
প্রায় এক ঘণ্টাব্যাপী বৈঠক শেষে চীনা প্রতিনিধি দল জামায়াত নেতাদের আতিথেয়তার প্রশংসা করে। তারা জানান, চীনের আধুনিকীকরণ পরিকল্পনা ১৯৪৯ থেকে ২০৪৯ সাল পর্যন্ত ধাপে ধাপে এগিয়ে চলছে এবং প্রতি পাঁচ বছরে নতুন লক্ষ্য নির্ধারণ করে কাজ করা হচ্ছে।