রাজশাহীতে বাড়ছে শীতের তীব্রতা। শিশু ও বয়স্কদের ঠান্ডাজনিত রোগের প্রকোপ দেখা দিয়েছে। মৌসুমি এই রোগে আক্রান্তের সংখ্যা বাড়ায় হাসপাতাল ও ক্লিনিকগুলোতে বেড়েছে রোগীর চাপ।
রাজশাহী আবহাওয়া অফিস বলছে, বুধবার (৩১ ডিসেম্বর) রাজশাহীতে বেলা ১১টায় সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ৮ দশমিক ৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এটি চলতি মৌসুমের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা। এর আগে মঙ্গলবার (৩০ ডিসেম্বর) দিনের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল ১২ দশমিক ৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস। গত ২৪ ঘণ্টার ব্যবধানে রাজশাহীতে সর্বনিম্ন তাপমাত্রা কমেছে চার ডিগ্রি। এছাড়া গতকাল মঙ্গলবার সেদিন সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল ১৫ দশমিক ৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস।
রাজশাহী মেডিকেল কলেজ (রামেক) হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, গেল এক সপ্তাহে শুধু শিশু ওয়ার্ডেই ডায়রিয়া ও নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত হয়ে সবচেয়ে বেশি রোগী ভর্তি হয়েছে। এছাড়া শরীরে উষ্ণতা বাড়াতে গিয়ে আগুনে পুড়ে বা গরম পানি ব্যবহারের সময় অসতর্কতায় দগ্ধ হয়ে শিশু ও বৃদ্ধ রোগীও আসছেন হাসপাতালে। যদিও সেই সংখ্যা নেহাত কম নয়।
হাসপাতালের শিশু বিভাগের চিকিৎসকরা বলছেন- এই সময়ে হঠাৎ তাপমাত্রা কমে যাওয়ায় শিশুদের শ্বাসনালিতে সংক্রমণ হচ্ছে। এতে শ্বাসকষ্ট হচ্ছে। অনেকেই ঠান্ডা পানিতে ধোয়া কাপড় বা খাবার খাচ্ছেন, এতে ডায়রিয়া ও টাইফয়েড বাড়ছে। অভিভাবকদের এখন সবচেয়ে বেশি সতর্ক থাকা দরকার।
অপরদিকে, বড়দের মধ্যেও ঠান্ডাজনিত রোগের প্রকোপ বেড়েছে। প্রতিদিনই মেডিসিন ওয়ার্ডে নতুন রোগী ভর্তি হচ্ছে জ্বর, কাশি ও বুকে সংক্রমণের উপসর্গ নিয়ে। বয়স্ক অনেকেই গরম আগুন পোহাতে গিয়ে বা ফুটন্ত পানিতে হাত-পা পুড়িয়ে ফেলছেন।
রাজশাহী নগরের কাশিয়াডাঙ্গা এলাকার বাসিন্দা রওশন বেগম বলেন, সন্ধ্যায় আগুন পোহাতে গিয়ে আমার স্বামীর হাত পুড়ে গেছে। পরে তাকে হাসপাতালে নিয়ে আসা হয়। শীতে ঠান্ডা সহ্য করা যাচ্ছে না, আবার আগুনেও ভয়।
গত সোমবার শ্বাসকষ্ট নিয়ে তিন বছরের শিশু রাজিবকে ভর্তি করে তার মা। রাজিবের নাসরীন খাতুন বলেন, বাচ্চার খুবই শ্বাসকষ্ট হচ্ছিল। নাক বন্ধ হয়ে যাচ্ছিল। হাসপাতালে ভর্তির পরে নেবুলাইজারের মাধ্যমে চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে। শ্বাসকষ্ট কমেছে তবে সর্দি এখনো যায়নি।
এদিকে, রাজশাহী কোর্ট চত্বরে ফুটপাত, রেলওয়ে স্টেশনের ফুটপাত, সাহেব বাজারের ফুটপাতসহ বিভিন্ন ফুটপাতে বিক্রি এই হওয়া শীতের পুরানো কাপড়ের দামও বেড়েছে। বিদেশ থেকে আসা বেল্টের পোড়ানো জ্যাকেট, সোয়েটার, মাফলার, পায়ে দেওয়া মোজার দাম বেড়েছে। এছাড়া নগরীর মহল্লায় ঢুকে ভ্যানে করে শীতের গরম কাপড় বিক্রি করতে দেখা গেছে অনেককে। এসব ভ্যানে ৮০ থেকে ২০০ টাকা দরে বিভিন্ন গরম কাপড় বিক্রি হচ্ছে।
এ বিষয়ে রামেক হাসপাতালে মুখপাত্র ডা. শংকর কে বিশ্বাস বলেন, শীতে হাসপাতালে ডায়রিয়া, নিউমোনিয়া ও টাইফয়েডে রোগীর সংখ্যা বেড়েছে। সবচেয়ে ডায়রিয়াতে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা বেড়েছে। শিশু ও বয়স্কদের মধ্যে সংক্রমণ সবচেয়ে বেশি। এছাড়া আগুন পোহাতে গিয়ে বা গরম পানিতে দগ্ধ হয়ে অনেকে ভর্তি হয়েছেন।
তিনি বলেন, হাসপাতাল থেকে সরকারি ওষুধ সরবরাহ করা হচ্ছে। তবে যে পরিমাণে আক্রান্ত, এতে আসলে আতঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই। শীত নিয়ে অবহেলার কিছু নেই সবাইকে সতর্ক হয়ে থাকতে হবে। বিভিন্ন রোগ বালাইয়ের আক্রমণ ঠেকাতে সবাইকে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন পরামর্শ দেন এই চিকিৎসক।
রাজশাহী আবহাওয়া অফিসের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা রহিদুল ইসলাম বলেন, আজ রাজশাহীতে মৌসুমীর সর্বনিম্ন তাপমাত্রা। গতকাল হালকা গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি হয়েছিল। মেঘ কেটে গিয়ে সর্বনিম্ন তাপমাত্রা কমে শীতের তীব্রতা বেড়েছে।
