ঘন কুয়াশা ও শৈত্যপ্রবাহের কারণে সিরাজগঞ্জে বোরো ধানের বীজতলা ক্ষতির আশঙ্কা করছেন কৃষকরা। বীজতলা পলিথিন দিয়ে ঢেকে বাঁচানোর চেষ্টা করছেন অনেকে। মাঠে মাঠে বোনা, রোপা আমন ধান কাটা এবং মাড়াইয়ের কাজ শেষ হয়েছে অনেক আগেই। এসব জমিতে সরিষার সাথে সাথে তৈরি করা হয় বোরো ধানের বীজতলা।
সিরাজগঞ্জে তীব্র শীত, ঘনকুয়াশা ও শৈত্যপ্রবাহ বয়ে চলছে। এ কারণে বীজতলা নিয়ে চিন্তায় পড়েছেন কৃষকরা।

সিরাজগঞ্জ কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, জেলার ৯টি উপজেলায় বোরো চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ১ লাখ ৪১ হাজার ৫৭৫ হেক্টর জমি। সেই লক্ষ পূরণে জেলায় ৮ হাজার ৯০ হেক্টর জমিতে বোরো ধানের বীজতলা তৈরি করা হয়।
কৃষকরা জমি তৈরি, বীজতলা পরিচর্যা ও চারা বীজ বপনের কাজে ব্যস্ত সময় পার করছেন। ঠিক তখনই শীতের তীব্রতা বেড়ে যাওয়ায় বীজতলা নষ্ট হয়ে যাওয়ার আশংকা দেখা দিয়েছে। এ অবস্থায় বীজতলা পলিথিন দিয়ে ঢেকে রাখা ও রাতের বেলায় পানি দিয়ে সকালে পানি ছেড়ে দেওয়ার পরামর্শ দিয়েছে জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর।
বিভিন্ন বীজতলা ঘুরে দেখা গেছে, তীব্র শীত ও ঘন কুয়াশায় বীজতলা বিবর্ণ হয়ে যাচ্ছে। শীতের কবল থেকে রক্ষা করতে শত শত বীজতলা পলিথিন দিয়ে ঢেকে দেওয়া হয়েছে। যারা পলিথিন দিতে পারেননি, তারা খড় দিয়ে ঢেকে রাখছেন। কেউবা বীজতলায় ছাই ছিটিয়ে রক্ষার চেষ্টা করছেন।
তাড়াশ উপজেলার মাগুরা বিনোদ গ্রামের কৃষক সোলেমান হোসেন জানান, বিকেলের পর থেকে কুয়াশা পড়া শুরু হয়। আর রাতে ঘন কুয়াশায় ঢেকে যায় বীজতলা। এতে চারার ক্ষতি হতে পারে। তাই পলিথিন দিয়ে বীজতলা ঢেকে রাখি। আবার রাতে বীজতলায় পানি দিয়ে রাখতে হয়। সকাল হলে সেই পানি বীজতলা থেকে বের করে দিতে হয়। এভাবে ১০ থেকে ১২ দিন করতে হয়। চারা একটু বড় হলে তখন আর এ রকম করতে হবে না।
বারুহাস ইউনিয়নের বিনোদপুর গ্রামের কৃষক আব্দুল কাদের জানান, ধানের বীজতলার অর্ধেকই শীত ও কুয়াশার কারণে মরে যাচ্ছে। কৃষকরা বীজতলা রক্ষায় বিভিন্ন ছত্রাকনাশক প্রয়োগ করছেন। এতে চারা কিছুটা হলেও রক্ষা পাওয়া যাচ্ছে।
তাড়াশ পৌর শহরের কোহিত গ্রামের কৃষক জাহিদ হোসেন জানান, শীত বাড়ার আগেই বীজ বপন করলে অধিক চারা গজায়। শীতের প্রকোপ বেশি হওয়ায় এ পদ্ধতি অনুসরণ না করলে বীজতলার চারা হলুদ কিংবা সাদা বর্ণ হয়ে যায়। আর কয়েকদিন পর তা নষ্টও হয়ে যায়।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক বাবুল কুমার সুত্রধর বলেন, জমি কাদা না করে শুকনা বীজতলা তৈরি করে বীজ বপন করে পলিথিন দিয়ে ঢেকে রাখার পরামর্শ দিচ্ছি। আবার শীত ও কুয়াশা থেকে বীজতলা রক্ষায় পলিথিন এবং পানি দিয়ে ঢেকে দেওয়ার কথা বলা হচ্ছে। এটা আধুনিক প্রযুক্তি। এতে বীজতলা হলুদ বর্ণ ধারণ করবে না। ক্ষতির সম্ভাবনা খুব কম। জেলায় এ বছর ৮ হাজার ৯০ হেক্টর জমিতে বীজতলা তৈরি করা হয়েছে।
