ঢাকা
সোমবার, ১৭ নভেম্বর ২০২৫, ২ অগ্রহায়ণ ১৪৩২
ই-পেপার

মুন্সীগঞ্জের শৈল্পিক ঐতিহ্য ‘কাঠের ঘর’

আপডেট : ০৯ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ১০:৫৭ এএম

ঢাকার পাশের জেলা মুন্সীগঞ্জের শৈল্পিক ঐতিহ্য ‘কাঠের ঘর’। কাঠ ও প্লেনশিটের বাহারি কারুকাজে তৈরি এসব কাঠের ঘর কয়েক বছর আগেও কেবল স্থানীয় ব্যক্তিরাই ব্যবহার করতেন। সময়ের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে পাল্টে গেছে সেই চিত্র। এখন দেশের বিভিন্ন জেলায় কদর বেড়েছে এসব ঘরের। এমনকি দৃষ্টিনন্দন এসব কাঠের ঘর এখন রিসোর্ট-রেস্তোরাঁয় মুগ্ধতা ছড়ায় শৈল্পিক সৌন্দর্যে।

স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, পদ্মার আগ্রাসী রূপ দেখা এই জেলায় মূলত নদীভাঙনের ক্ষয়ক্ষতি এড়াতেই কাঠের ঘরের প্রচলন শুরু হয়েছিল। এসব কাঠের ঘর খণ্ড খণ্ড করে খোলা যায়। এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় সরিয়ে নেয়া যায় সহজেই। এছাড়াও প্রয়োজনে নগদ অর্থে এসব ঘর বিক্রি করা যায়। তাই এখনও মানুষ বিল্ডিং না করে টিনের ঘর করে। ফলে পদ্মাপারের সীমানা ছাপিয়ে মুন্সীগঞ্জে কাঠের ঘরের প্রচলন দীর্ঘদিনের। 

শৈল্পিক সৌন্দর্যের কারণে কাঠের ঘরের খ্যাতি ছড়িয়ে পড়ছে দেশজুড়ে। ঘরের প্রকারভেদে স্থানীয়রা এক তলা, দেড় তলা, সাত চালা, চৌচালা ঘর বলে থাকে। এসব ঘর আগে এলাকার লোকজন কিনলেও এখন তা কিনে নিয়ে যান দেশের বিভিন্ন প্রান্তের ক্রেতারা। অসাধারণ সৌন্দর্যের কারণে রিসোর্ট-রেস্তোরাঁর শোভা বাড়াতেও এসব কাঠের ঘর কিনছেন ক্রেতারা। 

কাঠের ঘর তৈরির নির্মাণ শ্রমিকরা জানান, একেকটি কাঠের ঘর এক তলা থেকে তিন তলা পর্যন্ত হয়। সেগুন, শাল, বাচালু ও ওকানসহ নাইজেরিয়ান কাঠের চাহিদা রয়েছে ঘর তৈরির কাজে। ৩০, ৩২, ৪৮ মিলিমিটারের টিন ব্যবহার করা হয় এসব ঘরের বেড়া ও চালের জন্য। আকৃতি অনুযায়ী ২০০ থেকে ৪০০ কেবি কাঠ প্রয়োজন হয় একেকটি ঘর তৈরিতে। প্রকারভেদে একেকটি ঘর নির্মাণ করতে ১০ জন শ্রমিকের সময় লাগে প্রায় ৭ থেকে ১৫ দিন। কাঠভেদে এসব ঘর ৩০ থেকে ৭০ বছর পর্যন্ত টেকসই হয়।

কাঠের ঘরের কদর থাকায় জেলার ছয় উপজেলায়ই বাণিজ্যিকভাবে তৈরি হচ্ছে রেডিমেড ঘর। লৌহজং উপজেলার কাঠপট্টির কলাবাগান এলাকাসহ সদর উপজেলার ধলাগাঁও, আলদি, বজ্রযোগীনি, টঙ্গীবাড়ি উপজেলার পাইকপাড়া, বেতকা ও সিরাজদিখানের মালখানগরেও রয়েছে কাঠের ঘরের ব্যবসা। এসব প্রতিষ্ঠানে অনেক নির্মাণ শ্রমিক সারা দিন কাজ করেন। যেখানে বিক্রেতারা ঘর বানিয়ে রাখেন, ক্রেতারা চাইলে ইচ্ছামতো ঘর কিনে নিয়ে নিজ বাড়িতে স্থাপন করতে পারেন।

স্থানীয় ব্যবসায়ীদের সঙ্গে আলাপকালে তারা খবর সংযোগকে জানান, মজবুত কাঠ ও প্লেনশিটের তৈরি কাঠের ঘরের দরজা-জানালাসহ বেড়া, সিঁড়ি, টুয়া, চালসহ সব কিছুতেই খোদাই করা থাকে রকমারি নকশা। নকশা খচিত এসব কাঠের ঘর দেড় লাখ টাকা থেকে শুরু করে আকার ও নকশার ভিন্নতায় ৪০ লাখ টাকা পর্যন্ত বিক্রি হয়। ঘর তৈরির খরচ বেড়ে যাওয়ায় বাড়তি দাম ধরতে হচ্ছে। তাই এখন বেচা-বিক্রি কিছুটা মন্দা। ঘর তৈরিতে খরচ কমলে ক্রেতাদের কাছে আমরাও কম দামে বিক্রি করতে পারব। তা ছাড়া কাঠের ঘরের চাহিদা রয়েছে।
 
সম্প্রতি ১৬ লাখ টাকায় কাঠের ঘর কিনেছেন মুন্সীগঞ্জের ইকবাল হোসেন সিকদার। তিনি লৌহজং উপজেলার গাওদিয়া ইউনিয়ন পরিষদের ৭ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য (মেম্বার)। তিনি জানান, আঞ্চলিক ঐতিহ্য ও সৌন্দর্যের কারণেই তিনি নিজ বাড়িতে দালানের পরিবর্তে কাঠের ঘর তুলেছেন। ইকবাল আরো বলেন, এসব ঘরে পর্যাপ্ত আলো-বাতাস পাওয়া যায়। টেকসই এবং দেখতেও সুন্দর।

AS/SA/MR
আরও পড়ুন