ঢাকা
সোমবার, ১৭ নভেম্বর ২০২৫, ২ অগ্রহায়ণ ১৪৩২
ই-পেপার

মুক্তিযোদ্ধাদের বীর নিবাস নির্মাণে ঠিকাদারদের বিরুদ্ধে অভিযোগ!

আপডেট : ০১ এপ্রিল ২০২৪, ১১:১৬ এএম

নড়িয়া উপজেলার চান্দনি এলাকার যুদ্ধাহত বীর মুক্তিযোদ্ধা আ. জলিল ফকির। তার জন্য সরকার থেকে  একটি বীর নিবাস ঘর বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। তবে প্রকল্পের মেয়াদ শেষ হলেও তার ঘরের স্থানে পৌঁছায়নি একটিও ইট। ভুক্তভোগী এই বীর মুক্তিযোদ্ধার অভিযোগ, ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান তার কাছে বাড়তি টাকা চেয়ে না পেয়ে এখন পর্যন্ত ঘর নির্মাণ কাজ শুরু করেনি। মুজিববর্ষ উপলক্ষ্যে অসচ্ছল মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য দেয়া বেশ কিছু ঘরের নির্মাণ কাজ শেষ না হওয়ায়, বিপাকে পড়েছেন ওই মুক্তিযোদ্ধা ও তাদের পরিবারের সদস্যরা। 

শরীয়তপুরের প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তার কার্যালয় সূত্র জানায়, মুজিববর্ষ উপলক্ষে সারাদেশে প্রধানমন্ত্রীর উপহার হিসেবে অসচ্ছল মুক্তিযোদ্ধাদের পাকা বসত ঘর নির্মাণের সিদ্ধান্ত নেয় সরকার। বীর নিবাস নামের ওই পাকা ঘর নির্মাণের ব্যয় নির্ধারণ করা হয় ১৪ লাখ ১০ হাজার ৩৮২ টাকা। প্রকল্পের আওতায় ২০২০-২০২১ অর্থ বছরে শরীয়তপুরের ৬ টি উপজেলায় ৬৪ জন মুক্তিযোদ্ধাকে ওই বীর নিবাস নির্মাণ করে দেয়া হয়। 

এরপর একই প্রকল্পের আওতায় ২০২১-২০২২ অর্থ বছরে নতুন করে আরো ২২১টি বীর নিবাস বরাদ্দ করা হয়। যার নির্মাণ কাজ শুরু করা হয় ২০২২ সালের মে-জুনে মাসে। ভবনগুলো ৩ মাসের মধ্যে শেষ করে  মুক্তিযোদ্ধাদের বুঝিয়ে দেয়ার কথা থাকলেও ৩০টি বীর নিবাসের নির্মাণ কাজ এখনো শেষ করা হয়নি। কয়েকটি ভবনের ৪০-৫০ শতাংশ কাজ করে তা ফেলে রাখা হয়েছে। কয়েকটির নির্মাণ কাজ এখনও শুরু করা হয়নি। এছাড়া কয়েকটি ঘরের কাজের মান নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন মুক্তিযোদ্ধা ও তাদের পরিবারের সদস্যরা।

যুদ্ধাহত বীর মুক্তিযোদ্ধা আ. জলিল ফকির অভিযোগ করে বলেন, দেড় বছর আগে আমার এই ঘর পাশ হয়েছে। কিন্তু এখনো একটি ইটও আসেনি। ঠিকাদারের লোকজন ইটের দাম বেড়ে যাওয়ায় ৮০ হাজার টাকা ভর্তুকি চেয়েছি। আমি টাকা দেইনি বলে আমার ঘরের কাজ এখনো শুরু হয়নি। যারা টাকা দিয়েছে তাদের ঘরের কাজ হয়ে গেছে। 

তবে অভিযোগ অস্বীকার করে ঠিকাদার সিরাজুল ইসলাম চুন্নু খবর সংযোগ ডটকমকে বলেন, আমি পাঁচটি বীর নিবাস ঘর তৈরির দায়িত্ব পেয়ে তিনটির কাজ শেষ করেছি। কারো কাছ থেকে টাকা-পয়সা চাইনি। আমার লোকসান হলেও ঈদের পর ঘর নির্মাণ করে দিব। 

একই প্রকল্পের আওতায় ভেদরগঞ্জ উপজেলার ছত্রমুরিয়া এলাকার মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল মজিদ সরদারের জন্য একটি বীর নিবাসের ঘর বরাদ্দ দেয়া হয়। ঘরটির ছাদ ও দেয়াল নির্মাণ করার পর কাজ ফেলে রেখেছেন বোরহান উদ্দিন নামের এক ঠিকাদার। ঘরের নির্মাণ কাজ শেষ না হওয়ায় পুরনো একটি ভাঙা টিনের ঘরে বসবাস করেছেন ওই মুক্তিযোদ্ধা। 

মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল মজিদ সরদার আক্ষেপ করে খবর সংযোগ ডটকমকে বলেন, তারা পুরনো উঁই পোকায় খাওয়া চৌকাঠ নিয়ে এসেছে ঘরে লাগানোর জন্য। আমি লাগাতে নিষেধ করার পর থেকে তারা ৬ মাস ধরে কাজ বন্ধ রেখে চলে গিয়েছে। আমি আজ ৮ বছর ধরে অসুস্থ। এই ঘরের জমিটুকু ছাড়া আমার আর কোনো জায়গা নেই। সব বিক্রি করে নিঃস্ব হয়েছি। বর্তমানে আমি ঋণগ্রস্থ।

অভিযোগের বিষয়ে জানতে ঠিকাদার বোরহান উদ্দিনকে একাধিকবার ফোন দিলেও তিনি তা রিসিভ করেননি।

এদিকে একই প্রকল্পে ঘর পেয়েছেন সদর উপজেলার দক্ষিণ কেবল নগর এলাকার বীর মুক্তিযোদ্ধা ইউসুফ আলী খানের পরিবার। তিনি কয়েক বছর আগে মারা গেলে তার স্ত্রী ফুলমতি বেগম আর ছেলে একটি ছাপরা ঘরের বসবাস করে আসছেন। ২০২১-২০২২ অর্থ বছরে ওই মুক্তিযোদ্ধা পরিবারের ঘর নির্মাণের জন্য আবুল বাসার নামের এক ঠিকাদারকে নিযুক্ত করা হয়। ওই ঠিকাদার ভবনটির ছাদ ও দেয়াল নির্মাণ করার পর তা ফেলে রেখেছেন। বর্তমানে থাকার যায়গা না থাকায় নির্মানাধীন ওই ঘরের মধ্যেই পাটকাঠির বেড়া দিয়ে বসবাস করছেন মুক্তিযোদ্ধার পরিবারটি।

মুক্তিযোদ্ধা ইউসুফ আলী খানের স্ত্রী ফুলমতি বেগম খবর সংযোগ ডটকমকে বলেন, জীবনের প্রায় অর্ধেক সময় ছাপড়া ঘরে থেকেছি। সরকার থেকে আমাদের পাকা ঘরে বসবাস করার স্বপ্ন দেখাইছে। তবে আমাদের এই ঘরটি অর্ধেক করে ১ বছর ধরে ফেলে রাখছে। ছেলে তার স্ত্রীকে নিয়ে ছাপরা ঘরে থাকে, নাতি-নাতনি নিয়ে আমি এই অর্ধেক করা ঘরে থাকি। 

এদিকে দ্রুত সমস্যা সমাধান করে অসমাপ্ত বীর নিবাসগুলোর কাজ সম্পন্ন করার আশ্বাস দিয়েছেন শরীয়তপুরের জেলা প্রশাসক মুহাম্মদ নিজাম উদ্দীন আহাম্মেদ। 

খবর সংযোগ ডটকমকে তিনি বলেন, ভূমি জটিলতার কারণে কিছু কিছু ঘর নির্মাণ কাজ এখনও শুরু করতে পারিনি। তবে খুব তাড়াতাড়ি সমস্যা সমাধান হওয়ার সাথে সাথে কাজ শুরু করা হবে।  

তিনি আরও বলেন, মুক্তিযোদ্ধাদের বিষয়ে সরকার এবং আমরা সব সময় অগ্রাধিকার দিয়ে থাকি। ঘরের বিষয়ে কেউ যদি লিখিত অভিযোগ করেন, সংস্কার কাজে ত্রুটি থাকলে তা সমাধান করা হবে। পাশাপাশি যারা এই নির্মাণ কাজে জড়িত তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে। এ বিষয়ে কাউকে ছাড় দেয়া হবেনা। 

HK/AST
আরও পড়ুন