ঢাকা
মঙ্গলবার, ১৮ নভেম্বর ২০২৫, ২ অগ্রহায়ণ ১৪৩২
ই-পেপার

‘লঞ্চ আমারে নিঃস্ব করে দিয়েছে’

আপডেট : ১৩ এপ্রিল ২০২৪, ১২:৪০ পিএম

ঢাকার সদরঘাটে লঞ্চের রশি ছিঁড়ে বেল্লাল হোসেন, তার অন্তঃসত্ত্বা স্ত্রী ও মেয়ের আকস্মিক মৃত্যুর খবরে পিরোজপুরের মঠবাড়িয়ার বাড়িতে মাতম চলছে। বৃহস্পতিবার (১১ এপ্রিল) বিকেলে বেল্লালের বাড়িতে মৃত্যুর খবর পৌঁছানোর পর মা আলেয়া বেগমের কান্না থামছে না। মাতম করতে করতে মূর্ছা যাচ্ছেন তিনি। কিছুক্ষণ পরপর চিৎকার করে তিনি বলে উঠছেন, ‘লঞ্চ আমারে নিঃস্ব করে দিয়ে গেল।’

বেল্লাল হোসেনের বাড়ি মঠবাড়িয়া উপজেলা খায়ের ঘটিচোরা গ্রামে। শুক্রবার রাত সাড়ে ১০টার দিকে তার বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, স্বজন-প্রতিবেশীরা আলেয়া বেগমকে সান্ত্বনা দিচ্ছেন। তবে তার কান্না থামছে না।

কাঁদতে কাঁদতে আলেয়া বেগম বলছিলেন, ‘আমার ছেলে, বউ, নাতি-সব হারালাম। আমার আরেক নাতি পৃথিবীর আলো দেখার আগেই মায়ের সঙ্গে ঘুমিয়ে গেল। যারা চারটা প্রাণ নিয়ে গেল, আমি তাদের বিচার চাই।’ তিনি বলতে থাকেন, ‘১৫ রোজায় বেল্লাল বাড়ি আইছিল। ওরে কইলাম বউ ও নাতিরে লইয়া ঈদে বাড়ি আইস। সবাই মিল্লা ঈদ করমু। আমার লগে ঈদ করতে পোলায় বাড়ি আওয়ার পথে মইরা গেল। লঞ্চ আমার বংশ নির্বংশ কইরা দিল।’

শুক্রবার সকাল সাড়ে ৭টার দিকে বেল্লাল হোসেনের (২৮) মরদেহ খায়ের ঘটিচোরা গ্রামের বাড়িতে পৌঁছায়। এই গ্রামেই মামার বাড়িতে তাকে দাফন করা হয়েছে। তার স্ত্রী মুক্তা বেগম (২২) ও মেয়ে মাইশার (৪) লাশ শ্বশুরবাড়ি উপজেলার দাউদখালী গ্রামে দাফন করা হয় শনিবার সকাল ৯টার দিকে।

মুক্তা বেগমের চাচাতো ভাই রিয়াজ খান বলেন, ‘বেল্লালের বাড়িতে দাফনের মতো জমি নেই। তাই আমরা চেয়েছিলাম তিনজনের মরদেহ আমাদের বাড়িতে পাশাপাশি দাফন করতে। কিন্তু বেল্লালের মায়ের ইচ্ছা ছেলের মরদেহ তার বাবার বাড়িতে দাফন করার। মায়ের ইচ্ছায় ছেলের মরদেহ সেখানে হয়েছে।’

এলাকার লোকজন জানালেন, আলেয়া বেগমের একমাত্র ছেলে বেল্লাল। বেল্লাল ও মুক্তা দম্পতির বিয়ে হয় ছয় বছর আগে। বেল্লাল গাজীপুরের একটি পোশাক কারখানায় চাকরি করতেন। স্ত্রী ও মেয়েকে নিয়ে সেখানে থাকতেন।

বৃহস্পতিবার দুপুরে বেল্লাল ছয় মাসের অন্তঃসত্ত্বা স্ত্রী ও মেয়েকে নিয়ে সদরঘাটে যান। পিরোজপুরের মঠবাড়িয়া উপজেলার তুষখালীর উদ্দেশে ছেড়ে যাওয়া এমভি পূবালী-১ লঞ্চে ওঠার জন্য সদরঘাটের ১১ নম্বর পন্টুনে অপেক্ষা করছিলেন তারা। তখন ১১ নম্বর পন্টুনের সামনে যাত্রী ওঠানোর অপেক্ষায় ছিল এমভি তাশরিফ-৪ ও এমভি পূবালী-১ নামের দুটি লঞ্চ।

হঠাৎ ফারহান-৬ লঞ্চটি তাশরিফ-৪–এর ডান পাশ দিয়ে ঢোকার চেষ্টা করে। তিনটি লঞ্চের প্রায় ১০ মিনিট ধরে ধাক্কাধাক্কি হয়। সেই ধাক্কা লেগে হঠাৎ পন্টুনে বাঁধা এমভি তাশরিফের মোটা রশি ছিঁড়ে যায়। মোটা ওই রশি মুহূর্তের মধ্যে এমভি পূবালী-১–এর সামনে দাঁড়িয়ে থাকা বেল্লাল, তার স্ত্রী, সন্তানসহ পাঁচজনকে আঘাত করে। তাদের উদ্ধার করে মিটফোর্ড হাসপাতালে নেওয়ার পর কর্তব্যরত চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন।

এদিকে রাজধানীর সদরঘাটে লঞ্চের দড়ি ছিঁড়ে পাঁচজন নিহত হওয়ার ঘটনায় দায়ের করা মামলায় গ্রেপ্তার পাঁচ আসামির তিন দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন আদালত। শুক্রবার (১২ এপ্রিল) মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা সদরঘাট নৌ-থানার উপপরিদর্শক নকীব অয়জুল হক আসামিদের আদালতে হাজির করে প্রত্যেকের সাত দিন করে রিমান্ড চেয়ে আবেদন করেন।

রিমান্ডে নেওয়া আসামিরা হলেন- এমভি তাশরিফ-৪ লঞ্চের প্রথম শ্রেণির মাস্টার মো. মিজানুর রহমান (৪৮) ও দ্বিতীয় শ্রেণির মাস্টার মো. মনিরুজ্জামান (২৪) এবং এমভি ফারহান-৬ লঞ্চের প্রথম শ্রেণির মাস্টার মো. আব্দুর রউফ হাওলাদার (৫৪), দ্বিতীয় শ্রেণির মাস্টার মো. সেলিম হাওলাদার (৫৪) ও ম্যানেজার মো. ফারুক খান (৭৬)।

MB/SA
আরও পড়ুন