মানিকগঞ্জের হরিরামপুর উপজেলার ওপর দিয়ে বয়ে গেছে পদ্মা নদী । তবে পানি কমে যাওয়ায় ভাঙন আতঙ্কে দিন কাটছে নদী তীরবর্তী মানুষের। নদী সংলগ্ন এই উপজেলা ১৩টি ইউনিয়ন নিয়ে গঠিত হলেও নদীর উত্তরপার্শ্বে ১০টি ও দক্ষিণ পার্শ্বে তিনটি অবস্থিত। ভাঙন কোনো নতুন ঘটনা না হলেও উত্তরপার্শ্বের কাঞ্চনপুর ইউনিয়নের ১৩টি ভূমি মৌজা থাকলেও তার মধ্যে ১২টি নদী গর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। সবশেষ গৌড়বড়দিয়া মৌজাও বিলীন হওয়ার পথে।
স্থানীয়রা জানায়, জেলার পদ্মা নদীর দুপাশে হরিরামপুর উপজেলা অবস্থিত। এক সময় নদী বয়ে গিয়ে ছিল এলাকার পাশ দিয়ে। কিন্তু কালের বিবর্তনে তা এখন মাঝ দিয়ে বয়ে চলছে । উপজেলার মোট আয়তন ২৪৫ দশমিক ৪২ বর্গকিলোমিটার (৯৪ দশমিক ৭৬ বর্গমাইল) এবং জনসংখ্যা এক লাখ ৩৯ হাজার ৩১৮ জন । গালা, হারুকান্দি, গপিনাথপুর, রামকৃষ্ণপুর, চালা, আজিমনগর, বয়ড়া, বাল্লা, কাঞ্চনপুর, বলড়া, ধুলশুড়া, সুতালড়ি ও লেছড়াগঞ্জ ইউনিয়ন নিয়ে উপজেলাটি গঠিত। নদীর দক্ষিণ পার্শ্বে তিনটি ইউনিয়ন থাকলেও বর্তমানে দুটি প্রায় ভাঙনের কবলে পড়ে বিলীনের পথে, বাকি আছে একটি ইউনিয়ন। স্থলভাগের উত্তর পার্শ্বে ১০টির মধ্যেও এখন যে ভাঙন দেখা দিয়েছে তার মধ্যে কাঞ্চনপুর ইউনিয়নের ১৩টি মৌজার ১২টি মৌজা পদ্মায় বিলীন হয়ে গেছে। সংশ্লিষ্ট ইউনিয়নের শেষ মৌজা (গৌড়বড়দিয়া) ২ ও ৩ নম্বর ওয়ার্ডের তীরবর্তী মলিুচি ও কুশিয়ারচরে ভাঙন দেখা দিয়েছে । এদিকে গত কয়েক বছরের ভাঙনের কবলে পড়ে কাঞ্চনপুর ইউনিয়নের ৭৫ ভাগ নদী গর্ভে বিলীন হয়েছে।
এই ভয়ঙ্কর ভাঙন রোধে দ্রুত সময়ের ভেতর স্থায়ী বাঁধের দাবি স্থানীয়দের।
একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী শামীম গাজী বলেন, আমাদের এই অঞ্চলে দীর্ঘ দিন যাবৎ ভাঙন দেখা দিয়েছে তবে দেখার যেন কেউ নেই । এমনিতেই কাঞ্চনপুর ইউনিয়নের ৭৫ ভাগ নদী গর্ভে বিলীন হয়ে গেছে বাকিটুকু যেকোনো সময় ভাঙনের কবলে পড়বে। অবশিষ্ট যে অংশটুকু আছে তা যদি ভাঙনের কবলে পড়ে তবে মানচিত্র থেকে ইউনিয়নটি বিলীন হয়ে যাবে।
আহাদ নামে স্থানীয় এক ব্যক্তি ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, প্রতি বছর ভাঙন দেখা দেয় আর আপনারা (সাংবাদিক) আসেন আর নিউজ করেন। তাতে আমাগো কী হয় ? আপনাগো কাজ হয় কিন্তু আমাদের এই অঞ্চলের কী কাজে আসছে! পানি উন্নয়বোর্ডের লোকজন আসবো কয়টা বস্তা বালু ফেলবো, তাতেই সব শেষ। যদি পারেন এই অঞ্চলের মানুষের জন্য স্থায়ী কিছু করার পদক্ষেপ নেন।

কাঞ্চনপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান গাজী বনি ইসলাম রূপক বলেন, আমার এই ইউনিয়ন এখন কাগজে কলমে আছে, বড় একটি অংশ নদী গর্ভে বিলীন হয়ে গেছে । গত কয়েক দিনের ভাঙনে পড়ে আরো কিছু বাড়িঘরসহ ফসলি জমি নদী গর্ভে বিলীন হয়েছে। ভাঙন বিষয়ে ইউএনও ও পাউবোর কর্মকর্তাকে জানিয়েছি ।
হরিরামপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো.শাহরিয়ার রহমান বলেন, ভাঙন ঝুঁকিতে থাকা কাঞ্চনপুরের কুশিয়ারচর ও মালুচি অঞ্চলের বিষয়টি সংশ্লিষ্ট ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানাবো।
মানিকগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) নির্বাহী প্রকৌশলী মুহাম্মদ আক্তারুজ্জামান বলেন, পদ্মা নদীর ভাঙন রোধে হরিরামপুরের কুশিয়ারচর ও মালুচি এলাকায় দ্রুত জিও ব্যাগ ফেলার কাজ শুরু হয়েছে ।
