ঢাকা
সোমবার, ১৭ নভেম্বর ২০২৫, ২ অগ্রহায়ণ ১৪৩২
ই-পেপার

মধুমতী নদীর তীরে ভাঙন, অর্ধশতাধিক স্থপনা বিলীন

আপডেট : ৩১ জুলাই ২০২৫, ০২:০০ পিএম

ফরিদপুরের আলফাডাঙ্গা উপজেলার টগরবন্দ ইউনিয়নে শিকারপুর গ্রামের বাসিন্দা হরেকৃষ্ণ মন্ডল। মধুমতি নদীর ভাঙনে এ বছর ৪টি বসতঘরসহ ৬৮ শতাংশ জমি হারিয়েছেন। অবশিষ্ট আছে ফসলি কিছু জমি। তা নিয়েও দুশ্চিন্তায় দিন কাটছে তার। বর্তমানে নদীর পাড়ে অন্যর জমিতে ছাপড়া ঘর তুলে বসবাস করছেন। 

তিনি বলেন, এ বছর যেভাবে নদী ভাঙছে, আমাদের বসতঘর নদীতে বিলীন হয়েছে। কিছু ফসলি জমি আছে, সেটাও নদীর মধ্যে চলে গেলে পরিবার নিয়ে পথে বসে যাবো।  

একই গ্রামের বাসিন্দা নিজাম উদ্দিন নদী ভাঙনের ভিটেমাটি হারিয়েছেন। ২ একর ফসলি জমি ইতোমধ্যে নদী ভাঙনে বিলীন হয়েছে। অন্য কোথায় গিয়ে বাড়ি করার জন্য জমি কেনার মতো টাকা নেই। তিনিও পরিবার নিয়ে দুশ্চিন্তায় রয়েছেন।

উপজেলার টগরবন্দ ইউনিয়নের শিকারপুর, টিটা পানাইল, কুমুরতিয়া, ইকড়াইল ও টিটা গ্রামের প্রায় অর্ধশতাধিক বাসিন্দা তাদের বসতঘর হারিয়ে খোলা আকাশের নিচে বসবাস করছে। মধুমতি পাড়ের এই বাসিন্দাদের রাতের ঘুম উধাও। 

চলতি বছরের ২৬ মে নদী ভাঙন প্রতিরোধে পানি উন্নয়ন বোর্ডের মহাপরিচালক বরাবর এলাকাবাসীর স্বাক্ষরিত একটি লিখিত আবেদন করা হয়েছে।  

জানা যায়, মধুমতির পানি বৃদ্ধিতে টগরবন্দ ইউনিয়নের ৫টি গ্রামে তীব্র নদীভাঙন দেখা গেছে। শিকারপুর, টিটা পানাইল, কুমুরতিয়া, ইকড়াইল ও টিটা গ্রামে মধুমতি নদীতীরবর্তী প্রায় দেড় কিলোমিটার এলাকাজুড়ে তীব্র নদীভাঙন দেখা দিয়েছে। নদী ভাঙন আতঙ্কে রয়েছে প্রায় সাড়ে ৩০০ পরিবার। ভাঙন ঠেকাতে নেই কোনো সরকারি তৎপরতা।

ইতোমধ্যে ইকড়াইল গ্রামের একটি মসজিদ নদী গ্রাস করে নিয়েছে। ইকড়াইল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে মাত্র ২০ গজ দূরে রয়েছে নদী, যে কোনো মুহুর্তে ভাঙনে বিলীন হবে স্কুলটি। আতঙ্কে অনেক শিক্ষার্থী স্কুলে আসছে না।

ভাঙনের ঝুঁকিতে রয়েছে- ৫ গ্রামের ১০টি জামে মসজিদ, একটি কলেজ, ২টি হাইস্কুল, ৪টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, একটি দাখিল মাদ্রাসা, একটি কমিউনিটি ক্লিনিক, একটি সাব পোস্ট অফিস, ২টি বড় হাট ও ১০ টি মাছ ও গবাদিপশুর খামার, কয়েকটি কাঁচা সড়ক, ঈদগাহ ও কবরস্থানসহ শত শত একর ফসলি জমি-গাছপালাসহ গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা। 

এলাকাবাসীর দাবি, স্বল্প সময়ের মধ্যে ভাঙন প্রতিরোধ করতে না পারলে ৫টি গ্রামের সব কিছু ভেঙে বিলীন হয়ে যাবে। ভাঙন প্রতিরোধে ইতোমধ্যে তারা পানি উন্নয়ন বোর্ডের মহাপরিচালক বরাবর লিখিত আবেদন করেছেন। 

সরেজমিন গিয়ে দেখা যায়, গত কয়েক দিনের ব্যবধানে এ অঞ্চলে মধুমতি নদীর ভাঙনে বিলীন হয়ে গেছে প্রায় ৩ কিলোমিটার জায়গা। 

এ ভাঙনে অন্তত ৪০-৫০টি বাসতবাড়ি অন্যত্র সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। ভাঙনের তীব্রতায় অনেকে ভিটেমাটি, সহায়-সম্বল হারিয়ে নিঃস্ব হয়ে পড়েছেন। অনেকে আশ্রয় নিয়েছেন খোলা জায়গাতে। ভাঙন আতঙ্কে নির্ঘুম রাত কাটাচ্ছেন এ অঞ্চলের মানুষ।

তাদের অভিযোগ, ভাঙন ঠেকাতে স্থানীয় প্রশাসন ও পানি উন্নয়ন বোর্ডর কোনো অগ্রগতি নেই। 

উপজেলার ইকড়াইল গ্রামের বাসিন্দা মনিরুল ইসলাম বলেন, এ বছর যেভাবে নদী ভাঙন শুরু হয়েছে সেটা অব্যাহত থাকলে স্বল্প সময়ের মধ্যে এই গ্রামের সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, মসজিদ, মাদ্রাসাসহ অনেক ঘরবাড়ি বিলীন হয়ে যাবে। এ এলাকার অর্ধশত মানুষের বসতঘর বিলীন হয়ে গেছে। শত শত একর আবাদি জমি ইতোমধ্যে নদীতে চলে গেছে। অবশিষ্ট বসতঘর, ফসসি জমি বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি স্থাপনা নদীতে বিলীন হওয়ার আশঙ্কায় দিন কাটছে। 

টগরবন্দ ইউনিয়নের সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান ও স্থানীয় বাসিন্দা ইমাম হাচান শিপন বলেন, মধুমতি পানি বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে ভাঙনও বেড়েছে। ভাঙন রোধে এখনই যদি পদক্ষেপ গ্রহণ না করা হয় তাহলে এই অবহেলিত এলাকা মধুমতি নদীতে বিলীন হয়ে যাবে।

 

বুধবার (৩০ জুলাই) দুপুরে ফরিদপুর পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী (এসডিই) সন্তোষ কর্মকার, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রাসেল ইকবাল, সহকারী কমিশনার (ভূমি) এ. কে. এম রায়হানুর রহমান ও উপজেলা প্রকৌশলী ভাঙন কবলিত স্থান পরিদর্শন করেছেন। 

টগরবন্দ ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মিয়া আসাদুজ্জামান বলেন, ভাঙনের বিষয়টি পানি উন্নয়ন বোর্ডের মহাপরিচালক বরাবার চলতি বছরের ২৬ মে এলাকাবাসীর পক্ষ থেকে ভাঙন প্রতিরোধে বাঁধ নির্মাণ করার জন্য লিখিত আবেদন করা হয়েছে। উপজেলা প্রশাসনকেও বিষয়টি জানানো হয়েছে। 

আলফাডাঙ্গা উপজেলার দায়িত্বে থাকা ফরিদপুর পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী (এসডিই) সন্তোষ কর্মকার জানান, নদীভাঙন কবলিত স্থানে গতকাল আলফাডাঙ্গা প্রশাসনের লোকজন নিয়ে পরিদর্শন করা হয়েছে। বিষয়টি আজই ঊধ্বর্তন কর্মকর্তাকে অবগত করা হবে। 

আলফাডাঙ্গা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) রাসেল ইকবাল জানান, নদী ভাঙন এলাকা বুধবার দুপুরে পানি উন্নয়ন বোর্ডের লোক নিয়ে সরেজমিন পরিদর্শন করা হয়েছে। ফরিদপুর থেকে আজ আবারও পানি উন্নয়ন বোর্ডের সিনিয়র কর্মকর্তারা আসবেন। আশা করছি, কয়েক দিনের মধ্যে ভাঙন প্রতিরোধে কাজ শুরু হবে। নদী ভাঙন ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের মাঝে সরকারের পক্ষ থেকে সহযোগিতা করা হবে।

NJ
আরও পড়ুন