ঢাকা
বৃহস্পতিবার, ২০ নভেম্বর ২০২৫, ৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩২
ই-পেপার

লিবিয়ায় গুলি করে মাদারীপুরের তিন যুবকের লাশ ফেলে দিলো সাগরে

আপডেট : ২০ নভেম্বর ২০২৫, ০৪:৫৩ এএম

লিবিয়ায় মাফিয়াদের গুলিতে তিন বাংলাদেশি যুবক। অবৈধভাবে সমুদ্রপথে ইতালি যাওয়ার সময় ইঞ্জিনচালিত নৌকায় গুলি করলে প্রাণ হারান মাদারীপুরের ইমরান, মুন্না আর বায়েজিত। তিন যুবকের মৃত্যুর পর লাশ ফেলে দেওয়া হয় সাগরে।

দালালদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করেছেন স্বজন ও এলাকাবাসী। এ ব্যাপারে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণের কথা জানিয়েছে পুলিশ।

স্বজনরা জানান, একটু ভালো থাকতে অবৈধভাবে সমুদ্রপথে ইতালি যাওয়ার উদ্দেশ্যে গত ৮ অক্টোবর বাড়ি ছাড়েন মাদারীপুর সদর উপজেলার কুনিয়া ইউনিয়নের আদিত্যপুর গ্রামের মো. তৈয়ব আলী খানের ছেলে ইমরান খান। সরাসরি ইতালি পৌঁছে দেবে- এমন শর্তে প্রতিবেশী ও মানবপাচার চক্রের সদস্য শিপন খানের সঙ্গে চুক্তি হয় ২২ লাখ টাকায়। কিন্তু ইমরানকে লিবিয়া আটকে নির্যাতন করে পরিবার থেকে আরও ১৮ লাখ টাকা আদায় করা হয়।

শেষমেশ ১ নভেম্বর লিবিয়া থেকে ইঞ্জিনচালিত নৌকায় ইতালির উদ্দেশ্যে যাত্রা করলে ভূমধ্যসাগরে মাফিয়ার গুলিতে মারা যান ইমরান। পরে মঙ্গলবার ইমারনের মৃত্যুর খবর পায় পরিবার।

শুধু ইমরান নয়, একইভাবে মাফিয়াদের গুলিতে ওই দিন মারা যান রাজৈর উপজেলার দুর্গাবদ্দী গ্রামের ইমারাত তালুকদারের ছেলে মুন্না তালুকদার, একই উপজেলার ঘোষলাকান্দি গ্রামের কুদ্দুস শেখের ছেলে বায়েজিত শেখ।

এমন মৃত্যু কিছুতেই মেনে নিতে পারছেন না স্বজনরা। ঘটনা জানাজানি হলে ঘরে তালা ঝুলিয়ে লাপাত্তা দালাল চক্রের পরিবারের লোকজন।

তবে দালাল শিপনের স্বজনদের দাবি, এ ঘটনায় জড়িত নন শিপন। তিনি দাবি করেন, জোর করে কারো পাসপোর্ট নেননি তিনি।

অভিযোগ আছে, কয়েক বছর ধরে লিবিয়ায় অবস্থান করছেন শিপন। এরপর আত্মীয়স্বজনদের মাধ্যমে এলাকার যুবকদের খুব সহজে ইতালি নেওয়ার প্রলোভন দেয় সে। এর আগেও মৃত্যুর মতো এমন ঘটনা হলেও ধরাছোঁয়ার বাইরে অভিযুক্তরা।

নিহত ইমরানের বড়বোন ফাতেমা আক্তার বলেন, শিপন দালাল আমার ভাইয়াকে মেরে ফেলছে। এই দালালের কঠিন বিচার চাই। আর সরকারের কাছে দাবি, আমার ভাইয়ের লাশটি যেন একবারের জন্য হলেও দেখতে পারি, সেই পদক্ষেপ নেওয়ার।

ইমরানের আত্মীয় সাজ্জাদ মাতুব্বর বলেন, দালাল শিপনের হাত অনেক লম্বা। এর আগেও একইভাবে কয়েকজন যুবকের মৃত্যু হয়েছে। টাকা দিয়ে সবাইকে ম্যানেজ করেন তিনি। শিপন খানের কোনো বিচার না হওয়ায় এ অপরাধ থামছেই না। আমরা দালাল শিপন ও তার সহযোগীদের কঠিন বিচার দাবি করছি।

নিহত মুন্নার খালা খাদিজা আক্তার বলেন, দালাল শিপনকে ধারদেনা করে ৪০ লাখ টাকা দিয়েছি। আমরা ভাগিনার মৃত্যু কিছুতেই মেনে নিতে পারছি না। এই দালালের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চাই। পাশাপাশি মুন্নার মরদেহ দেহ দেশে ফিরিতে আনতে সরকারের কাছে আকুতি জানাচ্ছি।

বায়েজিতের বাবা কুদ্দুস শেখ বলেন, আমার ছেলের এমন মৃত্যু কিভাবে মেনে নেব? দালাল প্রথমে স্বীকার যায়নি, পরে লিবিয়া থেকে আমাদের জানানো হয়। এই দালাল এখন লাপাত্তা। এতগুলো টাকা দিয়ে ছেলের এমন মৃত্যুর শোক কিভাবে সইব?

দালাল শিপনের চাচি সেতারা বেগম বলেন, শিপন অনেক মানুষকেই নিয়েছে। কিন্তু গুলিতে কেউ মারা গেছে, বা শিপন কাউকে গুলি করে মেরে ফেলেছে এই ঘটনা আমরা এর আগে কখনই কিছুই জানি না। শিপন লিবিয়ায় অবস্থান করছে। ওর পরিবারের লোকজনও এখন বাড়িতে নাই। ঘরে তালা ঝুলছে। আমরা এর বেশি কিছু বলতে পারব না।

মাদারীপুরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার জাহাঙ্গীর আলম জানান, লিবিয়ায় গুলিতে তিন যুবকের মৃত্যুর খবর বিভিন্ন মাধ্যমে জানতে পেরেছি। এ ঘটনায় নিহতের পরিবার থানায় লিখিত অভিযোগ দিলে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। দালালদের কোনো ছাড় দেওয়া হবে না।

HN
আরও পড়ুন