ঢাকা
সোমবার, ১৭ নভেম্বর ২০২৫, ২ অগ্রহায়ণ ১৪৩২
ই-পেপার

প্রবেশপথেই ময়লার ভাগাড়, প্রথম দর্শনেই বিরক্ত পর্যটকরা

আপডেট : ২৭ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ০২:২২ পিএম

পটুয়াখালীর কুয়াকাটা সমুদ্র সৈকত দেশের অন্যতম জনপ্রিয় পর্যটনকেন্দ্র হলেও সড়ক, পানি, নিরাপত্তা ও বর্জ্য ব্যবস্থাপনার সংকটে প্রতিদিনই ভোগান্তিতে পড়ছেন পর্যটক ও হোটেল–মোটেল ব্যবসায়ীরা।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, শহরের প্রবেশপথ থেকে শুরু করে অভ্যন্তরীণ সড়ক পর্যন্ত চওড়ায় ছোট হাওয়ায় প্রতিদিন বাড়ছে যানজট। বর্ষা মৌসুমে রাস্তায় পানি জমে কাদায় পরিণত হয়। যানবাহনের গতি কমে যায়। এতে সৈকতে পৌঁছাতে পর্যটকদের সময় বেশি লাগছে। ফলে প্রথমেই তাদের ভ্রমণ অভিজ্ঞতা নষ্ট হচ্ছে।

এদিকে স্থানীয়দের অভিযোগ, পানি সরবরাহে স্থায়ী সমাধান এখনো নিশ্চিত করেনি পৌরসভা।

এছাড়া নিরাপত্তাহীনতাও বড় সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে। পর্যটকদের উত্যক্ত করা, মোটরসাইকেল ছিনতাই, হোটেল কক্ষ থেকে চুরি—এসব অভিযোগ নতুন নয়। পর্যটন পুলিশ থাকলেও জনবল সংকট ও কার্যকর মনিটরিংয়ের অভাবে অনেক সময় আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে থাকে না।

সবচেয়ে বড় সংকট তৈরি করেছে বর্জ্য ব্যবস্থাপনা। প্রায় ১৫ বছর আগে প্রতিষ্ঠিত কুয়াকাটা পৌরসভায় এখনো আধুনিক বর্জ্য ব্যবস্থাপনার ব্যবস্থা হয়নি। শহরের প্রবেশদ্বার খাজুইরা এলাকায় প্রতিদিন পৌরসভার ভ্যান ও পিকআপে হোটেল, রিসোর্ট, ক্লিনিক ও বাসাবাড়ির বর্জ্য খোলা মাঠে ফেলা হয়। দুর্গন্ধে অতিষ্ঠ হয়ে যানবাহনের যাত্রী, পর্যটক ও স্থানীয়রা নাক চেপে এলাকা পার হন।

ময়লার স্তূপে গরু–ছাগল, হাঁস–মুরগি, এমনকি কুকুর ও শুকরের মৃতদেহ পড়ে থাকতে দেখা যায়। এ অবস্থায় শতাধিক টোকাই সারাদিন ধরে স্বাস্থ্যঝুঁকি নিয়ে বর্জ্য থেকে প্লাস্টিক ও ধাতব জিনিস কুড়াচ্ছে। এতে জীববৈচিত্র্য হুমকির মুখে পড়েছে এবং জনস্বাস্থ্যের ঝুঁকি বাড়ছে।

বীচ ম্যানেজমেন্ট সদস্য রাসেল খান জানান, কুয়াকাটায় পর্যটক বাড়ছে। কিন্তু বর্জ্য ব্যবস্থাপনা ও নিরাপত্তা ব্যবস্থা আগের জায়গাতেই রয়ে গেছে। সড়ক দুর্গম, রাতে আলো নেই—এতে পর্যটকরা ভোগান্তি পোহাচ্ছেন। বীচ ম্যানেজমেন্ট হিসেবে আমরাও চাই কুয়াকাটার পরিবেশ সুন্দর থাকুক।

উপকূল পরিবেশ রক্ষা আন্দোলন কুয়াকাটা (উপরা) সদস্য সচিব আসাদুজ্জামান মিরাজ জানিয়েছে, খাজুইরা এলাকায় যেভাবে বর্জ্য ডাম্পিং করা হচ্ছে, তাতে পরিবেশের মারাত্মক ক্ষতি হচ্ছে। শহরের প্রবেশপথেই ময়লার ভাগাড় হওয়ায় প্রথম দর্শনেই পর্যটকরা বিরক্ত হয়ে পড়ছেন।

কুয়াকাটায় টোয়াক সভাপতি রুমান ইমতিয়াজ তুষার বলেন, উন্মুক্ত স্থানে বর্জ্য ফেলার কারণে রোগজীবাণু ছড়াচ্ছে, শহরের সুনাম নষ্ট হচ্ছে এবং হোটেল ব্যবসা সরাসরি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।

স্থানীয় চিকিৎসক ইসমাইল ইমন জানান, খোলা ময়লা-আবর্জনা থেকে রোগজীবাণু বাতাসে ছড়িয়ে শ্বাসকষ্ট, হাঁপানি, ফুসফুসের সমস্যা এমনকি ক্যান্সারের ঝুঁকি বাড়াচ্ছে।

কুয়াকাটা পৌরসভার দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রশাসক ও কলাপাড়া উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) ইয়াসীন সাদেক জানান, এডিপির অর্থায়নে প্রায় ৪৫ কোটি টাকার একটি প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়েছে। কোস্টাল টাউন ক্লাইমেট রেসিলিয়েন্ট প্রজেক্ট এর আওতায় নতুন ডাম্পিং গ্রাউন্ড, সড়ক সংস্কার ও ড্রেনেজ ব্যবস্থার উন্নয়ন করা হবে। দ্রুত প্রকল্প বাস্তবায়ন হলে এই সংকট নিরসন হবে বলে তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন।

পর্যটকরা মনে করছেন, দেশের গুরুত্বপূর্ণ পর্যটনকেন্দ্র কুয়াকাটাকে টিকিয়ে রাখতে হলে দ্রুত সড়ক মেরামত, নিরাপদ পানির নিশ্চয়তা, আইনশৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণ এবং আধুনিক বর্জ্য ব্যবস্থাপনা গড়ে তুলতে হবে। নইলে পর্যটনশিল্প মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে এবং স্থানীয় অর্থনীতি ধাক্কা খাবে।

NJ
আরও পড়ুন