ঢাকা
সোমবার, ১৭ নভেম্বর ২০২৫, ২ অগ্রহায়ণ ১৪৩২
ই-পেপার

যে শহরে ঝুঁকিপূর্ণভাবে তৈরি করা হচ্ছে দোতলা-তিনতলা ভবন!

আপডেট : ২৭ জুলাই ২০২৫, ০৪:৪৯ পিএম

দুই দশকের ব্যবধানে নগরায়ণ প্রসারিত হওয়ার ফলে ব্রাহ্মণবাড়িয়া পৌর শহরের বিভিন্ন এলাকায় গড়ে উঠেছে ছোট-বড় এবং মাঝারি আকারের অসংখ্য বহুতল ভবন। তবে এসব ভবন নির্মাণের ক্ষেত্রে বেশিরভাগ সময় মানা হয়নি বিল্ডিং কোড। এতে আগুনের ঝুঁকির পাশপাশি রয়েছে ভূমিকম্পের ঝুঁকিও। 

এমন পরিস্থিতিতে প্রতিদিন নতুন-নতুন ভবন নির্মাণ কাজ অব্যাহত রয়েছে। এ ক্ষেত্রে ব্রাহ্মণবাড়িয়া পৌর কর্তৃপক্ষ যেন অনেকটাই নিরব। তদারকি প্রতিষ্ঠান হিসেবে জেলা প্রশাসনেরও নেই দৃশ্যমান ভূমিকা।

এ অবস্থায় নাগরিক সংগঠনসহ সচেতন মহলের দাবি, বহুতল ভবন নির্মাণের ক্ষেত্রে পৌরসভা ও জেলা প্রশাসনকে আরও কঠোর হতে হবে।

সরেজমিনে ব্রাহ্মণবাড়িয়া পৌর এলাকার পাড়া মহল্লা ঘুরে দেখা যায়, ১৯৬৮ সালে প্রতিষ্ঠিত দেড়শো বছরের বেশি প্রাচীন ব্রাহ্মণবাড়িয়া পৌরসভায় ক্রমশ নগরায়ণের ফলে বাড়ছে পৌরসভার পরিধিও। ফলে প্রতিদিন বিভিন্ন পাড়া মহল্লায় গড়ে উঠছে বহুতল ভবন। আর এসব ভবন নির্মাণের ক্ষেত্রে মানা হচ্ছে না ভবনের কঠামো, স্থাপত্য কৌশল, ভিত্তি কৌশল, অগ্নি প্রতিরোধ ব্যবস্থা, উচ্চ গতির প্লাম্বিং ব্যবস্থা, গ্যাস-বিদ্যুৎ লাইনের ছাড়পত্র, আলো বাতাস চলাচলের ব্যবস্থা ও ইটিপি বাস্তবায়নসহ নানা নীতিমালা। এমন পরিস্থিতির মধ্যে বিভিন্ন পাড়া মহল্লায় রাজমিস্ত্রি দিয়ে কলাম ছাড়াই ঝুঁকিপূর্ণভাবে ইটের গাঁথুনির ওপর তৈরি করা হচ্ছে দোতলা-তিনতলা ভবন।

ব্রাহ্মণবাড়িয়া পৌরসভার তথ্যমতে, পৌর এলাকায় ৩০ হাজারের বেশি বাড়ির হোল্ডিং নম্বর রয়েছে। এর মধ্যে পৌরসভার নীতিমালা অনুযায়ী, ৬ তলা থেকে ১৪ তলা ভবনকে বহুতল ভবন হিসেবে ধরা হয়। আর ব্রাহ্মণবাড়িয়া পৌরসভায় এমন বহুতল ভবনের সংখ্যা অন্তত দেড় শতাধিক। এসব ভবনের কোনোটির ৬ তলা অনুমোদন নিয়ে ৯ তলা কিংবা ১০ তলা করা হয়েছে। এমন একাধিক নজির থাকলেও পৌর কর্তৃপক্ষ রয়েছে বরাবরের মতো নিরব। এতে করে বাড়ছে আগুনের পাশপাশি ভূমিকম্পের ঝুঁকি। এ ঘটনায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন সচেতন মহলসহ নাগরিক সমাজের প্রতিনিধিরা।

তরী বাংলাদেশের সভাপতি শামীম আহমেদ বলেন, ব্রাহ্মণবাড়িয়া শহরে দিনদিন ভবনের সংখ্যা বাড়ছে। এতে করে আমাদের মৃত্যু ঝুঁকিও বাড়ছে। আমরা বিভিন্ন সময় দেখেছি বিভিন্ন অভিযোগের প্রেক্ষিতে ভবনের নির্মাণ কাজ থামিয়ে দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু এর কিছুদিন পরে আবারও কাজ চলু হয়ে যায়।

এ ক্ষেত্রে আর্থিক লেনদেন থাকতে পারে। আমরা জানি, এই পুরো শহর ৩ জন ইঞ্জিনিয়ারের কাছে জিম্মি হয়ে আছে। তারাও বিভিন্ন সময় অনিয়মের সঙ্গে জড়িয়ে পড়ছে। এভাবে ভবন নির্মাণের কারণে ফায়ার সার্ভিসের গাড়ি, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর যানবাহন ঠিকঠাকভাবে ঢুকতে পারে না। আমরা চাই, পৌর কর্তৃপক্ষ যেন, এই ব্যাপারে আরও কঠোর হন।

শহরের কাজীপাড়ায় চারতলা ভবনের মালিক কালু মিয়া জানান, আমরা কোনো ইঞ্জিনিয়ারের সাথে যোগাযোগ করি নাই, আমাদের হেড রাজমিস্ত্রিই আমাদের বিল্ডিংয়ের কাজ সুন্দরভাবে করে দিয়েছে। বর্তমানে আরও কিছু কাজ বাকি আছে, যা চলমান।

রাজমিস্ত্রি সর্দার মোক্তাদির এর সাথে কথা হলে তিনি জানান, দীর্ঘ ৩০ বছর ধরে এই পেশায় যুক্ত আছি। অভিজ্ঞতা থেকেই আমি ৪/৫ তলা বিল্ডিং নির্মাণ কাজ করে দিই। আমাদের কোনো প্ল্যান লাগে না।

তবে প্ল্যান ছাড়া নির্মাণের ঝুঁকি রয়েছে কিনা- এমন প্রশ্নের জবাবে মোক্তাদির জানান, আসলে ঝুঁকি তো সব কাজেই আছে। ইঞ্জিনিয়ার দিয়ে যদিও আপনি কাজ করান, সেখানেও ঝুঁকি থাকবে। তবে এ যাবতকালে আমার কাজে কোনো সমস্যা হয়নি।

প্রকৌশলী আমিনুর রহমান জানান, আসলে প্ল্যান ছাড়া ইটের গাথুঁনির উপর এই শহরে অনেক ভবনই নির্মাণ হচ্ছে। এগুলো অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ। সামান্য ভূমিকম্পে এসব ভবনগুলো ধ্বসে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। ভবন নির্মাণকারীদের সচেতনতার অভাবে এই শহরও ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠছে। অপরিকল্পিতভাবে রাজমিস্ত্রি দিয়ে ভবন নির্মাণ বন্ধে সকলকে সচেতন হওয়ার আহ্বান জানান এই প্রকৌশলী।

এদিকে নানা সীমাবদ্ধতার কথা তুলে ধরে ব্রাহ্মণবাড়িয়া পৌরসভার প্রশাসক শংঙ্কর কুমার বিশ্বাস জানান, আমরা অবৈধ ভবনের বিরুদ্ধে দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য জেলা প্রশাসকের কাছে একজন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট চেয়েছি। শহরে যে নতুন ভবনগুলোর কাজ চলমান আছে, যদি তারা নীতিমালা না মানে তাহলে অব্যশই তাদের ব্যাপারে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ দিদারুল আলম বলেন, বিষয়টি আমার নজরেও পড়েছে। পৌরসভার অনুমোদন না নিয়েই ব্যাপক আকারে ভবন নির্মাণ করা হচ্ছে। যে ভবনগুলো হয়ে গেছে সেগুলোকে ভাঙার মতো যন্ত্রাংশ পৌরসভার নেই। তবু যে ভবনগুলো নতুন নির্মাণ করা হচ্ছে, সেগুলো যেন প্রাথমিক পর্যায়ে থাকা অবস্থায় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়, সে ব্যাপারে পৌর প্রশাসককে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। তবে অনুমোদন নিতে গেলে যেন কোনো সমস্যা না হয় সে ব্যাপারেও নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।

NJ
আরও পড়ুন