ঢাকা
সোমবার, ১৭ নভেম্বর ২০২৫, ২ অগ্রহায়ণ ১৪৩২
ই-পেপার

শাপলা ঘোরায় জীবনচাকা

আপডেট : ০৩ আগস্ট ২০২৫, ০৮:৪০ এএম

বর্ষার এই মৌসুমে বেচাবিক্রি বেড়েছে সবজি হিসেবে সুস্বাদু শাপলার। শাপলা দিয়ে মাছ রান্না কিংবা ভাজি করে খাওয়ার মজাই আলাদা। প্রাকৃতিক বিলেঝিলে কোনো প্রকার পরিচর্যা ছাড়াই বেড়ে উঠছে রসালো এই সবজি। অল্প পরিমাণ মসলা দিয়ে কম সময়ের মধ্যে ভাজি করা যায়। তাই শিশু থেকে বয়স্ক সবাই শাপলা ভাজি খেতে পছন্দ করেন। গ্রামের হাট-বাজার কিংবা ফেরিওয়ালাদের কাছ থেকে গৃহিণীরা শাপলা কিনে একটা মজাদার রেসিপি তৈরি করে নেন।

জেলা শহর থেকে শুরু করে উপজেলার প্রত্যন্ত গ্রামেও শাপলা বেচাবিক্রি প্রতিদিনের চিত্র। শাপলা আমাদের দেশের জাতীয় ফুল। তবে শাপলা ফুলের নিচের লম্ব লিকলিকে অংশটির আঁশ ছাড়িয়ে মানুষ সবজি হিসেবে ব্যবহার করে। আর সে কারণে বর্ষা মৌসুমে শাপলা নিয়ে একটা অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড গড়ে উঠেছে গোটা মুন্সীগঞ্জ জেলায়। এই শাপলা নিয়ে গড়ে উঠেছে পাইকারি ও খুচরা বাজার। মুন্সীগঞ্জের শাপলা প্রতিদিনই চলে যাচ্ছে ঢাকার যাত্রাবাড়ীর পাইকারি বাজারে। শাপলা বিক্রি করে জীবন-জীবিকা নির্বাহ করছে মুন্সীগঞ্জের সিরাজদীখান, লৌহজং ও শ্রীনগর উপজেলার বিভিন্ন এলাকার বহু পরিবার।

বছরের চার থেকে পাঁচ মাস এখানকার কৃষিজমি পানির নিচে থাকায় কৃষকের তেমন কোনো কাজকর্ম থাকে না। তাই এ খানকার অনেক কৃষক বিলঝিল থেকে শাপলা সংগ্রহ করে তা হাটে-বাজারে বিক্রি করে সংসার চালান। পুঁজি ছাড়া এ ব্যবসায় বিভিন্ন বয়সের লোক সময় দিচ্ছে। শ্রীনগর ইউনিয়নের গাদিঘাট বিল থেকে শাপলা সংগ্রহকারী জলিল মিয়া জানান, একেকজন কমপক্ষে ৭০ থেকে ৮০ মুঠো শাপলা সংগ্রহ করতে পারে।

পাইকাররা আবার সংগ্রহকারীর কাছ থেকে এসব শাপলা কিনে একত্র করে। সিরাজদীখানের রসুনিয়া, ইমামগঞ্জ তালতলায়, হাসাড়া, ছনবাড়ীর মোড় ও আড়িয়াল বিলের পাশে শাপলার পাইকারি ক্রয়কেন্দ্র রয়েছে। এখান থেকে শাপলা ক্রয় করে ঢাকার যাত্রাবাড়ীসহ বিভিন্ন পাইকারি বাজারে বিক্রি করে থাকে। 

ঢাকার পাইকার করিম মিঞা এ প্রতিবেদককে জানান, শাপলা সংগ্রহকারীদের কাছ থেকে একমুঠো শাপলা ২০ টাকা দরে ক্রয় করা হয়। তারপর গাড়িভাড়া গড়ে ৩ টাকা, লেবার ১ টাকা, আড়ত খরচ ২ টাকাসহ মোট ২৭ থেকে ২৮ টাকা খরচ পড়ে। ঢাকার যাত্রাবাড়ী আড়তে শাপলা বিক্রি হয় ৫০ থেকে ৬০ টাকা মুঠো। কোনো রকম পুঁজি ছাড়াই শাপলা বিক্রি করে জীবিকা নির্বাহ করছেন সিরাজদীখানসহ জেলার কয়েকশ পরিবার। বর্ষার এই মৌসুমে কৃষক ও অস্বচ্ছল মানুষ বেকার হয়ে শাপলা কুড়িয়ে তা বিক্রি করে থাকেন। সূত্র মতে, বর্ষায় ডুবে যাওয়া ধান, পাট ও ধঞ্চে ক্ষেতে শাপলা বেশি জন্মায়। এছাড়া জেলার খাল-বিলগুলোতেও শাপলা ফুল জন্মে থাকে। আষাঢ় থেকে শুরু করে ভাদ্র মাস পর্যন্ত পাওয়া যায় শাপলা।

শাপলা সংগ্রহকারীরা ভোরে নৌকা নিয়ে পানিতে ডুবে যাওয়া জমি ও বিলের মধ্যে ঘুরে ঘুরে শাপলা তুলতে থাকেন। এমন কয়েকজন শাপলা সংগ্রহকারী জানান, এ সময়ে একেকজন কমপক্ষে ৪০ থেকে সর্বোচ্চ ৭০ মোঠা (৭০-৮০ পিস শাপলায় ১ মোঠা ধরা হয়) সংগ্রহ করতে পারে। দিন শেষে ৪০০ টাকা থেকে ৮০০ টাকা আয় করে থাকেন তারা। বছরের ৪ মাস এ কাজ করেন তারা। সিরাজদীখানের রসুনিয়া, ইমামগঞ্জ, লতিব্দী ও তালতলায় আর শ্রীনগর উপজেলার হাসাড়াও আড়িয়াল বিলে পাইকারি ক্রয়কেন্দ্র রয়েছে। পাইকাররা পরে ঢাকার যাত্রাবাড়ী পাইকারি বাজারে নিয়ে বিক্রি করেন।

উপজেলার রসুনিয়া গ্রামের পাইকার সিরাজ মিয়া জানান, শাপলা সংগ্রহকারীদের কাছ থেকে প্রতিদিন প্রায় দেড় হাজার থেকে দুই হাজার মোঠা শাপলা ক্রয় করে থাকেন। সংগ্রহকারীদের কাছ থেকে এক মোঠা শাপলা ২০-৩০ টাকা দরে ক্রয় করেন তিনি। তারপর ট্রাক ভাড়া গড়ে ৩ টাকা, লেবার ১ টাকা, আড়ত খরচ ২ টাকাসহ ৩০ টাকার মতো খরচ পড়ে। এই বিষয়ে শ্রীনগর কৃষি কর্মকর্তা মোহসিনা জাহান তোরন জানান, শাপলা আসলে কোনো কৃষিপণ্যের আওয়াতাভুক্ত নয়, এটি প্রাকৃতিকভাবে কৃষিজমি ও পুকুর কিংবা ডোবায় জন্ম নেয়। এ বিষয়ে আমাদের কোনো পরামর্শ দেওয়ার সুযোগ হয়ে ওঠে না। আমরা কৃষকদের শাপলা বেশিদিন সংরক্ষণ করার পরামর্শ দিয়ে থাকি। তবে বেশির ভাগ শাপলা ঢাকায় বিক্রি হয়ে থাকে।

শাপলা তরকারি হিসেবে খুবই মজাদার খাবার হওয়ায় এর চাহিদা ক্রমেই বেড়ে চলছে বলে জানা গেছে। এছাড়া দেশে বর্ষার এই মৌসুমে শাপলার যেমন হাট বসছে, তেমনি বাড়ি বাড়ি ফেরি করে বিক্রি হচ্ছে শহরসহ জেলার প্রত্যন্ত অঞ্চলে। বাঙালির জাতীয় ফুল শাপলা- সেই শাপলা এখন বেশ জনপ্রিয় সবজি-তরকারি।

AHA
আরও পড়ুন