‘‘অভয়াশ্রম গড়ে তুলি, দেশি মাছে দেশ ভরি’’- প্রতিপাদ্যকে ধারণ করে গাজীপুর কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে (গাকৃবি) নানা আয়োজনে ‘জাতীয় মৎস্য সপ্তাহ (১৮-২৪ আগস্ট) ২০২৫’ উদযাপিত হয়েছে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের মাৎস্যবিজ্ঞান অনুষদের উদ্যোগে উদযাপিত এ মৎস্য সপ্তাহে মাছের পুষ্টিগুণ, মৎস্যসম্পদের সম্প্রসারণ, সংরক্ষণ ও এর টেকসই ব্যবহার নিশ্চিতপূর্বক মৎস্য শিল্পের অর্থনৈতিক গুরুত্ব তুলে ধরতেই এই বিশেষ দিনের আয়োজন। এ সপ্তাহকে ঘিরে দিনব্যাপী কর্মসূচিতে ছিল র্যালি, পোস্টার প্রদর্শনী, আলোচনা সভা ও পোনা অবমুক্তকরণ।

এ সপ্তাহকে উৎসবমুখর করে তুলতে মঙ্গলবার (১৯ আগস্ট) সকাল ১১টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাইস-চ্যান্সেলর প্রফেসর ড. জিকেএম মোস্তাফিজুর রহমানের নেতৃত্বে মাৎস্যবিজ্ঞান অনুষদের শিক্ষক-শিক্ষার্থী, কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বৃহৎ অংশগ্রহণে একটি বর্ণাঢ্য র্যালি বের করা হয়।
র্যালিটি মাৎস্যবিজ্ঞান অনুষদ থেকে শুরু হয়ে বিশ্ববিদ্যালয় পরিভ্রমণ করে অনুষদ চত্বরে গিয়ে শেষ হয়। এ সময় শিক্ষার্থীরা স্লোগানে মুখরিত করে মৎস্য সংশ্লিষ্ট নানা প্ল্যাকার্ড, ব্যানার, ফেস্টুন হাতে নিয়ে মাঝি, মৎস্যজীবী ও গবেষকের পোশাকে মৎস্যসম্পদের বহুমুখী ভূমিকা তুলে ধরেন।
র্যালি শেষে মৎস্যসম্পদের উপর একটি সংক্ষিপ্ত ও তাৎপর্যপূর্ণ আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়। এতে সভাপতিত্ব করেন মাৎস্যবিজ্ঞান অনুষদের ডিন প্রফেসর ড. মুর্শিদা খান।
র্যালি ও পোনা অবমুক্তকরণ কমিটির আহ্বায়ক প্রফেসর ড. মো. নুরুন্নবী মন্ডলের সঞ্চালনায় আলোচনা সভায় গাকৃবির উপাচার্য প্রফেসর ড. জিকেএম মোস্তাফিজুর রহমান প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থেকে সভাকে আরো প্রাণবন্ত করেন। এ সময় বিশেষ অতিথি হিসেবে গাকৃবির উপ-উপাচার্য প্রফেসর ড. এম. ময়নুল হক এবং ট্রেজারার প্রফেসর ড. মো. সফিউল ইসলাম আফ্রাদ উপস্থিত ছিলেন।

সংক্ষিপ্ত আলোচনা সভায় উপস্থিত ছিলেন বিভিন্ন অনুষদীয় ডিন, রেজিস্ট্রার, পরিচালক, প্রক্টর, শিক্ষক-শিক্ষার্থীবৃন্দ, প্রভোস্ট ও কর্মকর্তা-কর্মচারীবৃন্দ।
আলোচনার শুরুতে অনুষদীয় শিক্ষার্থী ইয়াসির আরাফাত মাহিন বক্তব্যে মৎস্যসম্পদের গুরুত্ব, সঠিক ব্যবস্থাপনার প্রয়োজনীয়তা এবং ভবিষ্যতের চ্যালেঞ্জ তুলে ধরে বাংলাদেশের মৎস্য চাহিদা পূরণে সক্রিয় ভূমিকা রাখার প্রত্যয় ব্যক্ত করেন। এরপর প্রো-ভিসি, ট্রেজারার, রেজিস্ট্রার, অনুষদীয় জ্যেষ্ঠ অধ্যাপকরা বক্তব্য প্রদান করেন।
বক্তব্যে তারা মাছের পুষ্টিগুণ, নিরাপদ মৎস্য উৎপাদন, দেশের মৎস্য শিল্পের সম্ভাবনা এবং এর অর্থনৈতিক গুরুত্ব নিয়ে আলোকপাত করেন। পরে প্রধান অতিথি উপাচার্য প্রফেসর ড. জিকেএম মোস্তাফিজুর রহমান গবেষণা ও দেশের অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে মৎস্য শিল্পের গুরুত্বের উপর আলোকপাত করে বক্তব্য প্রদান করেন।
উপাচার্য বলেন, পানি দূষণের জন্য প্রকৃতির সুস্বাদু অনেক দেশি মাছ আজ বিলুপ্তির পথে। তাই এ বিলুপ্তপ্রায় মাছের জাতসমূহ কীভাবে স্বাদু পানিতেও উৎপাদন করা যায় সেদিকে আমাদের অনুষদীয় মৎস্য গবেষকদের মনোযোগ দিতে হবে।
মৎস্যকে পুষ্টির অন্যতম প্রধান উৎস অ্যাখ্যা দিয়ে উপাচার্য আরো বলেন, ‘গাজীপুর কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় একটি গবেষণাভিত্তিক উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠান হিসেবে এ বিষয়টিকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে বিবেচনা করছে। আমরা মৎস্য উৎপাদন বৃদ্ধিতে আধুনিক প্রযুক্তি, উন্নত জাত এবং এর ব্যবস্থাপনার বৈজ্ঞানিক পদ্ধতি চালুর মাধ্যমে মৎস্যজীবীদের উন্নয়নের লক্ষ্যে নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছি।
এ সময় তিনি মৎস্যের সার্বিক রক্ষণাবেক্ষণ ও উন্নয়নের জন্য জিন ব্যাংক তৈরির আশ্বাস প্রদান করেন। আলোচনা শেষে বিশ্ববিদ্যালয়ের মাৎস্যবিজ্ঞান অনুষদের জলাশয়ে উপাচার্য সহযোগে রুই, কালিবাউশ, মৃগেল, সরপুটিসহ বিভিন্ন প্রজাতির পোনা অবমুক্ত করা হয় যা পরিবেশগত ভারসাম্য রক্ষা এবং জৈব বৈচিত্র্য সংরক্ষণের এক প্রতীকী প্রতিশ্রুতি হিসেবে বিবেচিত।
উল্লেখ্য, মৎস্য সপ্তাহকে আরো আনন্দময় করে তুলতে আগামী ২১ আগস্ট এক মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক সন্ধ্যার আয়োজন করা হয়েছে।
