নড়াইলের লোহাগড়ার আঞ্জুমান আরা কাঁদছেন আর বিলাপ করছেন, স্বামীকে হারিয়ে ৩টা সন্তান নিয়ে অনেক কষ্টে দিন কাটছিল। ভিটেটা চলে গেলো, ছেলেমেয়ে নিয়ে কই যাবো।
বুক ফাটা আর্তনাদে পাষণ্ডের মন গললেও বিন্দু মাত্র ছাড় দিতে নারাজ ক্ষুধার্ত মধুমতি। চোখের সামনেই নিমেষে শেষ সম্বলটুকু হারিয়ে পাগলপ্রায় লোহাগড়ার আমডাঙ্গা গ্রামের খুকি আঞ্জুমান আরা। তাদের সম্বল শুধু সন্তানদের নিয়ে এক অনিশ্চিত জীবনের সাথে দুইচোখ ভরা জল। আঞ্জুমান আরাদেরই শুধু নয়, একই গল্প মধুমতী পাড়ের অন্তত ৪৫টি গ্রামের কয়েক লাখ মানুষের।

মধুমতীর করাল গ্রাসে ফসলি জমি, স্কুল, মাদ্রাসা, কবরস্থান ও গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনাসহ নদীগর্ভে প্রতিনিয়ত বিলীন হচ্ছে শতশত বাড়িঘর। মাথা গোঁজার শেষ সম্বলটুকু হারিয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছে হাজারো পরিবার। এছাড়া ভাঙন ঝুঁকিতে নির্ঘুম রাত পার করছেন কয়েক লাখ মানুষ। তবে ভাঙন রোধে সীমিত বরাদ্দ দিয়ে সাধ্যমত চেষ্টার আশ্বাস জেলা পানি উন্নয়ন বোর্ডের।

এবারের শীত মৌসুম থেকেই চলছে মধুমতীর ভাঙন। তবে নদীতে পানি বাড়ার সাথে সাথে গত দেড় মাস ধরেই রুদ্র রূপ ধারণ করেছে মধুমতী। চোখের পলকেই নিমেষেই গিলে খাচ্ছে বাড়িঘর, ফসলি জমি, স্কুল-মাদ্রাসাসহ গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা। শেষ সময়ে ভিটেমাটি হারালেও দৈনন্দিন ব্যবহার্য জিনিসপত্র রক্ষার প্রবল চেষ্টা।

বিলীন হওয়ার পথে শত বছরের ওপারের অবশিষ্ট নড়াইলের অংশ। তীব্র ভাঙ্গনে অসহায় হয়ে পড়েছে হাজারো মানুষ। আর পানি বাড়ার সাথে সাথে প্লাবিত হয়ে নষ্ট হয়েছে কয়েক হাজার একর জমির ফসল।
জেলা পানি উন্নয়ন বোর্ডের তথ্য বলছে, মধুমতীর তীরবর্তী শিয়েরবর, মন্ডলভাগ, মাকড়াইল, রামকান্তপুর, দক্ষিণ রামকান্তপুর, রামচন্দ্রপুর, আমডাঙ্গা, কাশিপুর, আস্তাইল, ধানাইড়, করগাতি, ইতনা, লংকারচর, ডিগ্রিরচর, তেলকাড়া, মঙ্গলপুরসহ লোহাগড়া উপজেলার ৪৫টি গ্রামে মধুমতির ভাঙন রয়েছে কয়েক দশক ধরে।

আর কালিয়া উপজেলার নবগঙ্গা নদীর চোখ রাঙানিতে ভাঙন রয়েছে অন্তত ২৫টি গ্রামে। বিগত বছরগুলোর তুলনায় এবার অতিমাত্রায় নদীর পানি বৃদ্ধিতে তীরবর্তী অঞ্চলগুলোতে তীব্র ভাঙন দেখা গেছে। তবে চলতি বছরে মাত্র ৮টি পয়েন্টকে অতি ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে নির্ধারণ করেছে জেলা পানি উন্নয়ন বোর্ড।
গত ৩ বছরে ভাঙন রোধে জেলা পাউবো জরুরি আপদকালীন কাজ করেছেন প্রায় সাড়ে ৫ কি.মি.। এতে ব্যয় হয়েছে প্রায় ২২ কোটি টাকা। ভাঙন রোধে স্থায়ী তীর রক্ষা বাঁধ ও জিও ব্যাগ ফেলা স্বল্প দৈর্ঘ্যের অংশ টুকু রক্ষা পেলেও নদী তীরবর্তী জনপদ গিলে খাচ্ছে মধুমতী।
এ জনপদ রক্ষায় শুধুমাত্র জিও ব্যাগে সমাধান না খুঁজে স্থায়ী তীর রক্ষা বাঁধের দাবি স্থানীয়দের।
নড়াইল জেলা পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) নির্বাহী প্রকৌশলী অভিজিৎ কুমার সাহা বলেন, নড়াইল একটি নদী ভাঙনপ্রবণ জেলা। প্রতিবছরই এ অঞ্চলের মধুমতী ও নবগঙ্গার ভাঙন থেকে বাড়িঘর, গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা, ফসলি জমি রক্ষায় আমরা কাজ করে যাচ্ছি।
চলতি বছরেও ভাঙনকবলিত অতি গুরুত্বপূর্ণ ৮ স্থান নির্ধারণ করে জিও ব্যাগ ফেলে ভাঙন রোধে আমাদের কাজ চলমান রয়েছে। আর জেলায় প্রায় সাড়ে ১৩ কি.মি. এর জন্য প্রস্তাবনা পাঠানো হয়েছে, যেটির প্রক্রিয়া চলমান। সীমিত বরাদ্দ দিয়ে এ অঞ্চলের ভাঙন রোধে আমরা আন্তরিকতার সাথে সর্বোচ্চ চেষ্টা করে যাচ্ছি।
