মেহেরপুরে প্রতিনিয়ত বাড়ছে অ্যানথাক্স আক্রান্ত রোগী। সামাজিক সচেতনতা, গবাদি পশুর ভ্যাকসিন কার্যক্রম ও প্রশাসনের সঠিক পদক্ষেপের অভাবে কমানো যাচ্ছে না অ্যানথাক্সের প্রকোপ।
অসুস্থ্য পশু জবাই ও তার মাংস থেকে মানবদেহে ছড়িয়ে পড়ছে এই রোগ। ছড়িয়ে পরার কারণ হিসেবে প্রাণিসম্পদ বিভাগ ও স্বাস্থ্য বিভাগকে দুষছেন স্থানীয়রা। আর জনবল সংকটের অজুহাত প্রাণী সম্পদের।
জেলার স্বাস্থ্য বিভাগের তথ্যমতে, আক্রান্ত রোগীর ৯৭ ভাগই গাংনী উপজেলার। সরজমিনে গাংনী উপজেলার কাজীপুর ও মোটমুড়া ইউনিয়নের গ্রামগুলোতে দেখা যায়, প্রায় প্রতিটি বাড়িতে হানা দিয়েছে ব্যাকটেরিয়াজনিত রোগ অ্যানথ্রাক্স। অধিকাংশ সময় স্থানীয়ভাবে চিকিৎসা নিয়ে অবস্থা বেগতিক হলে সরকারি হাসপাতালের শরণাপন্ন হয় এ অঞ্চলের মানুষ। রোগাক্রান্ত পশুর মাংস খাওয়া ও এর সংস্পর্শে এ রোগে আক্রান্ত হলেও অনেকেই জানেন না এর ভয়াবহতা।

কাজীপুর গ্রামের আফাজউদ্দিন বাজারে মাংসের ব্যবসা করেন। রোগাক্রান্ত গরুর মাংস নাড়াচাড়া করা কারণে তার শরীরে প্রথমে ক্ষত সৃষ্টি হয়। পরে পরীক্ষা করে অ্যানথ্রাক্স রোগ ধরা পড়ে।
একই উপজেলার হাড়াভাঙ্গা গ্রামের মালেক মোল্লা জানান, তিনি বাজার থেকে গরুর মাংস কিনে আনেন। সেই মাংস নাড়াচাড়া করার কারণে তার শরীরে অ্যানথ্রাক্স ছড়িয়ে পড়ে।

ভ্যাকসিন প্রাপ্যতা নিয়ে প্রাণিসম্পদ বিভাগের প্রতি অভিযোগ এলাকাবাসীর। স্বাস্থ্য বিভাগের সচেতনতা কার্যক্রম ও অসুস্থ পশু জবাই ও বিক্রি রোধে নেই কোন পদক্ষেপ বলেও জানাচ্ছে স্থানীয়রা।
গাংনী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স মেডিক্যাল অফিসার ডা. ফারুক হোসেন জানান, গ্রাম্য চিকিৎসকের কাছে চিকিৎসা নিলে শরীরে ব্যাকটেরিয়ার স্পোর থেকে যায়, যা বিপদজনক। তাই এ ধরনের কোন লক্ষণ দেখা দিলেই হাসপাতালে আসার আহ্বান জানান তিনি।

গাংনী উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. মোত্তালেব আলী বলেন, গবাদী পশুকে শতভাগ ভ্যাকসিনেশনের আওতায় নিয়ে আসলে এ রোগের প্রাদুর্ভাব কমে যাবে। তবে জনবল সংকটের কথা বলছে প্রাণিসম্পদ বিভাগ।
মেহেরপুর সিভিল সার্জন ডা. একেএম আবু সাঈদ, চামড়ায় দেখা দিলেও ফুসফুস ও খাদ্যনালীতে অ্যানথ্রাক্স আক্রান্ত হলে মৃত্যেুর ঝুঁকি থাকে। সামাজিক সচেতনা তৈরির মাধ্যমে এটিকে নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। স্বাস্থ্য বিভাগের পক্ষ থেকে সচেতনতা কার্যক্রম চালু রয়েছে।

স্বাস্থ্য বিভাগের তথ্যমতে, মেহেরপুর জেলায় গেল ৮ মাসে ৪৬৪ জন অ্যানথাক্সে আক্রান্ত হয়েছেন।
