পদ্মা নদীর পানি বৃদ্ধি, চাঁপাইনবাবগঞ্জের নিম্নাঞ্চল প্লাবিত 

আপডেট : ১৩ আগস্ট ২০২৫, ০৭:২৭ পিএম

পদ্মা নদীর পানি বৃদ্ধি পেয়ে চাঁপাইনবাবগঞ্জের ৫টি ইউনিয়নের নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। পানিতে ডুবে গেছে রোপা, আউশ, ভুট্টাসহ শাক-সবজি আবাদ করা ৪০৩ হেক্টর জমি। এছাড়া ৬টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মাঠ ও শ্রেণিকক্ষে পানি প্রবেশ করায় ব্যাহত হচ্ছে পাঠদান।

প্লাবিত এই জনপদের মধ্যে রয়েছে চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর উপজেলার নারায়নপুর ইউনিয়ন ও আলাতুলী ইউনিয়ন এবং শিবগঞ্জ উপজেলার উজিরপুর ইউনিয়ন, পাঁকা ইউনিয়ন ও দূর্লভপুর ইউনিয়ন।

স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও সংশ্লিষ্টদের সাথে কথা বলে এসব তথ্য জানা গেছে।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর উপজেলার নারায়ণপুর ইউনিয়নের প্রায় ৬০০ ও আলাতুলি ইউনিয়নের প্রায় ৭০০ এবং শিবগঞ্জ উপজেলার উজিরপুর ইউনিয়নের সাড়ে ৪০০, পাঁকা ইউনিয়নের ২ হাজার ও দূর্লভপুর ইউনিয়নের প্রায় ৩ হাজার পরিবার পানিবন্দি হয়ে আছেন প্রায় মাস খানেক ধরে।

এ বিষয়ে আলাতুলী ইউনিয়নের আলী হোসেন জানান, পদ্মা নদীর পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় নিম্নাঞ্চলের এলাকাগুলো ডুবে গেছে। সেখানে বসবাস করা মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন। তাদের স্বাভাবিক জীবনযাত্রা ব্যাহত হচ্ছে। কয়েকটি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পানি ঢুকে যাওয়ায় পাঠদান বন্ধ হওয়ার উপক্রম হয়েছে। এছাড়া নদীর পানি বেড়ে যাওয়ার কারণে পদ্মায় আবারো ভাঙ্গণ দেখা দিয়েছে। ফলে নদী তীরবর্তী মানুষ ভাঙ্গণ আতঙ্কে দিন পার করছেন।

শিবগঞ্জ উপজেলার দুলর্ভপুর ইউনিয়ন জগন্নাথপুরের বাসিন্দা জিয়াউল ইসলাম বলেন, আমাদের এলাকার নিম্নাঞ্চলের আবাদি জমিগুলো পদ্মার পানিতে তলিয়ে গেছে। ফলে ধান ও অন্যান্য ফসল এখন পানির নিচে। এখানকার অনেক বাড়ির চারদিকেই পানি আর পানি। বিদ্যালয়গুলো রয়েছে পানির নিচে।

চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর উপজেলার নারায়ণপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. নাজির হোসেন বলেন, পদ্মার পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় এখানকার প্রায় ৬ শত পরিবার পানিবন্দি অবস্থায় আছেন। তাদের স্বাভাবিক জীবনযাত্রা এখন আর আগের মতো নেই। তবে এভাবে পানি বৃদ্ধি হতে থাকলে নিম্নাঞ্চলের বাড়িঘর ডুবে দিশেহারা হবে এখানকার জনগণ।

শিবগঞ্জ উপজেলার দূলর্ভপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মোহা. আজম আলী বলেন, ইউনিয়নের দোভাগী, ফিল্টেরহাট, নামোজগন্নাথপুর, বাদশাপাড়া এলাকার নিম্নাঞ্চলের জমিগুলো ডুবে গেছে। ইউনিয়নের প্রায় ৩ হাজার পরিবার পানিবন্দি। বিদ্যালয়ে পানি প্রবেশের কারণে শিশুরা স্কুলে যেতে পারছে না। তারা বাড়িঘর সামলাবে নাকি লেখাপড়া করবে কিছুই বোঝা যাচ্ছে না।

চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আনিসুল হক জানান, নদীর পানিতে ধান, ভুট্টা ও শাক-সবজির ৪০৩ হেক্টর জমি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। মানুষ পরিবার নিয়ে দিশেহারা অবস্থায় রয়েছে। ওপরে আকাশের বৃষ্টি আর নীচে পানি। ঘরে খাবার নেই। কারণ ফসলি জমি ডুবে গেছে।

এ বিষয়ে চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা তৌফিকুল ইসলাম বলেন, নিচু এলাকাসমূহের ৬টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মাঠ ও শ্রেণি কক্ষে পানি প্রবেশ করেছে। যে কারণে ওইসব বিদ্যালয়ে পাঠদান ব্যাহত হচ্ছে। আবার কোন কোন বিদ্যালয়ে বন্ধ রয়েছে পাঠদান। তবে আশপাশের উচুঁ জায়গা খুঁজে শিক্ষার্থীদের পাঠদান কার্যক্রম পরিচালনার চেষ্টা করছি আমরা।

তবে চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা ত্রাণ ও পুর্ণবাসন কর্মকর্তা মো. আমিনুল ইসলাম জানান, পদ্মা নদীতে পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় নিম্নাঞ্চলের প্রায় ৭ হাজার মানুষ পানিবন্দি রয়ছে। এতে শিবগঞ্জ উপজেলার নিম্নাঞ্চলের মানুষ সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত। এসব মানুষের তালিকা প্রস্তুতের জন্য নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। তালিকা পেলে যাচাই-বাছাই করে তাদের ত্রাণের আওতায় আনা হবে। 

NJ