কারখানা আধুনিকায়নের কথা বলে আখ মাড়াই বন্ধ থাকার চার বছর পর আবারও চালু হচ্ছে গাইবান্ধার রংপুর চিনিকল।
জানা গেছে, গাইবান্ধার একমাত্র কৃষি ভিত্তিক ভারী শিল্পকারখানা গোবিন্দগঞ্জ উপজেলার মহিমাগঞ্জের রংপুর চিনিকল। দীর্ঘদিনের লোকসান কমাতে আধুনিকায়নের মাধ্যমে লাভজনক করার কথা বলে ২০২০ সালের ডিসেম্বরে চিনিকলটির মাড়াই কার্যক্রম বন্ধ করা হয়। এতে করে প্রায় এক হাজার শ্রমিক-কর্মচারী ও কর্মকর্তা এবং অর্ধলক্ষাধিক আখ চাষি ছাড়াও বিভিন্নভাবে মিলের সাথে জড়িত লক্ষাধিক মানুষের জীবিকার চাকা বন্ধ হয়ে যায়। দীর্ঘদিন থেকে মানবেতর জীবনযাপন করছেন তারা।

তবে গেল বছর ১৫ ডিসেম্বর চিনিকলটির মাড়াই কার্যক্রম পুনরায় শুরুর ঘোষণার সরকারি সিদ্ধান্তের খবরে আখচাষিসহ সর্বস্তরের মানুষের মাঝে বইছে আনন্দের বন্যা। মিলের নিজস্ব খামারের জমির পাশাপাশি আখ চাষিরা প্রস্তুতি নিচ্ছেন আখ চাষে।
পুনরায় চিনিকলটি চালুর সরকারি সিদ্ধান্ত দ্রুত বাস্তবায়নের দাবি আখ চাষি, স্থানীয় ও শ্রমিক নেতাদের।
সরেজমিনে দেখা গেছে, দীর্ঘ সময় বন্ধ থাকায় ৩৫ একর বিশাল আয়তনের কারখানার চত্বর ভরে গেছে জঙ্গলে। খোলা আকাশের নিচে অযত্ন অবহেলায় পড়ে থাকা আখ পরিবহনের যানবাহনগুলোও ধ্বংসের পথে। কোটি কোটি টাকা মূল্যের যন্ত্রপাতিতে মরিচা ধরে নষ্ট হচ্ছে।

মিল এলাকার বাসিন্দা নজরুল ইসলাম জানান, হাজারো মানুষের এক সময়ের জীবিকার কেন্দ্রস্থলের প্রবেশপথ এবং মিলে আখ সরবরাহের জন্য শত শত সারিবদ্ধ গাড়ির বিশাল প্রাঙ্গণটি এখন গো-চারণভূমিতে পরিণত হয়েছে।
স্থানীয় আখ চাষী হাবিবুর রহমান জানান, নদী এলাকার একরের পর একর জমি আখ ছাড়া কোনো ফসল না হওয়ায় দীর্ঘদিন থেকে পরিত্যাক্ত পড়ে আছে জমিগুলো। আবারও মিলটি হলে এসব জমিতে আখ চাষ করে স্থানীয় কৃষকরা অধিক লাভবান হবেন।
রংপুর চিনিকল শ্রমিক কর্মচারী ইউনিয়নের সভাপতি মো. আবু সুফিয়ান সুজা জানান, দীর্ঘদিন পর আওয়ামী লীগ সরকারের কুদৃষ্টিতে বন্ধ মিলটি আবারো চালু হলে অনেক বেকার কর্মচারীর কর্মসংস্থান হবে। এর আগেও মিল চালুর এ রকম আশ্বাস দেয়া হয়েছিল তাই আশ্বাস নয় দ্রুত মিলটি চালু করতে হবে।

রংপুর চিনিকলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মাসুমা আকতার জাহান জানান, বন্ধ ছয়টি চিনি কলের মধ্যে রংপুর চিনিকল তৃতীয় ধাপে চালুর হওয়ার সম্ভবনা রয়েছে। মিলটি চালু হলে পরিত্যাক্ত বিপুল পরিমাণ জমির ব্যবহারসহ এ এলাকার অর্থনৈতিক অবস্থা আবারও পরিবর্তন হবে। সে লক্ষ্য নিয়ে আখ চাষ বাড়ানোসহ সার্বিক প্রস্তুতি নেয়া হচ্ছে।
১৯৫৭-৫৮ মৌসুম থেকে আখ মাড়াইয়ের মাধ্যমে চিনি উৎপাদন শুরু হয় মিলটি। ২০২০-২১ আখ মাড়াই মৌসুম শুরুর সব প্রস্তুতি সম্পন্ন করলেও শেষ মুহূর্তে বন্ধ করা হয় মাড়াই কার্যক্রম।
