ঢাকা
সোমবার, ০৮ ডিসেম্বর ২০২৫, ২৩ অগ্রহায়ণ ১৪৩২
ই-পেপার

পরিত্যক্ত ভবনে চলছে ডাক অফিসের কার্যক্রম

আপডেট : ১২ জুলাই ২০২৪, ১২:৩৮ পিএম

ফেঞ্চুগঞ্জ অর্থনৈতিক দিক থেকে সিলেটের গুরুত্বপূর্ণ উপজেলা এটি। উপজেলার প্রধান ডাকঘরের আওতাধীন ৫টি ডাকঘর রয়েছে। এরমধ্যে একটি মানিককোনা ডাকঘর। এটি উত্তর ফেঞ্চুগঞ্জ ইউনিয়নে অবস্থিত। তবে দূর থেকে দেখতে এটাকে ঠিক ডাকঘর মনে হবে না। দূর থেকে দেখে এটি একটি পরিত্যক্ত স্থাপনা বলেই মনে হবে। কৌতূহল বশত কাছে গেলে দেখা যায় এর সামনে লেখা মানিককোনা ডাকঘর। এটি ১৯৫৫ সালে মঈজ উদ্দিন আহমেদ প্রতিষ্ঠা করেন। দেশের অন্য সব কার্যালয়ের ভবন মেরামত, সংস্কার কাজ হলেও ব্যতিক্রম শুধু ডাকঘরে, ফলে এই জরাজীর্ণ ডাকঘরেই চলে কার্যক্রম। কার্যালয়টি বন্ধ থাকার কারণে সেখানে কর্মরত কাউকে পাওয়া যায়নি।

স্থানীয় বাসিন্দাদের সাথে কথা হলে তারা জানান, একটা সময় সরকারি ও ব্যক্তিগত চিঠিপত্র আদান-প্রদানের অন্যতম মাধ্যম ছিল এটি। তবে সময়ের সাথে সাথে জৌলুস হারিয়েছে এই প্রতিষ্ঠানটি। আগের মতো আর চিঠি আদান-প্রদান হয় না এখানে। মাঝে মধ্যে এক-দুটো চিঠি আসে, তাও সেটি কালে ভদ্রে। ঝুঁকিপূর্ণ ভবন থাকার কারণে প্রতিদিন খোলাও থাকে না এ কার্যালয়টি। তা ছাড়া বৃষ্টি বা বন্যা আসলেই এই কার্যালয়টি জলমগ্ন হয়ে যায়।

মানিককোনা গ্রামের প্রবীণ রহিম উদ্দিন বলেন, মুক্তিযুদ্ধের আগে এটি প্রতিষ্ঠা হয়েছিল। এরপর আর কোনো সংস্কার কাজ হয়নি। বর্তমানে জরাজীর্ণ অবস্থায় পড়ে আছে। নামমাত্র ডাকঘর, এখানে কোনো কার্যক্রম পরিচালনা করার মতো অবস্থা নেই। চিঠিপত্রও আসে না। আগে দেখেছি অনেক সরকারি চিঠিপত্র এখান থেকে সংগ্রহ করতেন। এখন আর সেটা হয় না।

একই গ্রামের মজির আলী বলেন, একসময়ে গুরুত্বপূর্ণ চিঠিপত্র আদান-প্রদানের মাধ্যম ছিল এই ডাকঘরটি। তবে এখন আর আগের সময় নেই। সরকারি এই প্রতিষ্ঠান দিনে দিনে যেন কোথায় হারিয়ে যাচ্ছে। আমরা এই ডাকঘর পুনঃসংস্কারের দাবি জানাই।

মানিককোনা ডাকঘরের পোস্টম্যান মো. নূরুল ইসলাম বলেন, অফিসের প্রয়োজনীয় কাগজপত্র কাছের একটি বাড়িতে রাখা হয়েছে। কিছু নিজের বাড়িতেও নিয়েছি। এই ডাকঘরে বিদ্যুৎ সংযোগ নেই। অফিস করার মতো অবস্থা এখানে নেই। আমরা এখানে দুইজন কর্মরত রয়েছি। প্রায় প্রতিদিন দুই থেকে তিনটি চিঠি আসে, সেগুলো সময়মতো পৌঁছে দেওয়ার চেষ্টা করি।

মাহমুদ উস সামাদ-ফারজানা চৌধুরী মহিলা স্কুল অ্যান্ড কলেজের অধ্যক্ষ মো. আব্দুল জলিল বলেন, পূর্বে যোগাযোগের প্রধান মাধ্যম ছিল মানিককোনা ডাকঘর। শুধু যে যোগাযোগ তা নয়, মানি অর্ডার এসেছে। দেশের এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তে গেছে। কয়েকমাস পর থেকে আমাদের অনেক আত্মীয়-স্বজন প্রবাস থেকে চিঠি পাঠাতেন। সেগুলোর জন্য আমরা অপেক্ষায় থাকতাম। প্রত্যেকদিন ডাকঘরের সামনে ভিড় থাকত। এখানের কেউ না কেউ প্রতিদিন আসতো। এটি একটি আবেগের জায়গা ছিল। বর্তমানে আধুনিকতার সাথে পেরে উঠতে পারছে না ডাক বিভাগ। এর একটি উদাহরণ এই ডাকঘর। দীর্ঘদিন থেকে সংস্কার কাজ না করানোর কারণে এটি অকেজো হয়ে পড়েছে। সংশ্লিষ্ট যারা আছেন এটি সংস্কারের উদ্যোগ না নিলে কয়েকদিন পর আর এটার অস্তিত্ব খোঁজে পাওয়া যাবে না।

উত্তর ফেঞ্চুগঞ্জ ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আফজাল হোসাইন বলেন, আমরা বিষয়টি নিয়ে বার বার ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছে। এখন পর্যন্ত কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়নি। বিষয়টি নিয়ে আমি আবারও উপজেলা সমন্বয় কমিটির সভায় উপস্থাপন করব।

ফেঞ্চুগঞ্জ উপজেলা পোস্টমাস্টার মদন মোহন দাস বলেন, মানিকোনা ডাকঘরে এখন দুইজন কর্মরত রয়েছেন। দীর্ঘদিন থেকে সংস্কার কাজ না হওয়ার কারণে এই ডাকঘরের এই অবস্থা হয়েছে। বৃষ্টি বা বন্যার পানি ডাকঘর জলমগ্ন হয়ে যায়। বিষয়টি আমরা ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানালেও সংস্কারে কোনো পদক্ষেপ এখনো নেওয়া হয়নি। অধিদপ্তর থেকে বরাদ্দ আসলে সংস্কার কাজ করা হবে। ডাকঘরের ভেতরে যেসব চিঠিপত্র রয়েছে সেগুলো সংরক্ষণের জন্য দায়িত্বপ্রাপ্তদের নির্দেশনা দেওয়া রয়েছে, তারা সেভাবে কাজ করছে। চিঠিপত্র অনেকে কার্যালয় থেকে বাড়িতে নিয়ে যায়। উপজেলার প্রধান ডাকঘরসহ উপজেলায় ছয়টি ডাকঘর রয়েছে। এরমধ্যে বন্যার পানিতে জলমগ্ন হয়ে রয়েছে চারটি।

SM/FI
সর্বশেষপঠিত