ঢাকা
মঙ্গলবার, ১৮ নভেম্বর ২০২৫, ২ অগ্রহায়ণ ১৪৩২
ই-পেপার

সিলেট নগরে মশক নিধন কাজে ভাটা

আপডেট : ১১ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০৫:৫৫ পিএম

সিলেট সিটি কর্পোরেশন এলাকায় মশা নিধন কার্যক্রমে ভাটা পড়েছে। বেশ কিছুদিন থেকেই নগর এলাকার কোথাও মশক নিধন কর্মীকে দেখা যায়নি। ফলে বাসা-বাড়ি থেকে শুরু করে ব্যবসা—প্রতিষ্ঠান অফিস আদালতে আশঙ্কাজনক হারে বেড়েছে মশার উপদ্রব। বিকেল হলেই নগরীর ড্রেন, নালা, ছড়ায় অসংখ্য মশা দেখা যায়। এসব নিয়মিত পরিষ্কার না করা ও মশা নিধনের ওষুধ না ছিটানোকে দায়ী করছেন নগরীর বাসিন্দারা। 

তারা বলছেন, নগরীতে মেয়র ও বেশিরভাগ কাউন্সিলর না থাকা ও কার্যক্রম নিয়মিত তদারকি না করার ফলে মশক নিধনে কর্মীরা কাজ করছেন না, এতে মশার উপদ্রব বেড়েছে।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, সিলেট সিটি কর্পোরেশন ২৭টি ওয়ার্ড নিয়ে গঠিত হলেও কিছু এলাকা সিটির সাথে যুক্ত করা হয়। বর্তমানে সিটির ৪২টি ওয়ার্ড রয়েছে। সেজন্য মশক নিধন কার্যক্রম পরিচালনা করতে কিছুটা বেগ পেতে হচ্ছে। এদিকে মশক নিধন কার্যক্রমের জন্য ১৫ দিন পরপর ফগার মেশিনে ওষুধ স্প্রে করার কথা রয়েছে, এজন্য সব মিলিয়ে তাদের ৯০ জন কর্মী প্রয়োজন হয়। সেসব কর্মীদের দিন প্রতি পাঁচশত টাকা করে মজুরি দেওয়া হয়। এভাবেই মশা নিধনের কার্যক্রম পরিচালনা করে আসছে সিসিক। তবে যাদের দিয়ে কাজ করানো হয় তারা সবাই অস্থায়ীভাবে কাজ করেন, সেজন্য তারা পরের বার আর কাজ করতে চান না। এ নিয়ে সিসিক কর্তৃপক্ষ বলছে তারা যেহেতু দৈনিক মজুরিতে কাজ করে থাকেন সেক্ষেত্রে অনেক কর্মী কাজে ফাঁকি দেন।

এদিকে মশক নিধন কার্যক্রমের কর্মীদের কিছু ওয়ার্ডে নগর ভবনের দায়িত্বশীলরা ও দূরবর্তী কিছু ওয়ার্ডে কাউন্সিলরদের নির্দেশনা অনুযায়ী কাজ করানো হয়। কিন্তু গত কয়েকমাসে - সিটি এলাকায় কাউকে মশক নিধন স্প্রে করতে দেখেননি স্থানীয়রা। এতে পূর্বের যেকোনো সময়ের তুলনায় স্থানীয়রা বেশি ভোগান্তিতে পড়েছেন। মশার যন্ত্রণায় অতিষ্ঠ হয়ে গিয়েছেন তারা। 

সিটি কর্পোরেশনের সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, মশক নিধন কার্যক্রম পরিচালনা করার জন্য প্রায় দুই কোটি টাকার বাজেট ধরা হলেও, অর্থ বছরে সেই বাজেটের টাকা সম্পূর্ণ খরচ হয় না। গত ২৩-২৪ অর্থ বছরের বাজেট দুই কোটি ধরা হয়েছে এরমধ্যে ৩০ থেকে ৪০ লাখ টাকা খরচ করা হয়েছে। 

কুয়ারপাড় এলাকার বাসিন্দা মোসাব্বির আহমেদ বলেন, সন্ধ্যা হলেই মশার যন্ত্রণায় ঘরে-বাহিরে থাকা যায় না। দোকান থেকে কয়েল কিনে আনলেও সেই মশা মারা যায় না। সিসিকের অবহেলার কারণে এই অবস্থা হয়েছে। নগরীতে যেসব ছড়া, নালা, ড্রেন রয়েছে তারা সেগুলো নিয়মিত পরিষ্কার করেন না। এর কারণে যেখানে প্রতিদিন অসংখ্য মশা জন্ম নেয়। এজন্য সিসিকের বর্জ্য ব্যবস্থাপনাসহ নিয়মিত মশা নিধন করার জন্য স্প্রে করতে হবে।

কুয়ারপাড় এলাকার ব্যবসায়ী মামুন আহমেদ বলেন, সন্ধ্যার পর থেকে মশার যন্ত্রণায় ব্যবসা করা দায় হয়ে যায়। নিয়মিত কয়েল জ্বালালেই মশা যায় না। তাছাড়া কয়েল জ্বালানোর কারণে শ্বাস-প্রশ্বাসে সমস্যাও হয়। নগর কর্তৃপক্ষ যদি নিয়মিত ফগার মেশিন দিয়ে ঔষধ স্প্রে করে তাহলে মশার প্রকোপ কিছুটা কমত।

নিয়মিত মশক নিধনে ঔষধ ছিটানো হচ্ছে না বিষয়টি স্বীকার করে সিলেট সিটি কর্পোরেশনের প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. মো. জাহিদুল ইসলাম বলেন, মশক নিধন কার্যক্রম যেভাবে পরিচালনা করার কথা রয়েছে সেভাবে হচ্ছেনা। এই মুহূর্তে ওয়ার্ডগুলোতে একেবারেই কাজ হচ্ছে না। তবে এপ্রিলের পর থেকে আমরা ডেঙ্গু প্রতিরোধে নিয়মিত অভিযান পরিচালনা করে আসছি। বিভিন্ন ওয়ার্ডে ১৫ জন সুপারভাইজার ও ১৫ জন ঔষধ ছিটানোর জন্য কর্মী নিয়মিত কাজ করে যাচ্ছে। এখন পর্যন্ত প্রায় দেড় হাজার বাসা-বাড়িসহ বিভিন্ন জায়গায় এডিস মশার লার্ভা খোঁজে অভিযান পরিচালনা করা হয়েছে।

ফগার মেশিনে মশক নিধন ওষুধ স্প্রে প্রসঙ্গে তিনি বলেন, নিয়মিত ঔষধ স্প্রে করার জন্য যে জনবল প্রয়োজন তা আমাদের কাছে নেই। এজন্যে প্রতিটি এলাকায় পনেরো দিন পর পর ঔষধ স্প্রে করার কথা থাকলেও সেটি হচ্ছে না। তবে আমরা খুব শীঘ্রই মশক নিধন কার্যক্রম পরিচালনা করব। এই কার্যক্রম পরিচালনা করার জন্য স্থায়ী কর্মী নিয়োগের পরিকল্পনা রয়েছে আমাদের।

তিনি আরও বলেন,  মশক নিধন স্প্রে না হলেও ডেঙ্গু প্রতিরোধ করতে আমাদের কার্যক্রম অব্যাহত রয়েছে। পাশাপাশি আমরা নগরবাসীকে সচেতন করার চেষ্টা করছি। এখন পর্যন্ত কিন্তু সিটি এলাকায় কেউ ডেঙ্গু আক্রান্ত হননি।

AHA/WA
আরও পড়ুন