হাদিকে হত্যা: ভারতের যেখানে আছে অভিযুক্ত ফয়সাল

আপডেট : ১৯ ডিসেম্বর ২০২৫, ০২:১৩ পিএম

ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র শরিফ ওসমান হাদিকে গুলি চালিয়ে ভারতে পালিয়ে যায় প্রধান অভিযুক্ত ফয়সাল করিম মাসুদ। বর্তমানে সে দেশটির মহারাষ্ট্রে অবস্থান করছে বলে জানা গেছে।

গোয়েন্দা তথ্য বলছে, গুলি করে হত্যাচেষ্টার ১২ ঘণ্টার মধ্যেই দেশ ছাড়ে মূল অভিযুক্ত ফয়সাল। পরিকল্পনা অনুযায়ী গায়েব করা হয় গুরুত্বপূর্ণ আলামতও।

পুলিশের হাতে গ্রেপ্তার হওয়া ফিলিপের দুই সহযোগীর বক্তব্য অনুযায়ী, ভুটিয়াপাড়া সীমান্ত দিয়ে ফয়সাল ও তার সহযোগী ভারতে পালিয়ে যায়।
 
শ্যুটার ফয়সালের ফোনের আইপি অ্যাড্রেস অনুযায়ী বুধবার তার অবস্থান ছিল মহারাষ্ট্রে। সে ভারতের রিলায়েন্স কোম্পানির একটি সংযোগ ব্যবহার করে যোগাযোগ রক্ষা করছে। 
 
এদিকে প্রধান দুই আসামি পলাতক থাকলেও তদন্তে পুরো হত্যাকাণ্ডের নকশা সামনে এসেছে। গত জুলাইয়ে দেশে ফিরে ফয়সাল কবির, কামাল, রুবেল ও মাইনুদ্দিনদের নিয়ে কিলিং মিশনে নামে। তারা সবাই কার্যক্রম নিষিদ্ধ আওয়ামী লীগ ও এর অঙ্গসংগঠনের নেতা বলে তদন্তে উঠে এসেছে।
 
কিলিং মিশন যেভাবে পরিচালিত হয়
গোয়েন্দা তথ্য বলছে, গত ৪ ডিসেম্বর রাত ৮টা ১৮ মিনিটে বাংলামোটরের ইনকিলাব কালচারাল সেন্টারে আসে ফয়সাল ও তার সহযোগী কবির। প্রায় ছয় মিনিটের সেই বৈঠকটি ছিল মূলত হাদির সঙ্গে ঘনিষ্ঠতা তৈরির প্রথম ধাপ। বৈঠকে ফয়সাল হাদির সঙ্গে কাজ করার প্রস্তাব দেয়। এরপর ৯ ডিসেম্বর রাতে আবারও কালচারাল সেন্টারে আসে ফয়সাল। এবার তার সঙ্গে ছিল না কবির, নতুন সঙ্গী ছিল আলমগীর। ওই বৈঠকে আলোচনার বিষয় ছিল নির্বাচনী প্রচারণার পরিকল্পনা। সেখান থেকেই হাদির টিমে ঢুকে পড়ে ফয়সাল। পরদিন ১২ ডিসেম্বর সেগুনবাগিচায় হাদির প্রচারণায় সরাসরি অংশ নেয়। 
 
প্রচারণায় অংশ নেয়ার পরই হাদিকে হত্যার পরিকল্পনা চূড়ান্ত করে ফয়সাল। মিশন বাস্তবায়নের জন্য নরসিংদী, সাভার, মানিকগঞ্জসহ বিভিন্ন এলাকায় রেকি করে সে। ১১ ডিসেম্বর মিশন বাস্তবায়নের প্রস্তুতিতে ওঠে পশ্চিম আগারগাঁওয়ে বোনের বাসায়। হামলার দিন ভোরে উবারে করে যায় হেমায়েতপুরের একটি রিসোর্টে।

রিসোর্টের সিসিটিভি ফুটেজে দেখা যায়, শুক্রবার ভোর ৫টা ২২ মিনিটে ফয়সাল ও আলমগীরের গাড়ি গ্রিন জোন রিসোর্টে প্রবেশ করে। সেখানে আগে থেকেই অবস্থান করছিল ফয়সালের বান্ধবী মারিয়া ও তার বোন। সেখানে হাদির একটি ভিডিও বান্ধবীকে দেখিয়ে ফয়সাল জানায়, সে হাদির মাথায় গুলি করার পরিকল্পনা করেছে এবং এতে দেশে আলোড়ন সৃষ্টি হবে। এ কারণে ঘটনার পর তার সঙ্গে সব ধরনের যোগাযোগ বন্ধ রাখার নির্দেশ দেয় ফয়সাল। 

পরে উবারের গাড়িতে করে বান্ধবীকে বাড্ডায় নামিয়ে দেয় সে। বেলা ১১টা ৫ মিনিটে আগারগাঁওয়ের বাসা থেকে মোটরসাইকেলে বের হয় ফয়সাল ও আলমগীর। তারা সরাসরি যায় হাদির সেগুনবাগিচার প্রচারণায়। সকাল পৌনে ১২টার দিকে সেখানে পৌঁছায় তারা। প্রচারণা শেষে দুপুর ১২টা ২২ মিনিটে হাদি মতিঝিলের উদ্দেশ্যে রওনা হলে ফয়সালরা পেছন থেকে তার অটোরিকশা অনুসরণ করতে থাকে।
 
দুপুর ১২টা ৫০ মিনিটে হাদিকে বহন করা অটোরিকশা মতিঝিলের জামিয়া দারুল উলুম মসজিদের সামনে পৌঁছায়। আলমগীর মোটরসাইকেল পার্ক করলে দুজন নেমে আবারও প্রচারণায় যুক্ত হয়। মতিঝিলের দারুল উলুম মসজিদে জুমার নামাজ পড়েন হাদি। নামাজ শেষে সেখানে প্রচারণা করার কথা ছিল। আর সেই প্রচারণায় যুক্ত হয়েছিল অভিযুক্তরা। নামাজ শেষে দুপুর ২টা ১৬ মিনিটে হাদি সেখান থেকে রওনা হলে ফয়সালরাও পিছু নেয়। উল্টো পথে মতিঝিল শাপলা চত্বর হয়ে দৈনিক বাংলা মোড়ে ডান দিকে ঘুরে পল্টনের বক্স কালভার্ট সড়কে ঢুকে পড়ে তারা। প্রায় আড়াই ঘণ্টা ফাঁকা জায়গা খুঁজে বেড়ানোর পর দুপুর ২টা ২৪ মিনিটে খুব কাছ থেকে হাদিকে লক্ষ্য করে গুলি ছোড়ে ফয়সাল।

AHA
আরও পড়ুন