চুয়েট উপাচার্যের বিরুদ্ধে যে কারণে ফুঁসে উঠেছিল শিক্ষার্থীরা

আপডেট : ১৭ আগস্ট ২০২৪, ০৪:১৮ পিএম

চট্টগ্রাম প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ( চুয়েট)পঞ্চম উপাচার্য হিসেবে ড. রফিকুল আলম নিয়োগ পায় ২৭ এপ্রিল ২০১৬ তারিখে। ২৭ এপ্রিল ২০১৬ তারিখ থেকে ১৪ আগস্ট ২০২৪ তারিখ পর্যন্ত দুই মেয়াদে চুয়েটের উপাচার্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করছিলেন। তার আগে তিনি ৬ মার্চ ২০১৩ তে মার্চ তারিখে উপ- উপাচার্য হিসেবে নিয়োগ পেয়েছিলেন।এবং ১৫ ই এপ্রিল ভারপ্রাপ্ত উপাচার্যের দায়িত্ব পেয়েছিলেন।

গত ১৩ আগস্টে (মঙ্গলবার) সকল সাধারণ শিক্ষার্থীরা ৩ দফা দাবি জানায়। গত ১৪ আগষ্ট শিক্ষার্থীদের দাবির মুখে পদত্যাগ করেন। সম্প্রতি দেশে চলমান ছাত্র আন্দোলনে তার কার্যক্রমে ক্ষুব্ধ হয়ে তার বিরুদ্ধে পদত্যাগের দাবি জানায়। তবে শিক্ষার্থীেদের এই ক্ষোভ একদিনের নয়।

গত ১৯ জুলাই রাতে শিক্ষার্থীদের জোরপূর্বক হল থেকে বের করে শিক্ষার্থীদের জীবনের ঝুঁকিতে ফেলে দেন। সেদিন রাতে বিশ্ববিদ্যালয়ের সিন্ডিকেট সভার এক জরুরি মিটিংয়ে সিদ্ধান্ত নেয়া হয় রাতের মধ্যেই হল থেকে শিক্ষার্থীদের বের করতে হবে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন শিক্ষক বলেন, সেইদিনের সভায় প্রায় সব শিক্ষক শিক্ষার্থীদের বের করে দেওয়ার পক্ষে না থাকলেও উপাচার্যের একক ইচ্ছায় এই সিদ্ধান্ত নেন।

সভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী রাত ১০টা ৩০ মিনিটে প্রতিটি হলে-হলে গিয়ে শিক্ষার্থীদের জানিয়ে দেওয়া হয় ১১টার মধ্যেই ছাড়তে হবে হল। শিক্ষার্থীদের জানার ইচ্ছে ছিল এত রাতে তারা যাবে কোথায়, তার ওপর রাত ১২টা বাজলেই শুরু হবে কারফিউ। ঐ অবস্থায় শিক্ষকরা হল ছড়াতেই হবে এটাই প্রশাসনের সিদ্বান্ত। শিক্ষকরা আরও জানান, ঢাকায় যাওয়ার জন্য ৩ টি বাস দেওয়া হবে। তাছাড়া শহরে যারা যাবে তাদের জন্য আলাদা বাস দিবে। বাসে তুলে শিক্ষার্থীদের হাতে একটি কাগজের টুকরো দিয়ে বলা হয় এটি দিয়ে কারফিউতে পুলিশ পাস পাওয়া যাবে। সাথে পুরো পথ জুড়ে শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তায় পুলিশের প্রোটেকশন থাকবে। চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটনের একজন পুলিশের নাম্বারও দেওয়া হয়।

ঢাকায় যাওয়ার বাস ৩টির জায়গায় দেওয়া হয় ২টি। নিরুপায় হয়ে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে শিক্ষার্থীরা বাসে উঠেন। সাথে ছিল না পুলিশ প্রোটেকশন। কুমিল্লা পর্যন্ত গিয়ে অনেকেই নেমে যাওয়ায় একটি বাসে সবাইকে তুলে ঢাকার উদ্দেশ্য যাত্রা শুরু করে। নারায়ণগঞ্জ পর্যন্ত সবকিছু স্বাভাবিক থাকলেও তারপরেই শুরু হয় বিভীষিকাময় মুহূর্ত। চিটাগাং রোড অতিক্রম করার সময় নারায়ণগঞ্জের রায়েরবাগ এলাকায় পৌঁছালে দুর্বৃত্তরা বাসে হামলা করে এবং বাসের জানালার কাঁচ ভেঙে দেয়।

চলন্ত বাসে হামলা হওয়া, সড়কে লাশের নিথর দেহের পড়ে থাকতে দেখা এইসব ঘটনাকে অনেকেই স্বাভাবিকভাবে গ্রহণ করতে পারছিলেন না। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃক দেওয়া পুলিশের নাম্বারে যোগাযোগ করেও পাওয়া যায়নি কোনো সহযোগিতা। শত বাধা আর শঙ্কা ঠেলে বাস যখন মেয়র হানিফ ফ্লাইওভারে ওঠে, তখন কারফিউর কারণে সেনাবাহিনী বাসটিকে থামায়। তখন ভিসি আর রেজিস্ট্রার  স্বাক্ষরিত যে পুলিশ পাস দেওয়া হয় তা দেখালেও কোনো কাজে আসে নি। পরবর্তীতে কয়েকজন শিক্ষার্থী সেনাবাহিনীর সাথে কথা বলে বাস সায়দাবাদ পর্যন্ত নেওয়ার অনুমতি পায়। সেদিনের এই ঘটনার প্লট তৈরি হয় উপাচার্যের নতজানু নীতি আর স্বেচ্ছাচারিতার কারণে।

তারপর ঘটে ক্ষমতার পালাবদল, ৫ আগস্ট দেশ ছাড়ে শেখ হাসিনা৷ ৮ আগস্ট হলসমূহ খুলে দেওয়া হয়। তখনই শিক্ষার্থীরা ৩ দফা দাবি জানায়, যার প্রথম দফা ছিল উপাচার্য ও শিক্ষার্থীদের বের করার ক্ষেত্রে ভূমিকা রাখা উপ-উপাচার্য, রেজিস্ট্রার এবং ছাত্রকল্যাণ দপ্তরের পরিচালকের পদত্যাগ।

HK