ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে (ইবি) মারধরের শিকার ওয়াসিফ আল আবরার শাহ আজিজুর রহমান হলের অ্যাটাচড নয় বলে জানিয়েছেন হল প্রভোস্ট। ওয়াসিফ আল আবরার ওই হলের বৈধ শিক্ষার্থী নয় বলেও জানান তিনি।
বুধবার (৩০ এপ্রিল) ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের (ইবি) শাহ আজিজুর রহমান হলের প্রভোস্ট অনলাইন পত্রিকার প্রতিনিধি ওয়াসিফ আল আবরারকে মারধরের ঘটনাকে নিয়ে এ ধরনের মন্তব্য করেন।
তিনি বলেন, আবরার আমাদের হলের অ্যাটাচড না। অনেকদিন ধরেই ও হলে থাকে। ও ছিল জিয়া হলে অ্যাটাচড। আমরা হল কর্তৃপক্ষ একটা নির্দিষ্ট সময়ের জন্য মাইগ্রেশনের সুযোগ দিয়েছি। কিন্তু সে এই সুযোগ নেয়নি। আমরা যখন নোটিশ করি অছাত্ররা হল ত্যাগ করার, ও তখন পুনরায় সুপারিশ নিয়ে আসে। কিন্তু পূর্বের মাইগ্রেশান দেওয়ার পর আর এ সুযোগ আমি কাউকে দেইনি। এর প্রেক্ষিতে ওকে হল ত্যাগ করার নির্দেশ দেই। ও চলে যায়। কিন্তু গত পরশু আমি জানতে পারি ও আবার হলে আসছে।
তিনি আরও জানান, সেজন্য পরে ওর রুমমেট ইমনকে ফোন দিয়ে আন্তরিকতার সঙ্গে অনুরোধ করি আবরার যেন হলে না আসে। এবং ইমন আমাকে আশ্বাস দেয় সে ব্যবস্থা করবে। কিন্তু তারপরও আজকে রাতে আবরার হলে আসলে এ অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা ঘটে যা খুবই অপ্রত্যাশিত। এটা উচিত হয়নি।
এদিকে ইবির সহ-সমন্বয়ক তানভির মাহমুদ পাভেল বলেন, আবরার বিশ্ববিদ্যালয়ের সাংবাদিক সংগঠন রিপোটার্স ইউনিটির পদধারী ছিল। যে সংগঠনটি জুলাই অভ্যুত্থানের পূর্বে ক্যাম্পাসে ছাত্রলীগের পারপাস সার্ভ করতো। তাছাড়া সে আবার কলেজ জীবনে ছাত্রলীগের রাজনীতির সঙ্গে অ্যাক্টিভলি জড়িত ছিল। জুলাই বিপ্লবের সময়ও সে সাধারণ শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়ে তাদেরকে ‘দুর্বৃত্ত’ ট্যাগ দেয়। অভ্যুত্থান পরবর্তী সময়ে এখনও সে ছাত্রলীগের পারপাস সার্ভ করার চেষ্টায় লিপ্ত। সে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন ঘটনার অতিরঞ্জিত শিরোনাম দিয়ে সাধারণ শিক্ষার্থীদেরকে বিভ্রান্ত করার চেষ্টা করে। এছাড়াও গতকালের ঘটনাটাও তার জন্যই ঘটেছে। তার অ্যাটাচড হল হলো শহীদ জিয়াউর রহমান হল। সে সেখানে না থেকে ছাত্রলীগের পাওয়ার প্র্যাকটিস করে হল প্রভোস্টের আদেশ অমান্য করে শাহ আজিজুর রহমান হলে অবৈধভাবে অবস্থান করেছে। যার কারণে এ ধরনের অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনার সৃষ্টি হয়েছে। আমরা এসব ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত পূর্বক উপযুক্ত বিচারের জোর দাবি জানাই।
জুলাই অভ্যুত্থানে আন্দোলনকারীদের ‘দুর্বৃত্ত’ সম্বোধন করে নিউজ প্রকাশ ও ছাত্রলীগের রাজনীতির সঙ্গে সংশ্লিষ্টতার অভিযোগ রয়েছে ক্যাম্পাস সাংবাদিক ওয়াসিফ আল আবরারের নামে। আবরার কমিউনিকেশন অ্যান্ড মাল্টিমিডিয়া জার্নালিজম বিভাগের ২০২১-২২ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী এবং একটি অনলাইন পত্রিকার বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিনিধি। মঙ্গলবার (২৯ এপ্রিল) দিবাগত রাত ১২টার দিকে তাকে শাহ আজিজুর রহমান হল থেকে চলে যেতে বললে সেখানে ধাক্কাধাক্কির শিকার হয় সে।
জানা যায়, আন্দোলনকারীদের দুর্বৃত্ত সম্বোধন করে নিউজ প্রকাশ ও ছাত্রলীগের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে বিশ্ববিদ্যালয়ের শাহ আজিজুর রহমান হলের প্রভোস্ট হল থেকে তাকে চলে যেতে বলেন। কিন্তু হল থেকে স্থায়ীভাবে না গিয়ে অবৈধ সিটে মাঝে মাঝেই ওই হলে থাকতেন আবরার। পরবর্তীতে শিক্ষার্থীরা আবরারের বিরুদ্ধে অভিযোগ করলে তাকে ৩ দিনের মধ্যে হল ছেড়ে দিতে বলেন হল প্রভোস্ট। এরপর মঙ্গলবার রাতে হল ছেড়ে চলে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেন আবরার। হল ছেড়ে যাওয়ার সময় সাজ্জাত শেখসহ কয়েকজনসহ সমন্বয়ক জানতে চান কেন আবরার হল ছেড়ে যাচ্ছে? এসময় শিক্ষার্থীরা উচ্চবাচ্য শুরু করেন। পরে সেখানে ধস্তাধস্তিতে আবরার অসুস্থ হয়ে পড়েন ফলে তাকে ইবি মেডিকেলে নিয়ে যাওয়া হয়। তবে সাজ্জাত শেখসহ একটি পক্ষের দাবি আবরারকে মারধর করা হয়েছে। এদিকে আবরারকে ইবি মেডিকেলে নিয়ে যাওয়া হলে ডা. পারভেজ তার নিরাপত্তাসহ সামগ্রিক বিবেচনায় কুষ্টিয়া সদর হাসপাতালে পাঠান।
