রাঙামাটির শিক্ষা প্রকৌশলীর বিরুদ্ধে দুদকে অভিযোগ 

আপডেট : ১৯ মে ২০২৫, ০২:১৩ পিএম

রাঙামাটি বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবিপ্রবি) ছাত্র ও ছাত্রী হোস্টেল নির্মাণ কাজ নিষিদ্ধ আওয়ামী লীগের ঘনিষ্ঠ ঠিকাদারকে পাইয়ে দিতে সংশ্লিষ্ট একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে নন রেসপন্সিভ করার অভিযোগ উঠেছে। অবৈধভাবে ইলেকট্রনিক্স প্রযুক্তির অপব্যবহার করে অনিয়মের মাধ্যমে প্রায় ২১ কোটি টাকার টেন্ডার অনিয়মে দুর্নীতি দমন কমিশনে (দুদক) অভিযোগ করা হয়েছে। মেসার্স মডার্ন স্ট্রাকচার-প্রীতি এন্টারপ্রাইজের (জেভি) তপন জ্যোতি চাকমা তথ্য প্রমাণসহ এই অভিযোগ করেন।

রাঙামাটির দুর্নীতি দমন কমিশন সমন্বিত কার্যালয়ের উপ-পরিচালক জাহিদ কালাম অভিযোগ প্রাপ্তির বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

অভিযোগ পত্রে উল্লেখ করা হয়, শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তর, রাঙামাটি জেলা কর্তৃক বিগত ১৮/১২/২০২৪ খ্রি. তারিখ ইজিপিতে আহ্বানকৃত দরপত্রের টেন্ডার আইডি নং- ১০৫৩৮৮৭ ও ১০৫৩৮৮৮ তে অংশগ্রহণ করে ১০% নিন্মদরে দরপত্র দাখিল করি। মোট ৩ জন ঠিকাদার উভয় দরপত্র দুটিতে ১০% নিম্নদরে দরপত্র জমা দেন। প্রথম মূল্যায়নের সময় মো. আলী ইমাম, তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী, ইইডি, চট্টগ্রাম সার্কেল ও বিজক চাকমা, নির্বাহী প্রকৌশলী, ইইডি, রাঙ্গামাটি জেলা যোগসাজশে নিয়ম বহির্ভূতভাবে টেন্ডার ক্যাপাসিটি কম দেখিয়ে আমার প্রতিষ্ঠানকে নন রেসপন্সিভ হিসাবে মূল্যায়ন করে দরপত্র মূল্যায়ন কার্যক্রম থেকে বাদ দেয়।

বিষয়টি প্রধান প্রকৌশলী, ইইডি, শিক্ষা ভবন, ঢাকা-কে অবহিত করার পর প্রধান প্রকৌশলী কর্তৃক পুনরায় মূল্যায়নের জন্য ইজিপি এ দেওয়ার নির্দেশ পরে তারা উভয়ই আমাকে আবারো টেন্ডার কার্যক্রম হতে বাদ দেওয়ার জন্য নতুন ফন্দি আঁটে। বৈধ কোন উপায় না পেয়ে অন্য ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের কাজ আমার প্রতিষ্ঠানের নামে চলমান দেখিয়ে আমাকে নন রেসপন্সিভ করে দেয়। অন্য ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের নামে কাজের টেন্ডার আইডিগুলো হলো: ৬৬৮৭৮৭, ১৩৩৯৬৪। যা মহোদয় কর্তৃক যাচাই করলেই সত্যতা মিলবে।

তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী জনাব মো. আলী ইমাম ও নির্বাহী প্রকৌশলী জনাব বিজক চাকমা তাদের হীন চরিতার্থ হাসিলের উদ্দেশ্যে নিয়ম বহির্ভূতভাবে ক্ষমতার অপব্যবহার করে উল্লিখিত ২টি কাজ একই ঠিকাদারকে (শুভঙ্কর-কিউসি) দিয়ে দেওয়ার পাঁয়তারা করা হচ্ছে বলেও উক্ত অভিযোগপত্রে উল্লেখ করা হয়।

এদিকে, ইতোমধ্যেই এই অনিয়মের অভিযোগ নিয়ে সংশ্লিষ্ট অভিযোগকারীরা ইপ্রকিউরমেন্ট কর্তৃপক্ষের বরাবরে অভিযোগ দায়ের করেছে বলে জানা গেছে। অভিযোগের প্রাথমিক সত্যতা নিশ্চিতে আগামী ২১ মে তারিখে এই বিষয়ে শুনানীর দিন ধার্য করা হয়েছে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্র নিশ্চিত করেছে।

এর আগে,  গত ৯ই মে রাঙ্গামাটি বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপন (২য় সংশোধিত) শীর্ষক প্রকল্প পরিদর্শনে এসেছিলেন শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগের অতিরিক্ত সচিব (পরিকল্পনা) সৈয়দ মামুনুল আলম ও শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তরের (ঢাকা) তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী মো. আলী ইমাম, শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তরের (চট্টগ্রাম) নির্বাহী প্রকৌশলী মো. শাহজাহান আলী এসময় তার সফরসঙ্গী হিসেবে সাথে ছিলেন।

সংশ্লিষ্ট দায়িত্বশীল সূত্র জানিয়েছেন, দুদকে অভিযোগ দিয়েছে এটি জানার পরেও সেদিন ৯ মে তড়িঘড়ি করে ছাত্র ও ছাত্রী হোস্টেল নির্মাণ কাজ দুটির ‘নোহা’ দিয়ে দেওয়া হয়েছে।

সর্বশেষ প্রাপ্ত তথ্যানুসারে জানা গেছে, ই-প্রকিউরমেন্টে অভিযোগ দাখিলের পরপরই সকল ডকুমেন্ট পর্যালোচনায় বর্তমানে রাবিপ্রবির ছাত্র-ছাত্রী হোস্টেল নির্মাণ কাজ বন্ধ রাখা হয়েছে। আগামী ২১শে এই অভিযোগের বিষয়ে শুনানীর দিন ধার্য করা হয়েছে।

এদিকে, এই অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে রাঙামাটি দুর্নীতি দমন কমিশন দুদক এর সমন্বিত কার্যালয়ের উপ-পরিচালক জাহিদ কালাম হোয়াটসঅ্যাপ বার্তায় অভিযোগ প্রাপ্তি সত্যতা নিশ্চিত করে জানান, অভিযোগটি ঢাকায় পাঠানো হয়েছে। অনুমতি পেলে এই বিষয়ে অনুসন্ধান কার্যক্রম পরিচালিত হবে।

এর আগে, উক্ত অভিযোগের বিষয়ে মুঠোফোনে জানতে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগের অতিরিক্ত সচিব (পরিকল্পনা) সৈয়দ মামুনুল আলমের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি প্রতিবেদককে জানান, এই সম্পর্কে আমার কাছে কোনো অভিযোগ আসেনি।

অপরদিকে, অভিযোগপত্রে উল্লেখিত শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তরের (ঢাকা) তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী মো. আলী ইমামের মুঠোফোনে কল দিয়ে এবং হোয়াটসঅ্যাপে ম্যাসেজ দিয়েও কোনো উত্তর মেলেনি। এছাড়াও এই বিষয়ে রাঙামাটি জেলা শিক্ষা অধিদপ্তরের নির্বাহী প্রকৌশলী বিজক চাকমার সাথে মুঠোফোনে যোগাযোগ করলে তিনি ব্যস্ত আছে বলে একাধিকবার জানিয়েছেন। পরবর্তীতে তার ম্যাসেঞ্জারে ম্যাসেজ দিলে তিনি সেটা সিন করলেও কোনো বক্তব্য দেন নি।

এদিকে রাঙামাটি শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তরে কাজ করেছেন এমন একাধিক ঠিকাদার ও অফিসের সূত্র নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানিয়েছেন, গত প্রায় এক দশকে রাঙামাটি শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তরের মাধ্যমে যে-সকল উন্নয়ন কর্মকাণ্ড বাস্তবায়িত হয়েছে; সে-সকল কাজের মেটেরিয়াল সার্টিফিকেটের প্রায়গুলোই জাল সার্টিফিকেট বলে জানা গেছে।

চট্টগ্রাম প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় চুয়েট এর প্যাড ও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের স্বাক্ষর জাল-জালিয়াতির মাধ্যমে বিশেষ কায়দায় জনৈক ব্যক্তির মাধ্যমে সংশ্লিষ্ট ঠিকাদারেরা এ সকল ম্যাটেরিয়াল সার্টিফিকেট সংগ্রহ করে সেগুলো রাঙামাটি শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তরে জমা দিয়ে কর্তৃপক্ষের সহযোগিতায় বিলগুলো উত্তোলন করে নেয়। এতে করে সরকার বিপুল পরিমাণ রাজস্ব থেকে যেমন বঞ্চিত হচ্ছে, তেমনিভাবে এ সকল কাজের গুণগত মান নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে ?

SN