ঢাকা
শুক্রবার, ০৫ ডিসেম্বর ২০২৫, ২০ অগ্রহায়ণ ১৪৩২
ই-পেপার

ঢাকা সেন্ট্রাল ইউনিভার্সিটির

অধ্যাদেশের দাবিতে সাত কলেজ শিক্ষার্থীদের নতুন কর্মসূচি ঘোষণা

আপডেট : ০৩ ডিসেম্বর ২০২৫, ০৬:৩৭ পিএম

ঢাকা সেন্ট্রাল ইউনিভার্সিটির (প্রস্তাবিত) অধ্যাদেশ ঘিরে সাত কলেজ শিক্ষার্থীরা নতুন কর্মসূচি ঘোষণা করেছেন। আগামী শনিবার পর্যন্ত সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে আলটিমেটাম দিয়েছেন তারা। এর মধ্যে অধ্যাদেশ জারি না হলে রোববার (৭ ডিসেম্বর) থেকে শিক্ষার্থীরা শিক্ষা ভবনের সামনে টানা অবস্থান কর্মসূচি শুরু করবেন বলে জানিয়েছেন। 

বুধবার (৩ ডিসেম্বর) বিক্ষোভ কর্মসূচি শেষ করে ঢাকা কলেজের সামনে সংবাদ সম্মেলনে এই কর্মসূচির ঘোষণা করেন ঢাকা কলেজের শিক্ষার্থী আব্দুর রহমান।

তিনি বলেন, সাত কলেজে নিয়ে স্বতন্ত্র বিশ্ববিদ্যালয় গঠনের প্রক্রিয়া দীর্ঘদিন থমকে আছে। নতুন বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাদেশ জারি না হওয়ায় জটিলতা বাড়ছে। তাই আগামী রোববার থেকে শিক্ষা ভবনের সামনে আমরা টানা অবস্থান করবো। যতক্ষণ পর্যন্ত অধ্যাদেশ জারি না হবে ততক্ষণ পর্যন্ত আন্দোলন চলবে।

এদিকে প্রস্তাবিত ঢাকা সেন্ট্রাল ইউনিভার্সিটি আইন-২০২৫ এর চূড়ান্ত অধ্যাদেশ জারির দাবিতে বেলা সাড়ে ১২ টা থেকে সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ মিছিল শুরু করেন শিক্ষার্থীরা। পরে দুপুর ১টায় সাইন্সল্যাব এলাকায় অবস্থান  নেন তারা। এতে যান চলাচল বন্ধ হয়ে গেলে তীব্র যানজটের সৃষ্টি হয়। ভোগান্তিতে পড়েন সাধারণ যাত্রী ও পথচারীরা।

এরপর বেলা তিনটার দিকে মুখোমুখি অবস্থানে দেখা যায় শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের। এর আগে পাল্টাপাল্টি বিক্ষোভ করে শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা। এ অবস্থায় অনাকাঙ্ক্ষিত পরিস্থিতি এড়াতে ঢাকা কলেজের গেট বন্ধ করে সতর্ক অবস্থান নেয় পুলিশ। অন্যদিকে ইডেন বাঁচাও রক্ষা পরিষদের একদল শিক্ষার্থী ঢাকা কলেজের অধ্যক্ষ ও সেন্ট্রাল ইউনিভার্সিটির অন্তর্বর্তীকালীন প্রশাসক অধ্যাপক এ কে এম ইলিয়াসের কার্যালয় অবরুদ্ধ করে অবস্থান নেন।

একপর্যায়ে শিক্ষার্থীরা ঢাকা কলেজের সামনে নিউমার্কেট, মিরপুর সড়ক অবরোধ করে অবস্থান নেন। টানা দুই ঘণ্টারও বেশি সময় অবরোধ কর্মসূচি পালনের পর নতুন কর্মসূচি ঘোষণা করে সড়ক ছাড়েন শিক্ষার্থীরা।

এসময় তারা আপস না সংগ্রাম? সংগ্রাম, সংগ্রাম, রাষ্ট্র তোমার সময় শেষ জারি করো অধ্যাদেশ, সিন্ডিকেটের সময় শেষ জারি করো অধ্যাদেশ, দালালি না রাজপথ? রাজপথ রাজপথ, টালবাহানা বন্ধ করো অধ্যাদেশ জারি করো ইত্যাদি স্লোগান দেয়।

নিউমার্কেট থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) একেএম মাহফুজুল হক বলেন, ঢাকা কলেজের ভেতরে দুই কলেজের শিক্ষকরা অবস্থান করছেন, আর বাইরে আছেন শিক্ষার্থীরা। কোনো তৃতীয় পক্ষ যাতে পরিস্থিতি ঘোলাটে করতে না পারে, সে জন্য পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। মূলত সবার নিরাপত্তা নিশ্চিত করতেই এ পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে।

ঢাকা কলেজের শিক্ষার্থী মো. নাঈম হাওলাদার বলেন, আমাদের লক্ষ্য এখন শুধুই অধ্যাদেশ। ৩টি সভা শেষ করেও এখনো আমাদের চূড়ান্ত মুক্তির সেই অধ্যাদেশের কোনো গতিশীলতা আমাদের চোখে পড়ছে না। সেই সঙ্গে পরিচয় সংকট ও একাডেমিক কার্যক্রম নিয়ে নানা অনিশ্চয়তার মুখে প্রস্তাবিত বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়া ২০২৪-২৫ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থীসহ চলমান সব শিক্ষাবর্ষের প্রায় দেড় লক্ষাধিক শিক্ষার্থী। আমরা চাই দ্রুতই অধ্যাদেশ জারি করা হোক। সে জন্যই আজ বিক্ষোভ মিছিলের আয়োজন করা হয়েছে।

ইডেন মহিলা কলেজের শিক্ষার্থী জান্নাতুল এ্যানি বলেন, আমাদের প্রথম ও চূড়ান্ত দাবি অধ্যাদেশ চাই। গত তিন মাস ধরে আমরা অবর্ণনীয় ভোগান্তির মধ্যে আছি। ক্লাস করতে পারছি না, পড়াশোনায় অনিশ্চয়তা তৈরি হয়েছে। এর আগেও যখন ভর্তি নিয়ে নানা জটিলতা তৈরি হয়েছিল, তখনও আমরা পরিষ্কারভাবে বলেছিলাম আমরা অধ্যাদেশ চাই। নিয়ম-নীতির একটি মডেল চাই, যাতে ক্লাস নির্বিঘ্নে চলতে পারে।

তিনি আরও বলেন, কিন্তু বারবার প্রশাসন আমাদের ঘুরিয়ে-পাল্টিয়ে শুধু ভোগান্তিতেই ফেলছে। তাই এখন আমাদের দাবি একটাই অধ্যাদেশ জারি করতে হবে। আমরা আশা করি অধ্যাদেশ হলেই ক্লাস স্বাভাবিকভাবে শুরু হবে।

অধ্যাদেশের দাবিতে আন্দোলনরত শিক্ষার্থী মেহেদী হাসান বলেন, রাজধানীর ঐতিহ্যবাহী সাতটি কলেজ দীর্ঘ বছরের শোষণ-বঞ্চনা ও অনিয়মের বিরুদ্ধে থেকে গত বছর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় হতে বেরিয়ে আসছে। এর পরিপ্রেক্ষিতে রাষ্ট্র একটি সুষ্ঠ সমাধান নিশ্চিত করণে মতবিনিময়ের মাধ্যমে সিদ্ধান্ত নিয়েছে যে ‘ঢাকা কেন্দ্রীয় বিশ্ববিদ্যালয়’ নামে একটি বিশ্ববিদ্যালয় কাঠামো গঠন করবে। রাষ্ট্রের দেওয়া প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়িত না হওয়ায় গত দেড় বছর হতে লড়াই চলছে এ নিয়ে।

তিনি বলেন, ‘এ বছরই সেপ্টেম্বর মাসে একটি খসড়া অধ্যাদেশ জারি করছে। তার পরে সাত কলেজের কিছু সংখ্যক শিক্ষা ক্যাডার বিশ্ববিদ্যালয়ে সুষ্ঠু শিক্ষা পাঠদান সরবরাহ করতে আগ্রহী নন। রাষ্ট্র আমাদের কল্যাণে বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি উত্তম মডেল উপহার দিতে চাইলেও শিক্ষকরা তার বিরুদ্ধে অবস্থান করছেন, যা খুবই ন্যাক্কারজনক ঘটনা।’

তিনি আরও বলেন, ‘আজকে আমাদের বিক্ষোভ মধ্যে তারা ইচ্ছাকৃত বিক্ষোভ করে শিক্ষক-শিক্ষার্থী মুখোমুুখি অবস্থান নিয়ে খারাপ পরিস্থিত সৃষ্টি করে ফায়দা নিতে চায়। আমরা শিক্ষকদের কোনও পাতা ফাঁদে পা দেব না।’

এরই মধ্যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্তি বাতিলসহ রাজধানীর সাত সরকারি কলেজকে একীভূত করে ‘ঢাকা কেন্দ্রীয় বিশ্ববিদ্যালয়’ নামে নতুন একটি স্বতন্ত্র পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার নীতিগত সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। গত ১২ নভেম্বর শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের জনসংযোগ বিভাগ থেকে পাঠানো এক বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে।

এতে আরও বলা হয়েছে, ব্যক্তিগত ধারণা, অসম্পূর্ণ তথ্য বা গুজবের ভিত্তিতে বিভ্রান্তি বা পারস্পরিক দ্বন্দ্বের সৃষ্টি না করে সবাই দায়িত্বশীল আচরণ করবেন। একই সঙ্গে শিক্ষার্থীদের মূল্যবান শিক্ষাজীবন এবং সামগ্রিক শিক্ষা কার্যক্রম যাতে কোনোভাবেই ব্যাহত না হয়, সে বিষয়ে সবাইকে সচেতন থাকার জন্যও বিশেষভাবে আহ্বান জানানো হয়।

প্রসঙ্গত, চলতি বছরের ২৬ মার্চ সরকার রাজধানীর সাত সরকারি কলেজকে পৃথক করে ‘ঢাকা সেন্ট্রাল ইউনিভার্সিটি’ নামে নতুন একটি সরকারি বিশ্ববিদ্যালয় গঠনের ঘোষণা দেয়। প্রস্তাবিত নামটি বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি) নির্ধারণ করে। কলেজগুলো হলো- ঢাকা কলেজ, ইডেন মহিলা কলেজ, সরকারি শহীদ সোহরাওয়ার্দী কলেজ, বেগম বদরুন্নেসা সরকারি মহিলা কলেজ, কবি নজরুল সরকারি কলেজ, সরকারি বাঙলা কলেজ এবং সরকারি তিতুমীর কলেজ।

LH/FJ
আরও পড়ুন