ভারতীয় সিনেমায় অনবদ্য অবদানের জন্য জাতীয় পুরস্কার, পদ্মভূষণ পেয়েছেন অনেক আগেই। অর্ধ শতাব্দীজুড়ে ভারতীয় সিনেদুনিয়ায় রাজত্ব করছেন মিঠুন চক্রবর্তী। এবার সেই ৫ দশকের ফিল্মি ক্যারিয়ারের জন্য ‘দাদাসাহেব ফালকে’ পুরস্কার পাচ্ছেন তিনি।
সোমবার (৩০ সেপ্টেম্বর) সকালে কেন্দ্রীয় তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে অশ্বিনী বৈষ্ণ এক্স হ্যান্ডেলে এই সুখবর জানিয়ে লিখেছেন, মিঠুন দা’র অসাধারণ সিনেম্যাটিক সফর সব প্রজন্মের জন্য অনুপ্রেরণা। কিংবদন্তি অভিনেতাকে দাদাসাহেব ফালকে পুরস্কার দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সিলেকশন জুরি। ভারতীয় চলচ্চিত্রে মিঠুনজি’র অসামান্য অবদান রয়েছে।
৮ অক্টোবর ৭০তম জাতীয় চলচ্চিত্র উৎসবের মঞ্চে মিঠুন চক্রবর্তীকে দাদাসাহেব ফালকে পুরস্কারে ভূষিত করা হবে। খবর প্রকাশ্ হওয়ারে আসার পরই মহাগুরুকে শুভেচ্ছা জানিয়েছেন কুণাল ঘোষ। তবে মনে করিয়ে দিলেন প্রণব মুখোপাধ্যায়ের কথাও।
কুণাল ফেসবুক পোস্টে লিখেছেন, দাদাসাহেব ফালকে পচ্ছেন মিঠুন চক্রবর্তী। শিল্পী মিঠুনদাকে অভিনন্দন। শুধু অনুরোধ, দীর্ঘ উপেক্ষার পর আপনার পদ্মশ্রীর জন্য প্রয়াত প্রণব মুখোপাধ্যায়ের প্রচেষ্টার দিনগুলো এবং সেইসঙ্গে মমতাদির আপনাকে রাজ্যসভায় পাঠিয়ে স্বীকৃতিদান ভুলে যাবেন না।
সম্প্রতি কলকাতায় এসেছিলেন মিঠুন তার পুজায় মুক্তি পেতে যাওয়া ‘শাস্ত্রী’ সিনেমার প্রচার অনুষ্ঠানে। বয়স ৭০ পেরোলেও কাজের প্রতি আজও একইরকমভাবে নিষ্ঠাবান তিনি। হাতের হাড় ভেঙে ৬ টুকরা হয়েছে গত মাসে। সেই শরীরেই প্রচারের কাজে এসেছিলেন কলকাতায়।
ফিল্মি কেরিয়ারের শুরুটা করেছিলেন ১৯৭৬ সালে। বাঙালি পরিচালক মৃণাল সেনের হাত ধরে ‘মৃগয়া’ ছবির মাধ্যমে অভিনয়জীবনে অভিষেক ঘটে মিঠুন চক্রবর্তীর। তবে হিন্দি ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রিতে নিজেকে প্রতিষ্ঠা করতে বেজায় বেগ পেতে হয়েছিল অভিনেতাকে। মিঠুনের চেহারা, এমনকী গায়ের রঙ নিয়েও কটাক্ষ করতে ছাড়েননি বলিউডের ছবি নির্মাতারা।
কাজ চাইতে গেলে মিঠুনের মুখের ওপর দরজা বন্ধ করে দিয়েছিলেন অনেকে। বলেছিলেন, আয়নায় নিজের মুখ দেখেছো? কোনো দিক থেকে হিরোসুলভ ব্যাপার আছে তোমার চেহারায়? কিন্তু দমে যাননি। জেদের বশেই দর্শকদের কাছে প্রিয় “ডিস্কো ডান্সার” হয়ে উঠেছিলেন। তবে শুরুর দিনগুলো নেহাত সোজা ছিল না।
মিঠুনের তখন স্ট্রাগলিং পিরিয়ড। বেশিরভাগ দিনই পকেট থাকতো গড়ের মাঠ। দুই বেলা পেট ভরার জন্য দু’মুঠো ভাতও জুটতো না। সেইসময়ে একটু খাবারের আশায় হাইপ্রোফাইল পার্টিগুলোতে নাচতেন মিঠুন।
অশ্রুসজল চোখে সেসব অতীতের কথা জানিয়েছিলেন একবার এক রিয়ালিটি শো’য়ে। বলেছিলেন, আমি ভেবেছিলাম কেউ আমাকে হিরো হিসেবে সিনেমায় সুযোগ করে দেবে না। তাই নাচের দিকে ঝুঁকে যাই। বিশেষ করে ডান্স। ভিলেন হিসেবে নিজেকে প্রদর্শন করতাম তখন। একটু পয়সা বাঁচানোর জন্য কাজের জায়গায় পায়ে হেঁটে যেতাম। বড় বড় পার্টিতে নাচতাম, যাতে একটু খেতে পাই।
