আজ (১৩ নভেম্বর) জনপ্রিয় ঔপন্যাসিক, নির্মাতা, নাট্যকার হুমায়ূন আহমেদের জন্মবার্ষিকী।
প্রতিবছরই তার জন্মদিন ঘিরে থাকে ভক্তদের উচ্ছ্বাস ।
এবারও তার জন্মস্থান নেত্রকোনায় পালিত হচ্ছে হিমু উৎসব। তারুণ্যনির্ভর সংগঠন হিমু পাঠক আড্ডার আয়োজনে দিনব্যাপী হিমু উৎসবে মেতে উঠেছে জেলা শহর।
তরুণ পাঠক-ভক্তরা প্রতিবারের ন্যায় এবারও দিবসটিতে হিমু-রূপা সেজে পায়ে হেঁটে অতিক্রম করেন দুই কিলোমিটার সড়ক। বিভিন্ন বয়সের কবি, লেখক, সাংবাদিক, বুদ্ধিজীবি, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্বরা হিমু উৎসবের প্রথমার্ধে শোভাযাত্রা বের করেন। কেক কাটা ছাড়াও সন্ধ্যায় রয়েছে মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন।
হুমায়ূন আহমেদের জন্ম নেত্রকোনার কুতুবপুরে, ১৯৪৮ সালের ১৩ নভেম্বর। বাবা ফয়জুর রহমান আহমেদ ছিলেন পুলিশ কর্মকর্তা ও মুক্তিযোদ্ধা। মুক্তিযুদ্ধে তিনি পাকিস্তানি সেনাবাহিনী ও তাদের দোসরদের হাতে শহীদ হন। মায়ের নাম আয়েশা ফয়েজ। তার দুই ভাই মুহম্মদ জাফর ইকবাল ও আহসান হাবীব। প্রত্যেককেই লেখালেখিতে পাওয়া গেছে।
শিল্প-সাহিত্যের বেশিরভাগ শাখাতেই হুমায়ূন আহমেদ তার কীর্তি রেখেছেন। একাধারে তিনি সাহিত্য দিয়ে মন্ত্রমুগ্ধ রেখেছেন বাংলার মানুষকে, অন্যদিকে নির্মাণ করেছেন অনন্য সব নাটক, চলচ্চিত্র ও গান। তার হাত ধরেই তারকার সম্মান পেয়েছেন এ দেশের অনেক শিল্পী।
তার নির্মাণে উঠে এসেছে নৈসর্গিক দৃশ্য, জোছনা, বৃষ্টিসহ বাংলার অসামান্য সব ব্যঞ্জনা। তরুণ প্রজন্মকে ভিন্নভাবে প্রকৃতি চিনিয়েছেন এই দার্শনিক লেখক।
বাংলা সাহিত্য, নাটক, চলচ্চিত্র ও গান পালাবদলের এ কারিগর ১৯৭২ সালে প্রকাশিত প্রথম উপন্যাস ‘নন্দিত নরকে’ দিয়ে নিজেকে জানান দেন। এরপর তিন শতাধিক গ্রন্থ লিখেছেন তিনি।
টেলিভিশন নাটকেও আনেন ভিন্ন অধ্যায়। এসেছে বাকের ভাই, বদি, মুনা, লবঙ্গ, তিতলি, কঙ্কা, হাসান, ছোট চাচা, বড় চাচার মতো অনবদ্য সব চরিত্র।
১৯৯০-এর গোড়ার দিকে চলচ্চিত্র নির্মাণ শুরু করেন। তার পরিচালনায় প্রথম চলচ্চিত্র ‘আগুনের পরশমণি’ মুক্তি পায় ১৯৯৪ সালে। ২০০০ সালে ‘শ্রাবণ মেঘের দিন’ ও ২০০১ সালে ‘দুই দুয়ারী’ দর্শকদের দারুণ গ্রহণযোগ্যতা পায়। ২০০৩-এ নির্মাণ করেন ‘চন্দ্রকথা’।
১৯৭১-এ বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের প্রেক্ষাপটে ২০০৪ সালে নির্মাণ করেন ‘শ্যামল ছায়া’ সিনেমাটি। এটি ২০০৬ সালে ‘সেরা বিদেশি ভাষার চলচ্চিত্র’ বিভাগে অ্যাকাডেমি পুরস্কারের জন্য বাংলাদেশ থেকে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছিল। এছাড়াও এটি কয়েকটি আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবে প্রদর্শিত হয়।
এরপর ২০০৬ সালে মুক্তি পায় ‘৯ নম্বর বিপদ সংকেত’। ২০০৮-এ ‘আমার আছে জল’ চলচ্চিত্রটি তিনি পরিচালনা করেন। ২০১২ সালে তার পরিচালনার সর্বশেষ ছবি ‘ঘেটুপুত্র কমলা’ মুক্তি পায়। যা দেশ-বিদেশে প্রচুর আলোচনায় আসে। তার চলচ্চিত্রের মৌলিক গানগুলো তিনি নিজেই রচনা করেন, যার বেশিরভাগই পায় তুমুল জনপ্রিয়তা।
কাজের স্বীকৃতিস্বরূপ একুশে পদক, বাংলা একাডেমি পুরস্কার, জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারসহ দেশ-বিদেশে বিভিন্ন পুরস্কার ও সম্মাননা পেয়েছেন তিনি।
আজ (১৩ নভেম্বর) এই কিংবদন্তির জন্মদিন উপলক্ষে নেত্রকোনা ছাড়াও সবচেয়ে প্রিয় স্থান গাজীপুরের নুহাশ পল্লীতে রয়েছে নানা আয়োজন। বিশেষ অনুষ্ঠান থাকছে টিভি চ্যানেলগুলোতেও।
