বিশ্বে জলবায়ু পরিবর্তন শুধু একটি পরিবেশগত সমস্যা হিসেবে সীমাবদ্ধ নেই। এটি আজ জনস্বাস্থ্য, অর্থনীতি, কৃষি, খাদ্যনিরাপত্তা এবং সামগ্রিক সামাজিক জীবনের ওপর মারাত্মক প্রভাব বিস্তার করছে। বিশ্বজুড়ে তাপমাত্রা বাড়ায় কর্মক্ষেত্রে শ্রমিকদের জন্য পরিবেশ ক্রমেই বিপজ্জনক হয়ে উঠছে।
সম্প্রতি নতুন এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বিশ্বের ১০০ কোটির বেশি শ্রমিক এখন নিয়মিত চরম গরমের মধ্যে কাজ করছেন; যার এক-তৃতীয়াংশ স্বাস্থ্যঝুঁকিতে রয়েছে।
এই বছর ইউরোপজুড়ে ভয়াবহ তাপদাহে রেকর্ড তাপমাত্রা, দাবানল ও খরা দেখা দেয়। বিশেষজ্ঞরা জানান, জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে ইউরোপে তাপদাহ-জনিত মৃত্যুর সংখ্যা তিনগুণ বেড়ে অতিরিক্ত ১৬ হাজার ৫০০ মানুষ মারা গেছে।
গত জুনে বার্সেলোনায় সবচেয়ে আলোচিত ঘটনাটি ঘটে। সেসময় ৫১ বছর বয়সী রাস্তা পরিষ্কার কর্মী মোন্তসে আগুইলার ৩৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস গরমে কাজ করতে গিয়ে রাস্তায় ঢলে পড়ে মারা যান। তার মৃত্যুর পর শহরে বিক্ষোভ হয়। বিক্ষোভকারীরা ব্যানারে লেখেন—‘চরম গরমও কর্মক্ষেত্রের জন্য সহিংস।’ ঘটনাটির পর বার্সেলোনা সিটি করপোরেশন নতুন নিয়ম চালু করে। হালকা ও শ্বাসপ্রশ্বাস-সক্ষম ইউনিফর্ম, টুপি, সানস্ক্রিম, প্রতি ঘণ্টায় পানি বিরতি এবং ৪০ ডিগ্রি ছাড়ালে কাজ বন্ধ রাখার নির্দেশ জারি হয়।

ইন্টারন্যাশনাল এসওএসের এক প্রতিবেদনের তথ্য অনুসারে, জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে কর্মক্ষেত্রে চরম গরম ঝুঁকি হয়ে উঠছে। তাদের তথ্য মতে, বাতাস আর আর্দ্রতার কারণে তাপমাত্রা আরও বেশি অনুভূত হচ্ছে। শুধু সাধারণ তাপমাত্রা দেখে ঝুঁকি নির্ধারণ আর যথেষ্ট নয়। ভবিষ্যতে আরও কঠোর কর্মনিয়ম আসতে পারে। গরম এড়ানোর জন্য রাতে আলো বন্ধ করে কাজ করলে দুর্ঘটনা বাড়বে।
এদিকে ওয়ার্ল্ড মেটিওরোলজিক্যাল অর্গানাইজেশন (ডব্লিউএমও) জানায়, ২০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের পর প্রতি ১ ডিগ্রি তাপমাত্রা বাড়লে শ্রমিকদের উৎপাদনশীলতা ২–৩ শতাংশ কমে যায়। বিশেষ করে কৃষি ও নির্মাণশ্রমিকরা বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হন।
গবেষকদের মতে, ভবিষ্যতে এই পরিস্থিতি আরও খারাপ হবে, বিশেষ করে নিম্ন-আয়ের দেশগুলোতে শ্রম ও উৎপাদনশীলতার ওপর প্রভাব বেশি পড়বে।
চরম আবহাওয়া কর্মীদের মানসিক স্বাস্থ্যেও চাপ বাড়াচ্ছে। ২০২২ সালের এক গবেষণায় বলা হয়, তীব্র আবহাওয়া কর্মীদের মধ্যে উত্তেজনা, সিদ্ধান্ত নিতে সমস্যা, কর্মক্ষেত্রে বিরূপ আচরণ এবং চাকরি ছাড়ার প্রবণতা বাড়াতে পারে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, জলবায়ু পরিবর্তন যত বাড়বে, কর্মীদের শারীরিক ও মানসিক সুরক্ষা নিশ্চিত করতে তত বেশি গবেষণা ও কার্যকর ব্যবস্থা প্রয়োজন হবে।
তথ্যসূত্র : ইউরো নিউজ
