পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন এবং পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বলেছেন, দক্ষিণ এশিয়ায় বায়ুদূষণ, নদী অববাহিকা সংকট, প্লাস্টিক বর্জ্য প্রবাহ ও প্রতিবেশ ব্যবস্থার ক্ষতি- এসব চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় আঞ্চলিক ঐক্য ছাড়া কার্যকর সমাধান সম্ভব নয়। আস্থা, সহযোগিতা এবং নিয়মিত সংলাপের ভিত্তিতে যৌথ উদ্যোগ গ্রহণই সীমান্ত অতিক্রমকারী পরিবেশগত সংকট মোকাবিলার সবচেয়ে জরুরি পথ।
বৃহস্পতিবার (২৭ নভেম্বর) বাংলাদেশ সচিবালয়ে দক্ষিণ এশীয় পরিবেশ কর্মসূচির (এসএসিইপি) মহাপরিচালক নরবু ওয়াংচুকের সঙ্গে সাক্ষাৎকালে তিনি এসব কথা বলেন।
বৈঠকে জলবায়ু কার্যক্রম, পরিবেশ সুরক্ষা এবং সীমান্তবর্তী পরিবেশগত চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় আঞ্চলিক সহযোগিতা জোরদারের ওপর গুরুত্ব দেওয়া হয়।
রিজওয়ানা বলেন, পরিবেশগত সংকট জাতীয় সীমানায় থেমে থাকে না; তাই দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে আস্থা, সহযোগিতা এবং ধারাবাহিক সংলাপের ভিত্তিতে যৌথ উদ্যোগ গ্রহণ করা জরুরি। সীমান্তবর্তী বায়ুদূষণ, নদী অববাহিকা ব্যবস্থাপনা, সীমান্ত অতিক্রমকারী প্লাস্টিক বর্জ্য সমস্যা এবং সুন্দরবনসহ গুরুত্বপূর্ণ প্রতিবেশ ব্যবস্থার সুরক্ষা-এসব অভিন্ন চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় সাকেপ (এসএসিইপি)-এর মতো শক্তিশালী আঞ্চলিক মঞ্চ অত্যন্ত প্রয়োজন।
আলোচনায় ওয়াংচুক জানান, সদস্য দেশগুলোতে জলবায়ু অভিযোজন, জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণ, বায়ুগুণমান উন্নয়ন এবং সামুদ্রিক দূষণ নিয়ন্ত্রণ-এসব বিষয়ে এসএসিইপির চলমান উদ্যোগসমূহ এগিয়ে চলছে। তিনি বাংলাদেশের পরিবেশ নেতৃত্বের প্রশংসা করেন এবং যৌথ প্রকল্প, সক্ষমতা বৃদ্ধি এবং বহু-দাতা তহবিল ব্যবস্থার মাধ্যমে বাংলাদেশকে আরও সহায়তা করার এসএসিইপির প্রস্তুতির কথা জানান।
উপদেষ্টা রিজওয়ানা বাংলাদেশ ও এসএসিইপির মধ্যে জলবায়ু অভিযোজন, বায়ুগুণমান ব্যবস্থাপনা এবং জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণে আরও গভীর যৌথ কর্মসূচি চালুর আহ্বান জানান। তিনি বলেন, রাজনৈতিক বা অর্থনৈতিক পরিবর্তনের সময়েও পরিবেশকে নীতি অগ্রাধিকারের কেন্দ্রবিন্দুতে রাখতে হবে।
এসএসিইপি মহাপরিচালক ওয়াংচুক উপদেষ্টাকে সংস্থাটির প্রশাসনিক কাঠামো, আসন্ন গভর্নিং কাউন্সিলের কার্যক্রম এবং বাংলাদেশকে কেন্দ্র করে প্রযুক্তিগত ও কর্মসূচিভিত্তিক সহযোগিতা বৃদ্ধির পরিকল্পনা সম্পর্কে অবহিত করেন। তিনি বাংলাদেশকে ভবিষ্যতে এসএসিইপির নানা উদ্যোগ ও কর্মশালায়-বিশেষত আন্তর্জাতিক সংস্থার সহায়তায় আঞ্চলিক বায়ুগুণমান কর্মসূচিতে-সক্রিয় নেতৃত্ব প্রদানের আহ্বান জানান।
উপদেষ্টা এসএসিইপির ধারাবাহিক সহযোগিতার জন্য কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন এবং দক্ষিণ এশিয়ায় যৌথ পরিবেশ সমাধান অগ্রসর করতে বাংলাদেশের অঙ্গীকার পুনর্ব্যক্ত করেন। তিনি আশা প্রকাশ করেন, আঞ্চলিক সহযোগিতা আরও জোরদার হলে জলবায়ু-সংকটাপন্ন দেশগুলোর জনগণ বাস্তব সুফল পাবে।
বৈঠক শেষে উভয় পক্ষ বাংলাদেশের জাতীয় পরিবেশ ও জলবায়ু অগ্রাধিকারের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে নতুন সহযোগিতা সম্ভাবনা অনুসন্ধান এবং সমন্বয় জোরদারে সম্মত হয়।
এসময় পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের সচিব ড. ফারহানা আহমেদ এবং মন্ত্রণালয়ের অন্যান্য ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
