ঢাকা
মঙ্গলবার, ১৮ নভেম্বর ২০২৫, ৩ অগ্রহায়ণ ১৪৩২
ই-পেপার

জন্ডিস মানে লিভারের সমস্যা নয়, রোগের লক্ষণ মাত্র

আপডেট : ০৭ জুলাই ২০২৫, ১০:০৮ এএম

জন্ডিস আসলে কোনো রোগ নয়, রোগের লক্ষণ মাত্র। এটি যকৃতে প্রদাহ কিংবা পিত্তাশয়, পিত্তনালী বা অগ্ন্যাশয়ের বিভিন্ন সমস্যার উপসর্গ হল জন্ডিস।

রক্তে বিলিরুবিন নামের উপাদানটা বেড়ে গেলে জন্ডিস দেখা দেয়। বিলিরুবিন বাড়ার বিভিন্ন কারণ আছে। যেমন লোহিত রক্তকণিকার অতিরিক্ত ভেঙে যাওয়া, বিলিরুবিনের বিপাকজনিত কোনো সমস্যা, পিত্তরস লিভার থেকে ক্ষুদ্রান্ত্রে যাওয়ার পথে বাধা পাওয়া ইত্যাদি।

ভ্যাপসা গরম, কখনও ঝমঝমিয়ে বৃষ্টি, এসময় সংক্রমণ জনিত রোগ বেশি হয়। হজমে সমস্যা, পেটের গোলমাল, ডায়রিয়া লেগেই থাকে। অজান্তেই কখন জন্ডিস বাসা বাঁধবে শরীরে, বুঝতে অনেক দেরি হয়ে যায়। মূলত জন্ডিস মানেই যে কেবল লিভারের সমস্যা নয়। কী কারণে রোগটি হচ্ছে, তা জানা খুব জরুরি।

রক্তে যে লোহিত রক্তকণিকা (আরবিসি) রয়েছে, তার আয়ু চার মাস। প্রতিদিন মানুষের শরীরে কিছু কিছু কণিকা ভেঙে যায়। এই ভাঙনের ফলে আরবিসি থেকে বিলিরুবিন নিঃসৃত হয়ে রক্তে মেশে। বিলিরুবিন একটি যৌগ পদার্থ। এর স্বাভাবিক মাত্রা ১ বা ১.২ মিলিগ্রাম প্রতি ডেসিলিটার-এর নীচেই থাকে। রক্তের মাধ্যমে বিলিরুবিন প্রথমে পৌঁছায় লিভারে। এরপর লিভার থেকে বাইল ডাক্ট হয়ে যায় খাদ্যনালিতে। শেষে মল ও মূত্রের সঙ্গে কিছু পরিমাণে বেরিয়ে যায়। যদি এ পর্বটি বাধাপ্রাপ্ত হয়, অর্থাৎ, বিলিরুবিন ঠিকমতো বেরোতে না পারে, তখন এর মাত্রা বাড়তে থাকে ও জন্ডিস হয়। 

মেডিসিন চিকিৎসক অরুণাংশু তালুকদারের মতে, কোনো ব্যক্তির হেমোলাইটিক অ্যানিমিয়া (থ্যালাসেমিয়ার মতো রোগ, যেখানে রক্ত ভেঙে যায় তাড়াতাড়ি) হলে অথবা কোনো সংক্রমণ জনিত রোগ হলে লোহিত কণিকা ভেঙে যাওয়ার ওই পর্বটি বাধা পায়। ফলে জন্ডিস হয়।

আবার অনেক সময়েই গলস্টোন কিংবা গল ব্লাডার কিংবা প্যানক্রিয়াটিক ক্যানসারের কারণেও রোগীর জন্ডিস হতে পারে। এই দুটি ক্ষেত্রে লিভারের কোনো ক্ষতি হয় না। গরমকালে জন্ডিসের প্রকোপ বাড়ে। কারণ অনেকেই যেখান-সেখান থেকে জল পান করেন। আর রক্তবাহিত বা দেহরসের মাধ্যমে যে জন্ডিস হয়, তা প্রধানত হল হেপাটাইটিস বি আর হেপাটাইটিস সি।

কোন কোন উপসর্গ খেয়াল করতেই হবে?

উপসর্গ দেখেই চিকিৎসকেরা প্রাথমিকভাবে তা ধরে নিতে পারেন। যেমন, চোখের যে অংশটা সাদা (কনজাঙ্কটাইভা) তা কিছুটা হলুদ হয়ে যায়। এ ছাড়াও জিভের নিম্নাংশ, হাতের তালু হলুদ হলেও তা জন্ডিসের লক্ষণ বলে ধরে নেওয়া হয়। চিকিৎসক রোগীকে দেখে নিয়ে সাধারণত রক্তে বিলিরুবিনের মাত্রা জানতে লিভার ফাংশন টেস্ট করতে বলেন। সেই রিপোর্ট দেখেই বোঝা যায়, সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির জন্ডিস হয়েছে কি না।

কীভাবে বুঝবেন

জন্ডিস হলে চোখ ও প্রস্রাবের রং হলুদ হয়ে যায়। অরুচি, বমি ভাব, বমি হয়ে যাওয়ার সমস্যা দেখা দেয়। চুলকানি হতে পারে। পেটে ব্যথা, পায়খানার রং সাদাটে বা ফ্যাকাশে হওয়া, জ্বর জ্বর লাগা, শরীর অনেক দুর্বল লাগা। ওজন কমে যেতে পারে। কোনো কোনো রোগে রক্ত বমি, কালো পায়খানা হতে পারে, পেটে কোনো লাম্প বা চাকা অনুভূত হওয়া, পেটে পানি আসা বা শরীর ফুলে যাওয়ার মতো জটিলতা দেখা দিতে পারে।

জন্ডিসের চিকিৎসা

জন্ডিসের লক্ষ্মণ দেখা দিলে অবিলম্বে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ নিন। পূর্ণ বিশ্রামে থাকুন। পর্যাপ্ত পানি, ডাবের পানি, তরলজাতীয় খাবার খান। চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া যেকোনো ওষুধ পরিহার করুন। বিশেষ করে হারবাল, কবিরাজি ওষুধ গ্রহণ, ঝাড়ানো ইত্যাদি থেকে বিরত থাকুন। এতে পরিস্থিতি আরও খারাপ হতে পারে। প্রয়োজনে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শে হেপাটাইটিস বি ও হেপাটাইটিস সি ভাইরাসের চিকিৎসা নিন।

প্রতিরোধে সচেতনতা

নিরাপদ বিশুদ্ধ পানি ও খাবার খান, হেপাটাইটিস বি ভাইরাসের টিকা নিন, আপনার পরিবারে ক্রনিক লিভার ডিজিজের রোগী থাকলে আপনিও লিভার বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ নিন, মদপান থেকে বিরত থাকুন ও লিভারের চর্বি নিয়ন্ত্রণে রাখুন।

RK/SN
আরও পড়ুন