ঢাকা
সোমবার, ১৭ নভেম্বর ২০২৫, ২ অগ্রহায়ণ ১৪৩২
ই-পেপার

অতিরিক্ত ওরস্যালাইন খাওয়ায় হতে পারে মারাত্মক বিপদ

আপডেট : ১৯ অক্টোবর ২০২৫, ০৬:৫৬ পিএম

গরম, ডায়রিয়া বা পানিশূন্যতায় দ্রুত শক্তি ফেরাতে ওরস্যালাইন একটি বহুল প্রচলিত ও কার্যকর সমাধান। তবে স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা সতর্ক করছেন যে, চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া ভাবে ওরস্যালাইন সেবন উপকারের বদলে মারাত্মক ক্ষতির কারণ হতে পারে, বিশেষ করে নির্দিষ্ট কিছু শারীরিক সমস্যায় আক্রান্ত ব্যক্তিদের জন্য।

সাধারণত শরীর থেকে লবণ-পানি বেরিয়ে গেলে তার ভারসাম্য ফিরিয়ে আনতে ওরস্যালাইন অত্যন্ত জরুরি। কিন্তু অনেকেই সাধারণ ক্লান্তি বা সামান্য অবসাদ দূর করতে একে সাধারণ পানীয়ের মতো ব্যবহার করেন, যা ডেকে আনতে পারে গুরুতর স্বাস্থ্যঝুঁকি।

বিশেষজ্ঞদের মতে, নিম্নলিখিত ব্যক্তিদের ক্ষেত্রে ওরস্যালাইন ব্যবহারে বিশেষ সতর্কতা অবলম্বন করা উচিত।

যেসব ব্যক্তির ক্ষেত্রে ওরস্যালাইন ব্যবহারে সতর্কতা প্রয়োজন

  • ডায়াবেটিস রোগী: ওরস্যালাইনে থাকা গ্লুকোজ রক্তে শর্করার পরিমাণ দ্রুত বাড়িয়ে দিতে পারে, যা ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য বিপজ্জনক।
  • কিডনি সমস্যায় আক্রান্ত ব্যক্তি: ওরস্যালাইনের অতিরিক্ত লবণ ও খনিজ কিডনির ওপর বাড়তি চাপ সৃষ্টি করে। যাদের কিডনির কার্যক্ষমতা দুর্বল, তাদের ক্ষেত্রে এটি কিডনিকে আরও ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারে।
  • উচ্চ রক্তচাপ ও হৃদরোগী: এর সোডিয়াম রক্তচাপ বাড়িয়ে দিতে পারে। ফলে উচ্চ রক্তচাপ বা হৃদরোগে আক্রান্ত ব্যক্তিদের শারীরিক জটিলতা বাড়ার আশঙ্কা থাকে।
  • কারণ ছাড়া নিয়মিত সেবনকারী: ডায়রিয়া বা অন্য কোনো নির্দিষ্ট কারণ ছাড়া যারা নিয়মিত ওরস্যালাইন খান, তাদের শরীরে ইলেকট্রোলাইটের ভারসাম্য নষ্ট হয়ে যেতে পারে।
  • ক্রীড়াবিদ বা গরমে ক্লান্ত ব্যক্তি: খেলাধুলা বা অতিরিক্ত গরমে ক্লান্ত হলে অনেকেই শক্তি ফেরাতে ওরস্যালাইন খান। কিন্তু এ সময় সাধারণ পানি বা ফলের রসই যথেষ্ট। অপ্রয়োজনে ওরস্যালাইন খেলে পেট খারাপ বা শরীরের খনিজ ভারসাম্যে গড়মিল হতে পারে।
  • বয়স্ক ও দুর্বল রোগী: বয়স্ক ব্যক্তিদের অঙ্গপ্রত্যঙ্গ তুলনামূলক দুর্বল থাকায় অতিরিক্ত লবণ ও গ্লুকোজ তাদের শরীরে নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে।
  • চিকিৎসা এড়িয়ে চলেন যারা: অনেকেই অসুস্থতার মূল কারণ অনুসন্ধান না করে শুধু ওরস্যালাইনের ওপর নির্ভর করেন। এতে ভেতরের সংক্রমণ বা অন্য কোনো জটিল রোগ নির্ণয়ে দেরি হতে পারে, যা পরিস্থিতি আরও জটিল করে তোলে।

চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া অতিরিক্ত ওরস্যালাইন সেবনে রক্তে সোডিয়ামের মাত্রা বেড়ে গিয়ে (হাইপারনেট্রেমিয়া) মাথাব্যথা, খিঁচুনি, পেশি দুর্বলতা, রক্তচাপ বৃদ্ধি এবং কিডনিতে পাথর জমার মতো সমস্যা দেখা দিতে পারে।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ওরস্যালাইন নিঃসন্দেহে একটি জীবনরক্ষাকারী উপাদান, তবে এটি কোনো সাধারণ পানীয় বা এনার্জি ড্রিংক নয়। এটি একটি ঔষধ, যা নির্দিষ্ট প্রয়োজনে ব্যবহার করা উচিত। 

  • পানিশূন্যতা দেখা দিলে চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।
  • ডায়রিয়া বা অতিরিক্ত ঘামের মতো সুনির্দিষ্ট কারণ ছাড়া ওরস্যালাইন গ্রহণ থেকে বিরত থাকুন।
  • শরীরে কোনো জটিল লক্ষণ দেখা দিলে ওরস্যালাইনের ওপর নির্ভর না করে দ্রুত চিকিৎসকের শরণাপন্ন হোন।
  • সঠিক সময়ে ও সঠিক পরিমাণে গ্রহণ করলে ওরস্যালাইন জীবন বাঁচায়, কিন্তু ভুল ব্যবহারে তা বিপদের কারণও হতে পারে।
NB
আরও পড়ুন