মেঘপরী
রোদের উঠোনে উল্টে গেলো শুভ্র মেঘের পিরিচ
কদমের ডালে হেসে ওঠে কচি পাতার সিরিজ
তমালের বনে গাঢ়স্বরে ডাকে উদাস ডাহুক
জলাশয়ে দৃষ্টি ফেলে চিল খুঁজে রুই,কাতলের বুক।
বৃষ্টিগন্ধে স্ফীত হয় মৃতপ্রায় ধূসর চাতাল
মেঘ বালিকার নগ্নরূপ দেখে মনমাঝি মাতাল
বিবস্ত্র বর্ষণে ভাঙে রিরংসার বালিয়াড়ি বাঁধ
নদী-নালা জলে একাকার ভুলে বিরোধ বিবাদ।
জলের বিম্বে কি ধরা পড়ে ঊরু নিতম্বের ভাঁজ
রোদের কণায় জমা থাকে তার শুদ্ধ কারুকাজ
নীলাভ শেমিজ পরে ওড়ো শুভ্র ডানাঅলা পরী
ডানাহীন রাতে ছিলে তুমি পাশে নিত্য সহচরী।
আকাশ-মানবী তুমি সপ্তরঙা আকাশেই থাকো
মাটির মননে কেনো কর্দমের ঘৃণ্যছবি আঁকো
নির্বোধ বৈভবে ভাঙো পুণ্যতোয়া বুকের দু'পাড়
প্রকৃতির প্রেমে চলো গড়ে তুলি মাটির সংসার।
কালের করাত
অদৃশ্য ইস্পাতে গড়া স্বয়ংক্রিয় কালের করাত
শাণিত শরীরে দৈত্যদন্ত কাটে বুকের গরাদ
চারপাশে দেখি কতো প্রলম্বিত মানবিক হাত
তবু কুটিল কর্তন মুহুর্মুহু শুনি দিনরাত।
পানপাত্র ভেঙে চুরমার নাড়ি রূপোর চামচ
সমাজ সংসারে নিত্য ডাকে মেকি প্রেমিক কামজ
গিটারের ছড়ে গলা সেধে তোলে কোমল গান্ধার
অকৃপা হাতের স্পর্শে চোখে নামে নিকষ আন্ধার।
রক্তের অক্ষরে প্রতিদিন লিখো জীবন বিধান
খবর কলামে লেখা হয় শুধু তোমার বিধান
বিরহী যক্ষের জ্বালা যত্নে পুষি বিক্ষত অন্তরে
অনার্য পোয়াতি তুমি শুভ্র শুচিতার মন্বন্তরে।
অলীক নেকাব পরে যতো করো নিপুণ চাতুরী
পেছনে উদ্যত যেন লৌহদণ্ড, কঠিন হাতুড়ি।
বিশ্বাসের বিশ্বায়ন
সারাক্ষণ ভাঙনের শব্দ শুনি
জীবনের চারিভিতে ভাঙনের কূর উম্মাদনা
ভাঙতে ভাঙতে এক-অভিন্ন আমরা
বিশীর্ণ অযুত নিযুতাংশে
তলানিতে অবশিষ্ট বিতৃষ্ণ দ্রবন।
যদিও দু'জন খুব কাছাকাছি তবু
কথা হয় না....
কেবল নির্বাক দৃষ্টি বিনিময়
পেরিয়ে এতোটা পথ,হাতের বাঁধন গেছে খুলে
চেতনায় স্নায়বিক ঝড়,বিশ্লিষ্ট সাজানো ঘরবাড়ি
বিরুদ্ধ সীমায় জেগে পরস্পর তাক করছি সুতীক্ষ্ণ তীর
বিভক্তির কালোরেখা প্রলম্বিত দিগন্ত অবধি....
তবু ঋতুর নিয়ম ভেঙে দু'একটি কোকিল খুবই আশাবাদী
তাদের নন্দিত কণ্ঠে মানবিক গান
নিষ্পত্র শীতের শেষে হয়তো আবার বসন্ত আসবে
আশাহত দু'চোখের সেই শুষ্ক নদী ফিরে পাবে গতিধারা
ক্ষয়িত ভগ্নাংশগুলো আবার নিটোল জোড়া দিয়ে
. তৈরি হবে সম্পর্কের মসৃণ সড়ক
আমাদের বিশ্বাসের বিশ্বায়নে।
