ঢাকা
সোমবার, ১৭ নভেম্বর ২০২৫, ২ অগ্রহায়ণ ১৪৩২
ই-পেপার

বৃষ্টির মহাকাব্য ॥  শামীমা শওকত লাভলী 

আপডেট : ১৭ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ০১:৩৭ এএম

এই যে ঝরছ তুমি অবিরাম
স্থান-ক্ষণভেদে সুর তাল লয়ে আছে ওঠানামা
কখনো উচ্চ সুরে কখনো মধ্যম কখনো 
একেবারেই শব্দহীন নিস্তব্ধ থমথম।

যে বিবাহযাত্রাটি ছিল আজ
বর-কনে উভয়ের বাড়ির লোকজন
আত্মীয়-পরিজন বিরক্তিই প্রকাশ করেছে।
দিলো আজ সব কিছু মাটি করে।
যে প্রেমিকযুগল প্রথম সাক্ষাতে মিলিত হয়েছে,
তাদের আনন্দ ধরে না। ভিজতে ভিজতে
ঠাণ্ডায় কাঁপতে কাঁপতে একে অন্যের মুষ্টিবদ্ধ হাত
আরও শক্ত করে আঁকড়ে ধরে 
আর উচ্ছল হাঁসিতে ফেটে পড়ে।

অফিসফিরতি সাধারণ জনগণের 
কপালে বিরক্তি। ছাতা মাথায়, কেউ কেউ কাকভেজা
হয়ে দাঁড়িয়ে পথের ধারে বাসের প্রতিক্ষায়।
আরে বাবা এ-কি বৃষ্টি, থামার নাম গন্ধ নেই!

সদ্য বিবাহিত নব বধূটি মনে মনে খুশিতে আটখানা 
ঝরুক সারাদিন সারারাত বৃষ্টির গানের সাথে 
কাটবে বাসর, কাটবে আজ সারারাত। 
রোমান্টিক পুরুষটি স্ত্রীকে ডেকে বলে,
ওগো চা পর্বটি আজ বারান্দায় হলে কেমন হয়?
স্ত্রী উত্তর করে, তুমি যদি গান শোনাও।
রাস্তার প্রাণীগুলোর কাছে মনে হয়
আহা থামে না কেন এই অভিশাপ? 

যে কিশোরী বালিকাটি প্রেমে পড়েছে
জানালার পাশে বসে বৃষ্টির স্পর্শে কখনো 
গুনগুনিয়ে গান গাইছে আর ফোনের অপর প্রান্তের
মানুষটির সাথে গল্পের আলপনা আঁকছে।
আমি ভাবছি, বৃষ্টি মানেই তো খিচুড়ি, বেগুন ভাজা
সাথে মাংস ভুনা হলে তো কথাই নেই।
তাই হয়তো রান্না হচ্ছে কোনো কোনো ঘরে।

শহরের বৃক্ষরাজি, ছাদবাগানের গাছগুলো 
বৃষ্টিস্নাত শরীরে বন্য সৌন্দর্যে সেজেছে।
এ তো শহরের বৃষ্টির গল্প। ঐ দিকে...
ভাঙনের শব্দে নির্ঘুম রাত কাটাচ্ছে নদীর কূলের মানুষ।
স্কুলের ছাত্ররা অবাক বিস্ময়ে দেখলো 
তাদের স্কুলটা নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেলো!

বৃষ্টির জলে বাচ্চাদের চোখের লোনাজল একাকার হলো।
ছোট ছোট মনে হাজারো প্রশ্ন, এত বৃষ্টি কেন হয়
যে স্কুল ভেঙে বিলীন হয়?
কৃষকের কান্না গুরুগম্ভীর মেঘের ডাকে হারিয়ে যায়!
আকাশ ভেঙে পড়ে কৃষকের মাথায়
সারা বছরের খোরাক বুঝি বন্যা কেড়ে নেয়। 

সদ্যবিয়ে হওয়া মেয়েটি এই শ্রাবণে নাইওরের স্বপ্নে বিভোর ছিল
বর এসে খবর দিলো, অতি বর্ষণের বন্যায় শ্বশুরালয়ের
গ্রাম ডুব দিয়েছে জলের তলে, এই সময় যাওয়ার নয়।
গ্রামের জন্য ভালোবাসা, নিজের বাড়ির জন্য চিন্তা
বাবা-মা-ভাইদের জন্য হাপুস নয়নে কাঁদে মেয়েটি।
অবিরাম বৃষ্টিতে গ্রামের কোনো নিভৃত পল্লীতে 
যে মানুষের প্রাণটি আজ বিদায় নিলো পৃথিবী ছেড়ে
তার পরিবারের লোকদের শোক ছাপিয়ে বৃষ্টি ভেদ করে 
মৃতদেহের কবর খোড়া আর কেমন করে কবর পর্যন্ত দেহ নিয়ে যাবে 
সেটাই প্রধান বিষয় হয়ে দাঁড়ায়।

তুমুল এই বৃষ্টিতে সে কি বিপদ!
স্বজনদের বিলাপ ছাপিয়ে ওঠে বৃষ্টির বর্ষণ। 

আরও পড়ুন