দেশের টেলিযোগাযোগ খাতে বৈপ্লবিক পরিবর্তন আনতে 'বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ অধ্যাদেশ'-এর বড় ধরনের সংশোধনী প্রস্তাব অনুমোদন করেছে অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা পরিষদ।
বুধবার (২৪ ডিসেম্বর) প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত ৫২তম বৈঠকে এই ঐতিহাসিক সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। নতুন এই সংশোধনীতে নাগরিকের যোগাযোগের অধিকার সুরক্ষা, রাষ্ট্রীয় নজরদারির অপব্যবহার রোধ এবং টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিটিআরসির স্বাধীনতা নিশ্চিত করার ওপর সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে।
সংশোধিত আইনের সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য দিক হলো ‘ইন্টারনেট শাটডাউন’ বা সেবা বন্ধের পথ চিরতরে বন্ধ করা। ধারা ৯৭ অনুযায়ী, কোনো অবস্থাতেই ইন্টারনেট বা টেলিযোগাযোগ সেবা বন্ধ করা যাবে না। এছাড়া ধারা ৭১-এর আওতায় সিম ও ডিভাইস রেজিস্ট্রেশনের তথ্য ব্যবহার করে কোনো নাগরিকের ওপর নজরদারি বা হয়রানি করাকে দণ্ডনীয় অপরাধ হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে।
বিতর্কিত ন্যাশনাল টেলিকমিউনিকেশন্স মনিটরিং সেন্টার (এনটিএমসি) বিলুপ্ত করে ‘সেন্টার ফর ইনফরমেশন সাপোর্ট (CIS)’ প্রতিষ্ঠার বিধান রাখা হয়েছে। নতুন এই সংস্থাটি নিজে কোনো নজরদারি পরিচালনা করবে না; এটি কেবল আইনগত প্রয়োজনে নির্দিষ্ট তদারকি ও কারিগরি সহায়তা প্রদান করবে। জাতীয় নিরাপত্তা বা বিচারিক প্রয়োজনে ইন্টারসেপশনের সীমা ও পদ্ধতি এখন থেকে আরও স্পষ্ট এবং কঠোর আইনি কাঠামোর অধীন হবে।
বিটিআরসিকে মন্ত্রণালয়ের প্রভাবমুক্ত করে এর স্বায়ত্তশাসন ফিরিয়ে দেওয়া হয়েছে। এখন থেকে বিটিআরসিকে প্রতি চার মাস অন্তর গণশুনানি আয়োজন করতে হবে এবং সেই শুনানির অগ্রগতি ওয়েবসাইটে প্রকাশ করতে হবে। পাশাপাশি বিটিআরসির কর্মকাণ্ড তদারকি করতে সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতির নেতৃত্বে একটি ‘জবাবদিহিতা কমিটি’ গঠন করা হবে। জাতীয় গুরুত্বের বাইরে প্রায় সব ধরনের লাইসেন্স প্রদানের একক ক্ষমতা এখন থেকে বিটিআরসির হাতে থাকবে।
টেলিযোগাযোগ খাতে বিনিয়োগ বাড়াতে লাইসেন্সিং প্রক্রিয়া সহজ করা হয়েছে। অতিরিক্ত জরিমানা এবং পুনরাবৃত্ত জরিমানার হার কমানো হয়েছে। এছাড়া ‘স্পিচ অফেন্স’ বা বাকস্বাধীনতা সংক্রান্ত ধারাগুলো সংশোধন করে কেবল সহিংসতার আহ্বানকে অপরাধের আওতায় রাখা হয়েছে, যা সাইবার সুরক্ষা অধ্যাদেশ ২০২৫-এর সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ।
উপদেষ্টা পরিষদ জানিয়েছে, এই সংস্কারের মাধ্যমে বাংলাদেশের টেলিযোগাযোগ খাতকে জাতিসংঘ এবং আইটিইউ-সহ আন্তর্জাতিক মানদণ্ডে উন্নীত করা হলো, যা নাগরিকের গোপনীয়তা ও অধিকার নিশ্চিত করবে।
কারাবন্দিদের ভোটাধিকার নিশ্চিতে ইসির নির্দেশনা জারি
পোস্টাল ব্যালটে নিবন্ধনের সময় বাড়লো