ঈদুল ফিতরকে কেন্দ্র করে ঢাকা ছাড়তে শুরু করেছে ঘরমুখো লাখো মানুষ। গত কয়েক দিনের তুলনায় মহাসড়কগুলোতে বেড়েছে গাড়ি ও যাত্রীদের চাপ। এর মধ্যে গতকাল সোমবার (৮ এপ্রিল) ঢাকা এবং আশপাশের জেলাগুলোর গার্মেন্টসগুলো ছুটি হওয়ার পর থেকে মহাসড়কগুলোতে যাত্রী ও গাড়ির চাপ কয়েকগুণ বেড়ে গেছে। ফলে কয়েকটি মহাসড়কে তীব্র যানজটের সৃষ্টি হয়েছে। এতে ভোগান্তিতে পড়েছেন ঈদে বাড়ি ফেরা লাখো মানুষ। এ ছাড়া ঘরমুখো মানুষের কাছ থেকে নির্ধাধিত দামের তুলনায় কয়েকগুণ বেশি ভাড়া নেওয়ারও অভিযোগ উঠেছে।
ঢাকা-টাঙ্গাইল ও ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়ক
ঈদের আনন্দ পরিবারের সাথে ভাগাভাগি করতে বিভিন্ন শিল্প কারখানা অধ্যুষিত গাজীপুর থেকে লাখ লাখ গার্মেন্টস শ্রমিকসহ অন্যান্যে শ্রমিকেরা বাড়ি ফিরতে শুরু করেছেন। গতকাল অনেক গার্মেন্টস ছুটি হওয়ার পর গাজীপুরের ঢাকা-টাঙ্গাইল ও ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কে ঘরে ফেরা যাত্রীদের ঢল নেমেছে।
সরেজমিনে দেখা যায়, ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কের গাজীপুরের চন্দ্রার কয়েক কিলোমিটার এলাকাজুড়ে যাত্রীর অপেক্ষায় দাঁড়িয়ে থাকা গাড়ির দীর্ঘ সারি। কবিরপুর থেকে চন্দ্রা পার হয়ে ঈদ যাত্রার গাড়িগুলোর মহাসড়কের পাশে দাঁড় করিয়ে যাত্রী ওঠানো–নামানো করায় মহাসড়কে চলাচলকারী দূরপাল্লার যানবাহনগুলো গতি হারাচ্ছে। এতে মহাসড়কে যানজট তৈরি হয়েছে।
গাজীপুর ছাড়াও গাবতলী, আশুলিয়া, বাইপাইল, সাভার ও নবীনগর এলাকা থেকে ছেড়ে আসা বাসগুলো চন্দ্রা এলাকা পার হয়ে উত্তরবঙ্গের ২৩ জেলার উদ্দেশে ছেড়ে যাচ্ছে। মানুষের চাপ ও গাড়ির সংখ্যা বেড়ে যাওয়ায় এ পয়েন্টে থেমে থেমে যানজটের সৃষ্টি হচ্ছে। এ ছাড়া বেশি ভাড়া আদায়ের অভিযোগ করেছেন যাত্রীরা।
বঙ্গবন্ধু সেতু
বঙ্গবন্ধু সেতুর ওপর কয়েকটি গাড়ি বিকল হওয়ার কারণে ঢাকা-টাঙ্গাইল-বঙ্গবন্ধু সেতু মহাসড়কের ১৩ কিলোমিটার এলাকায় যানজট শুরু হয়েছে। মঙ্গলবার ভোররাত থেকে বঙ্গবন্ধু সেতুর পূর্বপ্রান্ত থেকে এলেঙ্গা পর্যন্ত থেমে থেমে যানজটের সৃষ্টি হয়। এতে ঈদে ঘরমুখো মানুষের দুর্ভোগ চরমে পৌঁছেছে।
বঙ্গবন্ধু সেতু বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী আহসানুল পাভেল জানান, সোমবার দিবাগত রাত ৯টার পর সেতুর ওপরে ১১টি গাড়ি বিকল হয়। সেগুলো তাৎক্ষণিক অপসারণ করাতে কিছুটা সময় লাগে। সেই সঙ্গে গত ২৪ ঘণ্টায় ৪৩ হাজার ৪২৭টি গাড়ি পার হয়। এতে যানজটের সৃষ্টি হয়েছে।

ঈদের খুশি ভাগাভাগি করতে ঢাকা থেকে রাজশাহী ফিরছেন ব্যাংক কর্মকর্তা আরিফুর রহমান। বঙ্গবন্ধু সেতুর পূর্ব পাশে এসে তীব্র যানজটে পড়েন তিনি। জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘এলেঙ্গা থেকে শুরু করে বঙ্গবন্ধু সেতু পর্যন্ত তীব্র যানজট। অনেকে বাসে, ট্রাকে, প্রাইভেটকারে, মোটরসাইকেলযোগে বাড়ি ফিরছে। কিন্তু এখানে এসে তীব্র যানজটে পড়েছি। এখানে অনেক যাত্রী গতকাল সন্ধ্যা ৭টার দিকে গাবতলী থেকে গাড়িতে উঠে আজ সকাল ৮টার দিকে সেতুর কাছাকাছি আসতে পেরেছে।’
যাত্রীদের অভিযোগ, ঈদযাত্রাকে কেন্দ্র করে কয়েক গুণ বাড়তি ভাড়া নেওয়া হচ্ছে। তবে পরিবহন সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ঢাকাগামী গাড়িতে যাত্রী না থাকায় খরচ ওঠাতে তারা বেশি ভাড়া আদায় করছেন।
নাওজোড় হাইওয়ে থানা–পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. শাহাদাত হোসেন বলেন, শেষ মুহূর্তে মানুষের ঢল বাড়ার পাশাপাশি গাড়ির চাপও বেড়ে গেছে। এতে মহাসড়কে গাড়ির গতি কিছুটা কম। তবে বিকেলের মধ্যেই পরিস্থিতি স্বাভাবিক হবে।
ঢাকা-চট্টগ্রাম ও ঢাকা-সিলেট মহাসড়ক
ঈদযাত্রায় গত কয়েক দিনের তুলনায় আজ নারায়ণগঞ্জে ঢাকা-চট্টগ্রাম ও ঢাকা-সিলেট মহাসড়কে গণপরিবহন ও ঘরমুখো মানুষের চাপ বেড়েছে। এই রুটে যানজট না থাকলেও নির্ধারিত ভাড়ার চেয়ে বেশি নেওয়া হচ্ছে বলে যাত্রীরা অভিযোগ করেছে। এ বিষয়ে বাস কাউন্টার পরিবহন চালকেরা বলছেন, কিছু পরিবহন কোম্পানি ঈদে দুই শ থেকে পাঁচ শ টাকা অতিরিক্ত ভাড়া নির্ধারণ করেছেন। তাই তাঁরা বেশি ভাড়া আদায় করছেন।
নারায়ণগঞ্জ–কাঁচপুর হাইওয়ে পুলিশের পরিদর্শক রেজাউল হক জানিয়েছেন, নারায়ণগঞ্জের দুটি মহসড়কের ৩০টি পয়েন্ট পুলিশের আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী যানজট ও যাত্রীদের দুর্ভোগ কমাতে কাজ চালিয়ে যাচ্ছে।
পাটুরিয়া ঘাট
ঈদের একদিন আগে কাটাপথে আসা যাত্রীদের চাপ বাড়লেও পূর্বের চেয়ে তুলনামূলক যাত্রীবাহী যানবাহনের চাপ কম দেখা গেছে। ভোগান্তি ছাড়া স্বস্তিতে পার হয়ে যাচ্ছেন দেশের দক্ষিণ–পশ্চিমাঞ্চলের ঈদে ঘরে ফেরা মানুষ।
বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ-পরিবহন করপোরেশন (বিআইডব্লিউটিসি) আরিচা কার্যালয়ের উপমহাব্যবস্থাপক শাহ মো. খালেদ নেওয়াজ জানান, পাটুরিয়া এবং আরিচা ফেরিঘাটে মোট ২২টি ফেরি স্ট্যান্ডবাই রাখা হয়েছে। ফেরিতে আসা গাড়িগুলো কোন অপেক্ষা ছাড়ায় স্বস্তিতে ফেরি পার হয়ে যাচ্ছে।
বিআইডব্লিউটিসির এই কর্মকর্তা বলেন, ‘ভোরের দিকে ছোট যানবাহনের চাপ থাকলেও বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে তা আবার কমতে থাকে। ঘাটে এখন যাত্রীবাহী যানবাহনের তেমন একটা চাপ না থাকলেও লঞ্চে পারাপারের জন্য কাটাপথে আসা যাত্রীদের চাপ আগের চেয়ে কয়েকগুণ বেড়েছে। তবে যাত্রী এবং যানবাহনের যতই চাপ বাড়ুক স্বস্তিতে পারাপারের সক্ষমতা আমাদের রয়েছে।’
ঢাকা-আরিচা ও নবীনগর-চন্দ্রা মহাসড়ক
সাভারের ঢাকা-আরিচা ও নবীনগর-চন্দ্রা মহাসড়ক দিয়ে রাজধানী ঢাকা থেকে ছেড়ে আসা যানবাহনগুলো কোনো ধরনের বাধা-বিপত্তি এবং ভোগান্তি ছাড়াই স্ব স্ব গন্তব্যে যেতে পারছে। তবে অন্যান্য স্বাভাবিক দিনের তুলনায় সড়কে যানবাহনের সংখ্যা অনেকটা কম রয়েছে। মঙ্গলবার সকাল থেকে সাভারের ঢাকা-আরিচা ও নবীনগর-চন্দ্রা মহাসড়কের এমন চিত্র দেখা যায়।
পুলিশ জানায়, সোমবার দুপুরের পর সাভার শিল্পাঞ্চলের পোশাক কারখানায় ছুটি হওয়ার পর লাখ লাখ মানুষ একযোগে সড়কে নেমে আসে এবং বাড়ি ফেরার চেষ্টা করে। গতকাল দুপুরের পর থেকে ধীরে ধীরে সেসব মানুষেরা সাভার শিল্পাঞ্চল ছেড়ে যাওয়ার কারণে আজ সড়কে তেমন যানবাহন ও যাত্রীর চাপ নেই। তবে গতকাল যেসব ঘুরমুখো মানুষ বাড়ি যাননি তারা আজ সকাল থেকে সড়কে এসে পরিবহন সংকটে পড়েছেন। এ জন্য অনেকেই ঝুঁকি নিয়ে ট্রাক-পিকআপে করে বাড়ি যাচ্ছেন তাঁরা।
এক্সপ্রেসওয়ে
জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এক্সপ্রেসওয়ের মুন্সিগঞ্জ প্রান্তে যানবাহনের অধিক চাপ রয়েছে। পদ্মা সেতুর সাতটি বুথে নিরবচ্ছিন্ন টোল আদায় অব্যাহত থাকলেও সেতুর টোল প্লাজায় যানবাহনের জটলা দেখা দিয়েছে। এতে হিমশিম খাচ্ছে কতৃপক্ষ। পদ্মা সেতুর টোল প্লাজায় অপেক্ষমাণ যানবাহনের দীর্ঘ সারি দেখা গেলেও মহাসড়কে যানবাহন চলাচল নিবিঘ্ন রয়েছে।

এদিকে মঙ্গলবার সকাল থেকে এক্সপ্রেসওয়েতে মোটরসাইকেলের আধিক্য দেখা গেছে। স্বচ্ছন্দে বাড়ি ফিরতে নিজের ব্যক্তিগত মোটরসাইকেল নিয়ে অনেকে বাড়ি ফিরছেন।
এ বিষয়ে পদ্মা সেতু সাইট অফিসের অতিরিক্ত পরিচালক মো. আমিরুল হায়দার চৌধুরী জানান, সোমবার রাত থেকে মহাসড়কে যানবাহনের অনেক বেড়ে গেছে। মঙ্গলবার সকাল থেকে যানবাহনের অধিক চাপ থাকায় এই রুটে আসা গাড়ি গুলোকে টোল প্লাজায় কিছু সময় অপেক্ষা করতে হচ্ছে। তবে মহাসড়কে অন্য কোথাও যানজট নেই।
