ঢাকা
সোমবার, ১৭ নভেম্বর ২০২৫, ২ অগ্রহায়ণ ১৪৩২
ই-পেপার

দেশে শিশু দারিদ্র্যের হার এখন ১৬ দশমিক ৪৯ শতাংশ

আপডেট : ০৭ মে ২০২৫, ০৯:২৪ পিএম

বাংলাদেশে শিশু দারিদ্র্যের বর্তমান চিত্র এক গভীর উদ্বেগের বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। সাধারণ অর্থনীতি বিভাগ (জিইডি) ও ইউনিসেফের যৌথ গবেষণায় প্রকাশিত সাম্প্রতিক প্রতিবেদনে দেখা গেছে, দেশে শিশু দারিদ্র্যের গড় হার ১৬ দশমিক ৪৯ শতাংশ। 

বুধবার (৭ মে) রাজধানীর শেরেবাংলা নগরের এনইসি সম্মেলন কক্ষে অনুষ্ঠিত একনেক সভায় মাসিক ইকোনোমিক আপডেট ও আউটলুক প্রকাশের সময় এ তথ্য জানানো হয়। সভায় সভাপতিত্ব করেন প্রধান উপদেষ্টা ও একনেকের চেয়ারপারসন, নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ ড. মুহাম্মদ ইউনূস।

প্রতিবেদন অনুযায়ী, গ্রামীণ অঞ্চলে শিশু দারিদ্র্যের হার শহরের তুলনায় দ্বিগুণেরও বেশি। গ্রামে এই হার ২০ দশমিক ১৫ শতাংশ, যেখানে শহরাঞ্চলে মাত্র ৮ দশমিক ২২ শতাংশ। এই পার্থক্য দেশের আর্থ-সামাজিক বৈষম্যের বাস্তব চিত্রকে সামনে আনে, যা সরকারের দারিদ্র্য বিমোচন নীতিতে নতুন করে গুরুত্ব আরোপের দাবি জানায়।

গবেষণায় স্পষ্টভাবে বয়সভিত্তিক বৈষম্য উঠে এসেছে। যে সকল শিশুরা বেশি ঝুঁকিতে রয়েছে-- 

শূন্য–৫ বছর: সবচেয়ে বেশি দারিদ্র্যের শিকার, হার ১৮ দশমিক ২ শতাংশ
৬–১৪ বছর: দারিদ্র্যের হার ১৬ দশমিক ৭ শতাংশ
১৫–১৭ বছর: দারিদ্র্যের হার ১৩ দশমিক ২ শতাংশ

শূন্য–৫ বছর বয়সী শিশুদের ক্ষেত্রে গ্রামীণ অঞ্চলে দারিদ্র্যের হার আরও ভয়াবহ, ২১ দশমিক ৪৪ শতাংশ। ৬–১৪ বছর বয়সে তা ২০ দশমিক ৬৩ শতাংশ, আর ১৫–১৭ বছর বয়সে ১৬ দশমিক ৫৬ শতাংশ। অর্থাৎ, সব বয়সেই গ্রামীণ শিশুদের দারিদ্র্যের শিকার হওয়ার সম্ভাবনা বেশি, যা তাদের শিক্ষা, পুষ্টি ও স্বাস্থ্যসেবায় সরাসরি নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে।

বাংলাদেশের বিভিন্ন বিভাগের মধ্যে শিশু দারিদ্র্যের হারও ভিন্ন:
রংপুর বিভাগ: সর্বোচ্চ ২৯ দশমিক ৯৯ শতাংশ
ময়মনসিংহ বিভাগ: ২৪ দশমিক ২৬ শতাংশ
চট্টগ্রাম বিভাগ: ১১ দশমিক ৯২ শতাংশ
ঢাকা বিভাগ: সবচেয়ে কম, ৯ দশমিক ৪৫ শতাংশ

রংপুর ও ময়মনসিংহের মতো অঞ্চলে উচ্চ দারিদ্র্য হার প্রমাণ করে, দেশব্যাপী শিশু কল্যাণে সমান সুযোগ সৃষ্টির জন্য আরও টার্গেটেড নীতি প্রয়োজন।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই গবেষণা দেশের শিশুদের মৌলিক চাহিদা ও পরিষেবা প্রাপ্তিতে বিদ্যমান দীর্ঘস্থায়ী অর্থনৈতিক ও সামাজিক চ্যালেঞ্জকে স্পষ্ট করে। শিশুদের পুষ্টি, স্বাস্থ্যসেবা, শিক্ষা এবং সুরক্ষা নিশ্চিত করতে সরকার, বেসরকারি সংস্থা ও আন্তর্জাতিক সহযোগীদের একসঙ্গে কাজ করতে হবে। এর জন্য প্রয়োজন-- লক্ষ্যভিত্তিক দারিদ্র্য বিমোচন কর্মসূচি, অঞ্চলভিত্তিক বাজেট বরাদ্দ বৃদ্ধি, শিশুবান্ধব সামাজিক সুরক্ষা প্রকল্প ও গ্রামীণ অবকাঠামো ও শিক্ষায় বিনিয়োগ।

বাংলাদেশ ২০৩০ সালের মধ্যে টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্য (SDG) অর্জনের যে প্রতিশ্রুতি নিয়েছে, শিশু দারিদ্র্য হ্রাস তার একটি গুরুত্বপূর্ণ সূচক। শিশুরা দেশের ভবিষ্যৎ, আর তাদের উন্নয়নে বিনিয়োগ না করলে সামগ্রিক উন্নয়ন টেকসই হবে না।

AHA
আরও পড়ুন