ঢাকা
সোমবার, ১৭ নভেম্বর ২০২৫, ২ অগ্রহায়ণ ১৪৩২
ই-পেপার

শহিদুল আলমের ভিডিওটি ‘প্রি-রেকর্ডেড’, সাজানো নয়: বাংলাফ্যাক্ট

আপডেট : ০৯ অক্টোবর ২০২৫, ০১:০৪ এএম

গাজার উপর ইসরায়েলি নৌ অবরোধ ভাঙার অভিযানে অংশ নেওয়া আন্তর্জাতিক নৌবহর ‘ফ্রিডম ফ্লোটিলার’ প্রচেষ্টা ব্যর্থ করে দিয়েছে ইসরায়েলি বাহিনী। ‘থাউজ্যান্ড ম্যাডলিনস’ নামে পরিচালিত এই অভিযানে অংশ নেওয়া ফ্লোটিলার নয়টি জাহাজই আটক করে এবং সেগুলোতে থাকা শতাধিক অধিকারকর্মীকে ধরে নিয়ে যায় ইসরায়েলের বন্দরে। আটককৃত অধিকারকর্মীদের মধ্যে রয়েছেন বাংলাদেশি আলোকচিত্রী ও দৃকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক শহিদুল আলমও।

 

তবে শহিদুল আলমকে আটকের পর সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তার একটি ভিডিওবার্তা প্রকাশ হলে তা নিয়ে ব্যাপক আলোচনার জন্ম দেয়। ভিডিওটি সাজানো ও মিথ্যা বলে বিভিন্ন মহল থেকে বিভ্রান্তি ছড়ানো হলে ফ্যাক্ট চেকিং সংস্থা প্রেস ইনস্টিটিউট বাংলাদেশের (পিআইবি) ফ্যাক্ট চেক ও মিডিয়া রিসার্চ টিম বাংলাফ্যাক্ট এর সত্যতা যাচাই করে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে।

 

বাংলাফ্যাক্ট তাদের অনুসন্ধানে জানিয়েছে, গাজাগামী ফ্লোটিলা থেকে আটক শহিদুল আলমের ভিডিওবার্তাটি প্রি-রেকর্ডেড, মোটেও সাজানো নয়।

 

শহিদুল আলমের ফেসবুক পেজে বাংলাদেশ সময় সকাল ১০টা ১৭ মিনিটে পোস্ট করা ওই ভিডিওতে তাকে বলতে শোনা যায়, যদি আপনারা এই ভিডিওটি দেখে থাকেন তাহলে বুঝবেন আমাদেরকে ইসরাইলি দখলদার বাহিনী আটক ও অপহরণ করেছে।

 

বাংলাফ্যাক্ট জানায়,ভিডিওটি ঘিরে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বিভিন্ন বিভ্রান্তি ছড়ানো হচ্ছিল। শেখ হাসিনার সাবেক উপ-প্রেসসচিব মো. আশরাফুল আলম খোকন ভিডিওটির স্ক্রিনশট শেয়ার করে ব্যঙ্গ করে প্রশ্ন তোলেন, আটক করা হলে শহিদুল আলম কীভাবে ভিডিও রেকর্ড করে পোস্ট দিলেন। আওয়ামী লীগ ঘনিষ্ঠ একাধিক ফেসবুক পেজ থেকেও একই ধরনের মন্তব্য ছড়ানো হয়।

 

বাংলাফ্যাক্ট আরও জানায়, ভিডিওতে শহিদুল আলমের 'যদি আপনারা এই ভিডিওটি দেখে থাকেন...'—এই শর্তযুক্ত বাক্যটিই প্রমাণ করে যে এটি আগে থেকে রেকর্ড করা। ফ্লোটিলায় অংশ নেওয়া অধিকারকর্মীরা আটক হওয়ার আগেই এমন ভিডিও প্রস্তুত রাখেন, যা আটক হওয়ার পর তাদের পক্ষ থেকে প্রকাশ করা হয়। চলতি বছরের জুনেও ‘ম্যাডলিন’ জাহাজে অংশ নেওয়া কর্মীরা আটক হওয়ার পর অনুরূপ প্রি-রেকর্ডেড ভিডিওবার্তা প্রকাশ করেছিলেন।

 

অনুসন্ধান টিম নিশ্চিত করেছে যে কনশানস জাহাজের যাত্রীরা যে ইসরায়েলি বাহিনীর হাতে আটক হয়েছেন, সেই তথ্য আলজাজিরা, অ্যাসোসিয়েটেড প্রেস, বিবিসি ও টাইমস অব ইসরাইল-এর প্রতিবেদনে নিশ্চিত করা হয়েছে। গ্লোবাল সুমুদ ফ্লোটিলা এবং ইসরায়েলি কর্তৃপক্ষ উভয় পক্ষ থেকেই আটকের তথ্য প্রকাশিত হয়েছে।

 

আলোচিত ভিডিওটি পোস্ট করার প্রায় দুই ঘণ্টা পূর্বে শহিদুল আলম ‘Israelis approaching conscience’ লিখে আরেকটি ১ মিনিট ১৫ সেকেন্ডের ভিডিও পোস্ট করেছিলেন, যা ইঙ্গিত দেয় যে তারা ইসরায়েলি বাহিনীর আগমন সম্পর্কে নিশ্চিত ছিলেন।

 

শহিদুল আলমের ফেসবুক পেজে একটি বিজ্ঞপ্তি দিয়ে জানানো হয়েছে, তিনি মুক্ত না হওয়া পর্যন্ত তার পেজটি Bangladesh Stands With Palestine এবং Free Shahidul অ্যাক্টিভিস্টরা পরিচালনা করবেন।

 

বাংলাফ্যাক্ট তাদের প্রতিবেদনে উল্লেখ করেছে যে, আওয়ামী লীগ সরকারের নিপীড়ন ও দমননীতির বিরুদ্ধে দীর্ঘদিন ধরে সোচ্চার থাকায় শহিদুল আলমকে ঘিরে একটি মহল পরিকল্পিতভাবে অপতথ্য ও বিভ্রান্তি ছড়াচ্ছে।

 

ফ্যাক্টচেকিং প্রতিষ্ঠানগুলো প্রমাণ পেয়েছে যে, গত বছর থেকে ভারতীয় গণমাধ্যম এবং ভারত থেকে পরিচালিত বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম, পাশাপাশি দেশেও বিভিন্ন ফেসবুক অ্যাকাউন্ট থেকে বাংলাদেশকে জড়িয়ে নানা বিষয়ে (অন্তর্বর্তী সরকার, খাগড়াছড়ি, চব্বিশের আন্দোলন ইত্যাদি) গুজব ও ভুয়া তথ্য প্রচারের হার বৃদ্ধি পেয়েছে। এই প্রেক্ষাপটে বাংলাদেশের ফ্যাক্ট চেকিং প্রতিষ্ঠান বাংলাফ্যাক্ট জনগণের কাছে সঠিক তথ্য পৌঁছে দিতে কাজ করছে।সূত্র: বাসস

HN
আরও পড়ুন