ঢাকা
মঙ্গলবার, ১৮ নভেম্বর ২০২৫, ৩ অগ্রহায়ণ ১৪৩২
ই-পেপার

অন্তর্বর্তী সরকার ১৫ মাসে যা করেছে, অতীতে কেউ তা পারেনি: প্রেস সচিব

আপডেট : ১৮ নভেম্বর ২০২৫, ১২:২৭ পিএম

বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকার ১৫ মাসে যা করেছে, অতীতে তা কেউ করতে পারেনি বলে মন্তব্য করেছেন প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম।

মঙ্গলবার (১৮ নভেম্বর) সকালে দেওয়া এক ফেসবুক স্ট্যাটাসে তিনি এ মন্তব্য করেন।  

‘অন্তর্বর্তী সরকার: নামেই শুধু সরকার, আসলে এক প্রকার এনজিও-গ্রাম’ শীর্ষক স্ট্যাটাসে শফিকুল আলম লিখেছেন, অনেকের দৃষ্টিতে এটি বাংলাদেশের ইতিহাসে সবচেয়ে দুর্বল প্রশাসন— এতটাই দুর্বল যে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র পর্যন্ত এর সঙ্গে পারস্পরিক শুল্ক চুক্তি করতে আগ্রহী হয়নি!

তিনি আরও লিখেছেন, এর নেতাদের প্রায়ই ভীত বা অদক্ষ বলে মনে হয়—রাস্তাঘাটে নিয়ন্ত্রণ রাখতে ব্যর্থ হয়েছেন এমন এক সময়ে, যখন ৫০০ দিনে ১,৭০০টির বেশি বিক্ষোভ হয়েছে! তারা যেন নতুন ও অদক্ষ, আইন পাস করতেও হিমশিম খাচ্ছেন, প্রয়োগ তো দূরের কথা! অন্তর্বর্তী সরকার বারবার তুলনামূলক ছোট বা অখ্যাত গোষ্ঠীর চাপের সামনে নতি স্বীকার করেছে!

প্রেস সচিব লিখেছেন, গত ১৫ মাসে এই সরকারকে অক্রিয়তা ও অযোগ্যতার অভিযোগে ঘিরে ফেলা হয়েছে। অনেকেই এটিকে ব্যঙ্গ করে বলেন, এটি এক ‘কিছু না করা, মাখন-খাওয়া দল’—যারা কাকতালীয়ভাবে ক্ষমতায় এসেছে, কিছুই করতে পারেনি, আর এখন অপমানজনক নিরাপদ প্রস্থানের পথ খুঁজছে!

তিনি লিখেছেন, তবুও পেছনে তাকিয়ে আমি দৃঢ়ভাবে বলি—এটি গত কয়েক দশকে বাংলাদেশের সবচেয়ে তাৎপর্যপূর্ণ সরকারগুলোর একটি। তারা তাদের প্রায় সব লক্ষ্যই অর্জন করেছে।

স্ট্যাটাসে শফিকুল আলম অন্তর্বর্তী সরকারের বিভিন্ন অর্জনের কথা তুলে ধরেন। সেগুলো হলো-

শান্তি ও স্থিতিশীলতা
বিপ্লব-পরবর্তী প্রতিশোধমূলক সহিংসতা বন্ধ হয়ে দেশে শান্তি ও স্থিতিশীলতা ফিরে এসেছে।

মার্কিন শুল্কচুক্তিতে অগ্রগতি
কোনো লবিং ফার্ম নিয়োগ ছাড়াই যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে গুরুত্বপূর্ণ অগ্রগতি হয়েছে।

রেকর্ড আইন প্রণয়ন
১৫ মাসেই রেকর্ডসংখ্যক আইন পাস হয়েছে, যার মধ্যে শ্রম আইন সংস্কার রয়েছে।

ঐতিহাসিক রাজনৈতিক প্ল্যাটফর্ম
জুলাই ডিক্লারেশন ও জুলাই চার্টার ভবিষ্যৎ রাজনীতির একটি নতুন পথরেখা তৈরি করেছে।

বিচার বিভাগ শক্তিশালীকরণ
সুপ্রিম কোর্ট নিম্ন আদালতের ওপর নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করেছে, ফলে রাজনৈতিক হস্তক্ষেপে মামলা ও জামিন প্রভাবিত করা কঠিন হবে।

বৈদেশিক বিনিয়োগ বৃদ্ধি
ইউরোপীয় শীর্ষ বন্দর পরিচালনাকারী প্রতিষ্ঠান লালদিয়া টার্মিনালে বিনিয়োগের চুক্তি করেছে, যা দেশের ইতিহাসে সবচেয়ে বড় ইউরোপীয় বিনিয়োগ।

পররাষ্ট্রনীতির নতুন কাঠামো
নতুন নীতিমালা বাংলাদেশকে ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলে একটি গুরুত্বপূর্ণ অবস্থানে দাঁড় করিয়েছে।

অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা
অর্থনীতি পুনরায় উন্নয়নমুখী হয়েছে। ব্যাংক খাতের লুটপাট কমেছে, টাকা স্থিতিশীল হয়েছে এবং খাদ্যস্ফীতি ১৪ শতাংশ থেকে কমে ৭ শতাংশে নেমেছে।

জবাবদিহিতা প্রতিষ্ঠা
অতীতের নির্যাতন ও অপব্যবহারের বিরুদ্ধে আদালতে জবাবদিহিতা শুরু হয়েছে এবং শেখ হাসিনাকেও তার অবস্থান বুঝিয়ে দেওয়া হয়েছে।

গুম ও রাজনৈতিক সহিংসতার অবসান
জোরপূর্বক গুম বন্ধ হয়েছে এবং রাজনৈতিক সহিংসতানির্ভর রাজনীতি নিষ্ক্রিয় হয়েছে।

সংস্কৃতির জাগরণ
নতুন ডকুমেন্টারি ও সাংস্কৃতিক আন্দোলন জনমত তৈরি করেছে, যাকে অনেকে ‘ফারুকী ইফেক্ট’ বলছেন।

নিরাপত্তা সংস্থার সংস্কার
র‍্যাব আইন মেনে কাজ করছে, গোয়েন্দা সংস্থাগুলো বিরোধীদের হয়রানি কমিয়েছে এবং গত ১৬ মাসে কোনো সাজানো ক্রসফায়ারের অভিযোগ ওঠেনি।

মতপ্রকাশের স্বাধীনতা
সংবাদমাধ্যম ও মতপ্রকাশের স্বাধীনতা পুনরুদ্ধার হয়েছে।

সবশেষে তিনি লিখেছেন, আমি আরও বলতে পারতাম। আমাদের ইতিহাসের এক আগ্রহী পাঠক হিসেবে আমার বিশ্বাস বাংলাদেশের ইতিহাসে এত অল্প সময়ে কোনো সরকার এত কিছু অর্জন করতে পারেনি, যতটা অন্তর্বর্তী সরকার (IG) এই পনেরো মাসে করেছে।

SN
আরও পড়ুন