আনোয়ারা শিল্প ও লোকালয়ে গত কয়েক বছর যাবত একটি ব্যতিক্রমী সমস্যা শুরু হয়েছে। কয়েকটি সম্ভবত দলছুট বন্য হাতি এলাকায় আগমন করে। দিনে বড় ঝোপঝাড়ে লুকিয়ে থাকে আর রাত হলে খাবারের খোঁজে বের হয়। অবাধে বিচরণ করে শিল্পাঞ্চল ও আশেপাশের জনবসতি এলাকায়। বাড়িঘর দোকানপাটে খাবারের জন্য হামলা করে। বন্য হাতির আক্রমণে বহু বাড়িঘর ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছ। বহু নিরীহ মানুষ মৃত্যু হয়েছে। কিছুদিন পূর্বে হাতির আক্রমণে এক কোরিয়ান বিনিয়োগকারী মারাত্মক আহত হয়ে হাসপাতালে নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে আছে।
সমস্যা লোকাল হলেও সমাধান করার জন্য সরকারি উদ্যোগ খুবই প্রয়োজন। বিভিন্ন দেশে বন্য হাতিকে লোকালয় থেকে নিরাপদে স্থানান্তরিত করার দক্ষ লোকবল ও কারিগরি ব্যবস্থা আছে।
পৃথিবীতে হাতির আবাসস্থল মূলত এশিয়াও আফ্রিকা। এর মধ্যে আফ্রিকা অঞ্চলে হাতির সংখ্যা বেশি। সবচেয়ে বেশি হাতির বিচরণ করে আফ্রিকার বতসোয়ানায়। হাতির শুমারি অনুসারে ১,৩০,০০০ হাতি আবাসস্থল বতসোয়ানা।
বাংলাদেশে হাতি বিচরণ অঞ্চল বান্দরবান, কক্সবাজারের আশপাশের এলাকা এবং ময়মনসিংহের সীমান্তবর্তী অঞ্চল। ২০১৬ সালের হিসাব অনুসারে বাংলাদেশে হাতির সংখ্যা ৪৫৭টি। হাতি বন ও জীববৈচিত্র্যের অংশ। এ দেশে হাতির সংখ্যা কম তারপর বন উজাড় হওয়ায় কারণে সময়ের সাথে আরো কমে গেছে। সেজন্য বাংলাদেশে লোকালয়ে বন্য হাতির উপদ্রব তেমন একটা শোনা যায় না।
গত কয়েক বছর ধরে কক্সবাজার, মহেশখালী ও বান্দরবান অঞ্চল আশেপাশে অনেক ছোট বড় ও মেগা প্রকল্পের কাজ শুরু হয়েছিল। ফলে ওই অঞ্চলে হাতির স্বাভাবিক আবাসস্থল, খাদ্য ও বিতরণে কিছু সমস্যা সৃষ্টি হয়েছে। হাতির খাবার সংকট সৃষ্টি হলে তারা অন্য এলাকায় খাবারের জন্য গমন করবে এটা স্বাভাবিক। গত চার পাঁচ বছর পূর্বে কয়েকটা বন্য হাতি সম্ভবত খাদ্য সংকটে আনোয়ারা অঞ্চলে চলে আসে।
আনোয়ারা অঞ্চল চট্টগ্রামের গুরুত্বপূর্ণ এলাকা। বর্তমানে এখানে সরকারি ও বিদেশি কয়েকটি বড় বড় সার কারখানা আছে। দেশের প্রথম সম্পূর্ণ বিদেশি বিনিয়োগে গড়ে উঠেছে পরিবেশ বান্ধব রপ্তানিমুখী শিল্প অঞ্চল কোরিয়ান ইপিজেড। বহু মানুষের কর্মসংস্থান হয়েছে এখানে। প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ ভাবে প্রায় এক লক্ষ মানুষের জীবিকার কেন্দ্র কোরিয়ান ইপিজেড। বাংলাদেশের প্রথম নদীর তলদেশে টানেলের প্রবেশদ্বারটিও রয়েছে এই এলাকায়। ফলে নতুন মহাসড়ক ও বহুমুখী যোগাযোগ ব্যবস্থা এখানে গড়ে উঠছে। আশেপাশে নতুন শিল্প ও বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠাতে বহু মানুষের কর্মসংস্থানে হয়েছে।
বন্য হাতি কোরিয়ান ইপিজেডের দীর্ঘদিন থেকে গড়ে তোলা সবুজ গাছ পালার ব্যাপক ক্ষতি সাধন করেছে। রাতে খাবারের খোঁজে আশপাশের বাড়ি ঘর ও লোকালয়ে হামলা করে বহু ক্ষতিসাধন করেছে। এলাকায় বহু নিরীহ মানুষ হাতির আক্রমণে মারা গেছে। যা প্রতিনিয়ত পত্র পত্রিকায় প্রকাশিত হয়েছে। গত ৪/৫ বছর ধরে চলছে এই এলাকায় বন্য হাতির উৎপাত আর তাণ্ডব। রাতে আতঙ্কে কাটে এলাকার মানুষের।
বনবিভাগকে বহুদিন ধরে বিষয়টি লিখিতভাবে অবহিত করা হলেও কোন সমাধান হয় নাই। বন্য হাতির উপদ্রব বাংলাদেশে তেমন একটা নাই তাই বন্য হাতি নিয়ন্ত্রণে আধুনিক জ্ঞান ও কৌশল আমাদের নাই।
হাতি বিশ্ব পরিবেশের অংশ। হাতি রক্ষায় জাতিসংঘ ১২ আগস্ট বিশ্ব হাতি দিবস ঘোষণা করেছে। হাতি সমৃদ্ধ দেশ কেনিয়া, থাইল্যান্ড, শ্রীলঙ্কা ও ভারত দক্ষতার সাথে বন্য হাতি নিয়ন্ত্রণ করে। লোকালয়ে আটকে পড়া বন্য হাতিকে সরিয়ে হাতির নিরাপদ স্থানে শিপমেন্ট করে বন বিভাগ। আমাদের সেই পথ অনুসরণ করতে হবে।
লক্ষ লোকের জীবিকার কর্মস্থল ও আবাস স্থল নিরাপদ করতে হবে কয়েকটি বন্য হাতিকে নিরাপদ স্থানে শিপমেন্ট করে। প্রয়োজনে বিদেশ থেকে আনতে হবে বৃহৎ স্থলপ্রানি হাতি অভয়াশ্রমে স্থানান্তরের দক্ষ টিম।
প্রকৌশলী মো. আনোয়ার কবির
(পরিবেশ ও উন্নয়ন সচেতন নাগরিক)