ভারতীয় আধিপত্যবাদ বিরোধী আন্দোলনের অগ্রসৈনিক ও ইনকিলাব মঞ্চের নেতা শরীফ ওসমান হাদি হত্যার বিচারের দাবিতে রণক্ষেত্রে পরিণত হয়েছে রাজধানীর শাহবাগ মোড়। শুক্রবার (২৬ ডিসেম্বর) জুমার নামাজের পর শুরু হওয়া এই অবস্থান কর্মসূচি রাত পেরিয়ে শনিবার (২৭ ডিসেম্বর) সকালেও অব্যাহত রয়েছে। খুনিদের গ্রেপ্তার ও বিচারের দাবিতে হাজারো ছাত্রজনতা তীব্র শীত উপেক্ষা করে রাজপথে অবস্থান করছেন।
শুক্রবার দুপুর আড়াইটায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় মসজিদ থেকে ইনকিলাব মঞ্চের নেতৃত্বে একটি বিশাল বিক্ষোভ মিছিল বের করা হয়। মিছিলটি শাহবাগ মোড়ে পৌঁছালে সেখানে অবস্থান নেন আন্দোলনকারীরা। এতে রাজধানীর অন্যতম এই গুরুত্বপূর্ণ মোড়ে সব ধরনের যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। রাতভর ‘বাংলাদেশের আজাদি-ওসমান হাদি’, ‘এক হাদি কবরে-লক্ষ হাদি ঘরে ঘরে’, ‘খুনি ফয়সালের ফাঁসি চাই’ এমন সব স্লোগানে উত্তাল ছিল পুরো এলাকা। আন্দোলনকারীরা শনিবার ভোরে শাহবাগ মোড়েই ফজরের নামাজ জামাতের সাথে আদায় করেন এবং তাদের অবস্থান কর্মসূচি চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দেন।
বিক্ষোভকারীদের প্রধান দাবি- শরীফ ওসমান হাদি হত্যার প্রধান আসামি খুনি ফয়সাল করিমসহ সকল জড়িতকে অনতিবিলম্বে গ্রেপ্তার করে আইনের আওতায় আনা। সমাবেশে ইনকিলাব মঞ্চের সদস্য সচিব আব্দুল্লাহ আল জাবের কঠোর হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেন, ‘সরকারের উপদেষ্টারা এখানে এসে জনগণের প্রশ্নের জবাব না দেওয়া পর্যন্ত আমরা এক চুলও নড়ব না। এই জমিন হাদির রক্তে ভিজেছে, আমরা কোনো আপস করতে আসিনি।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমরা দেখছি অনেকে সেনানিবাসে গিয়ে হাজিরা দিচ্ছেন, কিন্তু ছাত্রজনতার এই গণদাবি উপেক্ষা করা চলবে না। প্রকৃত স্বাধীন বাংলাদেশ তখনই হবে যখন দেশের প্রতিটি মানুষ আত্মমর্যাদা নিয়ে বাঁচতে পারবে।’
শনিবার সকাল ৯টায় এই প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত শাহবাগ মোড় অবরোধ করে রেখেছেন আন্দোলনকারীরা। এর ফলে সায়েন্স ল্যাব, বাংলামোটর ও মৎস্য ভবনের দিকে যাওয়ার রাস্তাগুলোতে দীর্ঘ যানজটের সৃষ্টি হয়েছে। অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে এলাকায় বিপুল সংখ্যক পুলিশ ও নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্য মোতায়েন রয়েছে। তবে আন্দোলনকারীদের স্পষ্ট বক্তব্য বিচারের সুনির্দিষ্ট আশ্বাস না পাওয়া পর্যন্ত তারা রাজপথ ছাড়বেন না।
গত ১২ ডিসেম্বর রাজধানীর বিজয় নগরে নির্বাচনি প্রচারণার সময় পরিকল্পিতভাবে শরীফ ওসমান হাদির মাথায় গুলি করে দুর্বৃত্তরা। আশঙ্কাজনক অবস্থায় তাকে ঢাকা মেডিকেল ও পরে এভারকেয়ার হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। অবস্থার অবনতি হলে ১৫ ডিসেম্বর তাকে উন্নত চিকিৎসার জন্য সিঙ্গাপুরে নেওয়া হয়। সেখানে দীর্ঘ লড়াই শেষে গত ১৮ ডিসেম্বর (বৃহস্পতিবার) রাতে তিনি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। ১৯ ডিসেম্বর তার মরদেহ দেশে আনা হয় এবং ২০ ডিসেম্বর জাতীয় সংসদ ভবনের দক্ষিণ প্লাজায় জানাজা শেষে তাকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় মসজিদ ও জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের কবরের পাশে সমাহিত করা হয়।
আজ ওসমান হাদির কবর জিয়ারত করবেন তারেক রহমান