ঢাকা
সোমবার, ১৭ নভেম্বর ২০২৫, ২ অগ্রহায়ণ ১৪৩২
ই-পেপার

কিশোরগঞ্জ বিএনপির ত্রি-বার্ষিক সম্মেলন শনিবার, অতিথি করা হয়নি ফজলুকে

আপডেট : ১৯ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ০৪:২৭ পিএম

দীর্ঘ ৯ বছর পর শনিবার (২০ সেপ্টেম্বর) কিশোরগঞ্জ জেলা বিএনপির ত্রি-বার্ষিক সম্মেলন অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। এদিন বেলা ১১টায় জেলা শহরের পুরাতন স্টেডিয়ামে এ সম্মেলনের উদ্বোধন করবেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। 

প্রধান অতিথি হিসেবে থাকবেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। সম্মেলনের প্রধান বক্তা বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব হাবিব উন নবী খান সোহেল।

সম্মেলন উপলক্ষে অনুষ্ঠানস্থলে তৈরি করা হচ্ছে সুবিশাল মঞ্চ। শহরের উল্লেখযোগ্য সড়কগুলোতে কেন্দ্রীয় নেতাদের শুভেচ্ছা জানিয়ে নির্মাণ করা হয়েছে কয়েকশ তোরণ। এছাড়া দলীয় নেতাকর্মীদের ছবি-সংবলিত ব্যানার-ফেস্টুনে ছেয়ে গেছে অনুষ্ঠানস্থলসহ জেলা শহরের বিভিন্ন সড়ক ও অলিগলি।

এর আগে, ২০১৬ সালের ২২ নভেম্বর জেলা বিএনপির সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়েছিল। প্রায় এক দশক পর হতে যাওয়া নতুন সম্মেলনকে কেন্দ্র করে নেতাকর্মীদের মাঝে বিপুল উৎসাহ-উদ্দীপনা বিরাজ করছে।

তবে এবারের ত্রি-বার্ষিক সম্মেলনে অতিথি করা হয়নি কিশোরগঞ্জের আলোচিত নেতা বীর মুক্তিযোদ্ধা অ্যাডভোকেট মো. ফজলুর রহমানকে। সম্মেলনের ব্যানার ও দাওয়াতপত্রে তার নাম নেই। জুলাই গণঅভ্যুত্থান নিয়ে বিভ্রান্তিকর বক্তব্যের অভিযোগে তার দলীয় প্রাথমিক সদস্য পদসহ সব পর্যায়ের পদ তিন মাসের জন্য স্থগিত করা হয়েছে।

দীর্ঘদিন বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা পদে থাকা ফজলুর রহমান বিভিন্ন সভা-সেমিনার ও টকশোতে তার বিষয়ে দলের স্থগিতাদেশ উঠিয়ে নেওয়ার আবেদন জানিয়ে আসছেন।

পদ স্থগিত হওয়ার পর কিশোরগঞ্জের নিজ নির্বাচনি এলাকার হাওড় মিঠামইনে উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদ আয়োজিত গণসংবর্ধনায় ফজলুর রহমান বলেছিলেন, আমি ধর্ম বিদ্বেষী নই, জামায়াত বিদ্বেষী। আমি ধর্ম-কর্মে বিশ্বাসী একজন মুসলমান। তবে, জামায়াতে ইসলাম নয়, তারা জামা-কাপড়ে ইসলাম। তাদের প্রতি আমার বিদ্বেষ রয়েছে। আগামী সংসদ নির্বাচনে আমি ধানের শীষ প্রতীক নিয়ে নির্বাচন করতে চাই। দলের কাছে আমার অনুরোধ, আমাকে ধানের শীষ মার্কাটা দেবেন।

তিনি বলেন, দল আমাকে তিন মাসের জন্য স্থগিতাদেশ দিয়েছে, আমি মাথা পেতে নিয়েছি। তবে আমি ধানের শীষ প্রতীক নিয়ে নির্বাচন করতে চাই। দলের কাছে এটাই আমার চাওয়া। আপনারা জনগণ দলের কাছে দুইটা জিনিস চাইবেন। একটা হলো ফজলুর রহমান, আরেকটা হলো ধানের শীষ মার্কা।

অতি সম্প্রতি কিশোরগঞ্জ জেলা সম্মেলনকে কেন্দ্র করে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে দেওয়া এক বক্তব্যে স্থগিত আদেশ উঠিয়ে নেওয়ার আবেদন জানিয়ে ফজলুর রহমান বলেন, বিএনপি নেতৃত্বকে অনুরোধ করবো আমার স্থগিত আদেশ উঠিয়ে নিন। সামনে কিশোরগঞ্জ জেলা সম্মেলন। আমি দীর্ঘ আট বছর ধরে এই সম্মেলনের অপেক্ষায়। 

ফজলুর রহমান বলেন, আমাকে বলে আমি বাতিল হয়ে গেছি, কিশোরগঞ্জ সম্মেলনে যেতে পারবো না। কে সহ্য করতে পারে এগুলা। আমিও তো মানুষ, এই দলের জন্য কি-না করেছি। জেল খেটেছি নির্বাসনে রয়েছি, দেশনেত্রী খালেদা জিয়ার নামে ৩০০ বক্তব্য দিয়েছি। যেটি বিশ্বরেকর্ড। 

তিনি বলেন, আমার নেত্রী এখন সুস্থ, উনি জানেন না এটা! তারেক রহমান সাহেবের নামে আমি যে বক্তৃতা করি, বিএনপির নেতাদের চাঁদাবাজি, ধান্দাবাজির বিরুদ্ধে আমি যে বক্তৃতা করি, এই বক্তৃতা কেউ করে না। একটা কথার জন্য আমাকে তিন মাসের জন্য দলের সব প্রকার কর্মকাণ্ড থেকে স্থগিত করা হয়েছে। আদেশ দিয়েছেন আমি খুশি হয়েছি। এখন আপনাদের অনুরোধ করি সম্মেলনের আগে এটি তুলে দেন।

জেলা সম্মেলনে থাকার ইচ্ছা পোষণ করে তিনি বলেন, আমি তো বিএনপি করি, সামনে আমার সম্মেলন ২০ সেপ্টেম্বর। ২০০৮ সালে শেখ হাসিনা ক্ষমতায় আসার পরে খালেদা জিয়া আমাকে বিএনপির আহ্বায়ক করে কিশোরগঞ্জে দল গঠন করে। আমি আহ্বায়ক ও কিশোরগঞ্জের সভাপতি ছিলাম। আমি হামলার শিকার হয়ে হাসপাতালে ভর্তি ছিলাম। সেদিন গায়ে রক্ত নিয়ে সম্মেলনে হাজির হয়েছি। 

তিনি আরও বলেন, কিশোরগঞ্জে আট বছর আমি নেতৃত্ব দিয়েছি। কয়েকদিন পর সম্মেলন যেখানে হাজার হাজার নেতাকর্মী আসবে, আর আমি ঢাকায় বসে থাকবো? যে বিএনপির জন্য আমি মৃত্যুর মুখোমুখি হয়েছি। তিনি আক্ষেপ করে বলেন, বিএনপি থেকে কেউ বলতে পারে না ফজলু সম্মেলনে আসুক। কেউ বলার লোক নাই। আমি তো জানি যে, আছে।

ফজলুর রহমান বলেন, একটা মানুষের বয়স যখন ৬০ বছর হয়ে যায়, তার আর সময় নাই। তার প্রতিটা সময় মহা মূল্যবান, এক মিনিট স্বর্ণের দামে বিক্রি হয়। আমার বয়স কিন্তু ৭৮ বছর, আমাকে তিন মাস ঘরে বসিয়ে রাখবেন, আমাকে কাজ করতে দেবেন না। আমার যদি নেওয়ার ইচ্ছা থাকে, শাস্তি তো আমার হয়েছে। একদিনের জন্য হলেও হয়েছে। আজকে তো প্রায় একমাস হয়ে যাচ্ছে, চাইলে সম্মেলনের আগে আমার বরখাস্ত আদেশ তুলে নিতে পারেন, কিন্তু এটা করবেন না।

তিনি বলেন, যদি না করে সামনে আমার দুটি পথ- একটা হলো রাজনীতি ছেড়ে দেওয়া। আর একটা হলো রাজনীতি করতে হলে ভিন্ন পথ খুঁজতে হবে। যদি বিএনপি আমার সাসপেনশন তুলে না নিয়ে বরখাস্ত করে।

এটা বললে আবার বলবে- কেন বললেন। তিন মাসেও যদি সাসপেনশন তুলে না নেয়। তার পরে আর রইল কি? তারপর তো জাতীয় নির্বাচন, ইলেকশনও করতে পারবো না, কেন করতে পারবো না? একটা ইলেকশনের জন্য আমার জীবন গেছে, আমার তো ৭৮ বছর বয়স। আমি তো আর জীবনে ইলেকশন করতে পারবো না। এটাই আমার শেষ নির্বাচন।

তবে কিশোরগঞ্জ জেলা বিএনপি সম্মেলনে যাওয়ার বিষয়ে ফজলুর রহমানের আবেদনের বিপরীতে বিএনপির কোনো বক্তব্য পাওয়া যায়নি।

MMS
আরও পড়ুন